বরাবরের মতই রমজানের দীর্ঘ এক মাস সিয়াম-সাধনার পরে বছর ঘুরে আবারও চলে এলো ইদ। ইদ মানে খুশী, ইদ মানে আনন্দ। আর ইদুল ফিতর (আরবীঃ عيد الفطر ) এর শাব্দিক অর্থ দাঁড়ায় অর্থাৎ “রোযা ভাঙার দিবস”। তবে প্রত্যেক বছরের সাথে যদি মিলাতে যাই, এই বছরের ইদ অন্য সকল বছরের চেয়ে আলাদা। আসুন জেনে নেই ইদ সম্পর্কিত ৫ টি অজানা তথ্য যা আপনি হয়ত জানতেন না।
উপমহাদেশের সবথেকে বড় ইদের জামাত শোলাকিয়া নয়ঃ শোলাকিয়াকে পিছনে ফেলে গত বছর উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছিল দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দানে। পাঁচ লক্ষ মুসল্লির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই ঈদগাহে গতবছর প্রায় চার লক্ষের মতন মুসল্লিরা জামাতে নামাজ আদায় করেন। নবনির্মিত এই ইদগাহে নির্মাণ করা হয়েছে ৫২ গম্বুজ বিশিষ্ট মিনার। ঈদগাহ মিনারের মূল অংশ তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই ৫২ গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে ২টি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে এবং প্রধান মিনারের উচ্চতা ৫৫ ফুট। ৫১৬ ফুট দৈর্ঘের ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রত্যেক গম্বুজে বৈদ্যুতিক বাতির সংযোগ দেয়া আছে। যে মেহেরাবে খতিব বয়ান করবেন সেটির উচ্চতা ৫০ ফুট। ৫২টি গম্বুজ ২০ ফুট উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে। গেট দুটির উচ্চতা ৩০ ফুট। এ ইদগাহ তৈরীতে প্রাথমিক পর্যায়ে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
ঈদের ছুটি দেশে দেশেঃ আমাদের দেশে সরকারীভাবে ইদের ছুটি দেওয়া হয় সাধারণত তিন দিন। কিন্তু সবথেকে বেশী ছুটি দেওয়া হয় সৌদি আরবে। ২০১৭ সালে একুশে রমজান থেকে পনেরই শাওয়াল পর্যন্ত ছুটি ছিল অর্থাৎ মোট তেইশ দিন। ২০১৬ তে ছিল এগার দিন। কাতারে দেওয়া হয় এগার দিন করে। আরব আমিরাত, কুয়েত ও ওমানে ছুটি দেওয়া হয় নয় দিন। জর্দান ও ফিলিস্তিনে সরকারী ছুটি ছয়দিন। মিশরে থাকে পাঁচ দিন। ঘানা ও পাকিস্তানে থাকে তিন দিন করে।
নন-মুসলিম দেশে ইদের সরকারী ছুটিঃ ২০০২ সাল থেকে ফিলিপাইনে সর্বপ্রথম সরকারীভাবে ইদের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতি বছর তিন দিন করে ফিলিপাইনে ইদের ছুটি দেওয়া হয়।
হোয়াইট হাউজে প্রথম ইফতার ও ইদুল ফিতরের ডিনার পার্টিঃ ১৮০৫ সালে তিউনিশিয়ার রাষ্ট্রদূত তৎকালীন রাষ্ট্রপতি থমাস জেফারসনের সাথে দেখা করতে এলে প্রথমবারের মত হোয়াইট হাইজে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়। আর ১৯৯৬ সালে ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন প্রথমবারের মত ইদুল ফিতরের ডিনার পার্টির আয়োজন করেন। পরবর্তিতে বিল ক্লিনটন প্রতিবছর এই ঐতিহ্য অব্যাহত রাখেন। জর্জ ডব্লিউ বুশও প্রতি বছর প্রতিবছর রমজানের শেষে ঈদের ডিনার পার্টির প্রথাটি অব্যাহত রেখেছিলেন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বারাক ওবামা শেষ ইদের ডিনার পার্টি হোস্ট করেছেন। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরে তিনি এই প্রথাটি ভেঙ্গে ফেলেন ও ২০১৭ সালে হোয়াইট হাউজে কোন ইদের পার্টি হয় নি।
সবথেকে বেশী ঘর ছাড়া মানুষঃ এবছর আমরা যখন ইদের নামাজ পড়তে যাব, ঠিক সেই সময়ে সারা পৃথিবীতে প্রায় সাত কোটি মানুষকে অসহায় পরিস্থিতিতে নিজের ঘর ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়েছে। প্রায় তিন কোটি মানুষ বিভিন্ন রিফিউজি ক্যাম্পে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মাঝে আশায় হতাশায় দিনানিপাত করছে, যাদের পঞ্চাশ শতাংশের বয়সই আঠার বছরের নিচে। প্রতি মিনিটে কুড়ি জন মানুষ বিভিন্ন দাঙ্গা-হাঙ্গামায় ঘর ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। সিরিয়া, ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, ইরাক, মায়ানমার, সোমালিয়া, সুদান, দক্ষিণ সুদান, নাইজেরিয়া, কঙ্গো, লিবিয়া, মিশর, ইয়েমেন, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশে বর্তমানে আর্মড কনফ্লিক্ট চলছে। যার ভেতরে সিরিয়াতে ক্যামিকেল ওয়েপন এর মত মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র ব্যাবহারের খবরও হরহামেশাই পাওয়া যাচ্ছে। যাই হোক, এত দুঃসংবাদের মাঝেও আমাদের দেশের মতই ওইসকল দেশেও ইদ নিয়ে এসেছে শান্তির বারতা।
পরিশেষে বলা যায়, এ বছর ইদের সাথে ফুটবল বিশ্বকাপ যোগ হয়ে আমাদের ইদের আনন্দকে করেছে দ্বিগুণ। হয়তো কোন পাগল সমর্থককে এবার আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলের বা জার্মানীর জার্সি গায়ে ইদের ময়দানে দেখা গেলেও অবাক হব না। ইতোমধ্যে ঢাকাও ফাকা হতে শুরু হয়ে গেছে। অসংখ্য মানুষ নাড়ীর টানে বাড়ি যাচ্ছে। আবার কয়েকদিন পরে এভাবেই বাসে-ট্রেনে কোনরকমে ঠেলেগুজে কর্মের টানে ফিরে আসবে সবাই। দিনশেষে কিন্তু ওই আবেগটুকু নিয়েই আমাদের জীবন-যাপন। আমরা তো আবেগি জাতি, তাই না? যাই হোক, সব মিলিয়ে এবারের ইদটা হতে যাচ্ছে যাস্ট সিম্পলের মধ্যে একটা গর্জিয়াস ইদ। সবাইকে ইদের শুভেচ্ছা। ইদ মোবারক।