গত কয়েকদিন ধরে অনলাইন জগতে যে সমস্যাটি আলোড়ন তৈরি করেছে তা হল ফেসবুক আইডি ডিজেবল হয়ে যাওয়া। ইতোমধ্যেই ফেইক ও রিয়েল আইডি মিলিয়ে অসংখ্য আইডি ডিজেবল হয়ে গিয়েছে। সকলেই মোটামুটি আতংকের মধ্যে আছে কখন কার আইডি হারাতে হয়! এ নিয়ে জন্ম নেয়া কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজি চলুন।
ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, অনলাইন সংশ্লিষ্ট ক্রমবর্ধমান অপরাধ সামাল দিতে সরকার এবার ফেসবুকের দারস্থ হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম গত ৩০শে মার্চ সিংগাপুরে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন। এরপর ফেসবুক বাংলাদেশের ফেইক একাউন্ট বন্ধ করে দিতে সম্মত হয়।
আগেভাগে কোন নোটিশ না দিয়ে গত শুক্রবার থেকে এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। ভুয়া আইডি নির্মূলের প্রক্রিয়ায় অসংখ্য রিয়েল আইডিও ডিজেবল হয়ে গিয়েছে যা ইতোমধ্যে দেশব্যাপী সমালোচনা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। যদিও বেসিস সভাপতি মোস্তফা জব্বার এবং ই-ক্যাব সভাপতি রাজিব হাসান সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
যদিও ফেসবুক কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। এক ব্লগপোস্টে ফেসবুকের টেকনিক্যাল টিমের (প্রোডাক্ট এন্ড কেয়ার বিভাগ) প্রোগ্রাম ম্যানেজার শবনম শেইখ জানান যে, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরবসহ আরো কয়েকটি দেশের ফেইক একাউন্ট বন্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়েছে কারন এসব দেশের আইডি থেকে অসংখ্য ভুয়া লাইক, কমেন্ট হয়ে থাকে।
প্রসংগত উল্লেখযোগ্য যে, ফেসবুকে এক্টিভিটির দিক থেকে ঢাকা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।
প্রশ্ন জাগে, ফেসবুক কিভাবে বোঝে যে, এই আইডি ভুয়া, এই আইডি ভুয়া নয়? যথার্থভাবে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া কঠিন। অন্যান্য সূত্র থেকে জানা যায়, ফেসবুক যে রোবট/ প্রোগ্রামের মাধ্যমে আইডি চেক করছে তার মূলত ব্যবহারকারীদের ব্যবহারের প্যাটার্ণ লক্ষ করে থাকে এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয় কোন আইডি ভুয়া এবং কোন আইডি সত্যিকারের। অর্থাৎ ফেসবুক আপনি কি করছেন সেটা মুখ্য নয়, আপনি কি ধরনের কাজ করছেন সেটাই মুখ্য। এই প্যাটার্ন সম্পর্কে সঠিক ধারনা দেয়া না হলেও কোন আইডি থেকে যদি একই ধরনের কাজ বার বার করা হয়ে থাকে তাহলে সেই রোবট/প্রোগ্রামের সন্দেহের তালিকায় নাম চলে আসে।
যেমন, একই মেসেজ বিভিন্নজনের কাছে পাঠানো। এ হিসেবে যারা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ২৫ জনের মেসেজ পাঠিয়েছেন তারা খুবই ভুল কাজ করেছেন। হয়ত কেউ ফেসবুকে শুধু ছবি আপ্লোড দেন, হয়ত শুধু মেসেজ আদান-প্রদানের জন্য ফেসবুক ব্যবহার করে থাকেন, কেউ হয়ত কেবল ব্লগের পোস্ট/গেম আপডেট শেয়ার করার জন্য ফেসবুক আইডি ব্যবহার করেন—ইত্যাদি একই ধরনের কাজ যারা দীর্ঘদিন যাবৎ করে আসছেন তারা এই খড়গের নিচে পরতেই পারেন।
এ থেকে উত্তরণের উপায় হল বিভিন্ন ধরনের কাজ ফেসবুকে করা যেমনটা আমরা রিয়েল লাইফে করে থাকি। আপনি দু’চার লাইনের পোস্ট লিখুন, ছবি আপ্লোড দিন (ব্যক্তিগত দিতে না চাইলে প্রকৃতির ছবি দিতে পারেন, চাইলে প্রাইভেসী অনলি মি করে দিতে পারেন। কোন সেলেব্রেটির ছবি প্রোফাইল পিক না দেয়াই ভাল), অন্যের পোস্ট শেয়ার করুন, কেউ আপনার পোস্টে কমেন্ট করলে উত্তর দিন, কমেন্টের উত্তরের কনভার্সেশন তৈরি করুন, পোস্টে-কমেন্টে ট্যাগ করুন (অতিরিক্ত নয়), ক্রমাগত লাইক বা কমেন্ট করা থেকে বিরত থাকুন, জন্মতারিখ কোন সার্টিফিকেট অনুযায়ী দিন, এবাউট সেকশন আপডেট করতে পারেন (বিশেষ করে ইমেইল এড্রেস যোগ করা না থাকলে যোগ করে দিয়ে অবশ্যই ই-মেইল ভেরিফিকেশন করে নেবেন), সত্যিকারের নামের মত করে নাম দিন (ইংরেজী হলে ভাল হয়)—ইত্যাদি বিভিন্ন কাজ যখন কোন আইডি থেকে করা হবে তখন আশা করা যায় যে, ফেসবুক রোবট/প্রোগ্রাম আইডি রিয়েল বলে ধরে নেবে।
এরপরও যদি ফেসবুক আপনার একাউন্ট ডিজেবল করে দেয় তাহলেও চিন্তিত হবার কিছু নেই। আশা করা যায়, আপনি আপনার আইডি ফিরে পাবেন।এই লিংক এ ক্লিক করুন এবং নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করুন। যদি ছবি চায় তাহলে আপনার চেহারা ভালভাবে বোঝা যায় এমন ছবি দিন, আইডি কার্ড চাইলে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার আইডি বা যেটা প্রযোজ্য সেই আইডি কার্ডের স্ক্যান করা কপি আপ্লোড করুন। আশা করা যায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ফেসবুক আপনাকে আপনার আইডি ফিরিয়ে দিবে।
হ্যাপি ফেসবুকিং!
লেখকঃ আহমাদ রবীন