সন্ধ্যার লাল আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটি, ভাবছে তার ফেলে আসা দিনগুলির কথা।গত কয়েক বছর আগেও নিজেকে এতোটা একা মনে হয়নি। আজ হঠাৎ এক অজানা একাকীত্ব তাকে গ্রাস করছে।
১৭ ই সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার।
জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম “ফেসবুক “এ পরিচয় ছেলেটির সাথে। সাধারণত ছেলেরাই কথা বলে,বিভিন্ন তথ্য জানতে চায়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে মেয়েটি আলাদা। সে নিজে থেকেই শুরু করল।
-ফেসবুক এ যে নামটি দেওয়া আছে, এটাই কি আপনার নাম?
-জি।
-তা,থাকেন কোথায়?
-চিটাগাং।
-ও,বাসায় কে কে আছে?
-পরিবার।
-আজিব। পরিবার থাকে এইটা তো জানা কথা। কে কে থাকে সেটা জিজ্ঞেস করলাম।
– মা,বাবা,ভাই, বোন।
-আছা, একটা কথা বলব?
-হুম
-আমাকে চিনেন কি?
-না।
-তো এইসব প্রশ্নের উত্তর দিলেন যে?
-এমনি।
-এরকম অপরচিত কাও কে কখনো কিছু বলবেন না।
-আচ্ছা।
-ওকে, পরে কথা হবে।আল্লাহ হাফেজ। ভালো থাকবেন।
-আল্লাহ হাফেজ।
(১ম দিনের কথা এতটুকুই )।
মেয়েটি চিন্তা করে, কিরকম ছেলে, নিজের সবকিছু এভাবে বলে কাউকে? পরে নিজে নিজেই বলতে লাগল, সে যেমন হবে হউক তাতে আমার কি? সাত পাঁচ ভেবে মেয়েটি তার কাজ করতে লাগল।
পরেরদিন মেয়েটি আবার নক দিল।
-কেমন আছেন?
-ভাল। আপনি?
-আলহামদুলিল্লাহ।
-আপনি কে এইটা তো এখনো বলেননি।
-আমি মানুষ,ভুতরা তো চ্যাট করবেনা।
-ভুত হতেও পারেন।অসম্ভব কিছুনা।
-হুম।
এভাবে কথা চলতে থাকে।দুজনের মধ্যে ভাল বন্ধুত্ব হয়।
একদিন ছেলেটি মেসেজ।
-জানেন, আমি না একটা সপ্ন দেখেছি।
-কি?
-আমি আর আপনি “তুমি “করে কথা বলছি।
-ও।
-আমার মনে হয়, স্বপ্নটা সত্যি করা যায়।
-মানে?
-আমরা কি “আপনি” না বলে “তুমি” করে কথা বলতে পারিনা?
-আপনি বলুন “তুমি” করে।আমি চেষ্টা করব।
-ওকে।
এভাবে কথা চলতে থাকে। প্রতিদিন কথা বলা যেন রুটিন এ পরিবর্তিত হয়েছে।
আজ ৩ দিন ধরে ছেলেটির কোনো খোজ খবর নেই। মেয়েটি চিন্তায় অস্থির। কোথায় গেল? মেয়েটির মাথায় তখন আরেকটি চিন্তা আসে। সে কেন এতো ভাবছে? ৩ দিন কথা বলেনি তো কি হয়েছে? তাই বলে এতো চিন্তার কি আছে? অন্যকিছু না তো? হ্যা ভালবাসে সে ছেলেটিকে।তার নিজের ও মনে হয় যে ছেলেটি ও তাকে ভালবাসে। মেয়েটি সিদ্ধান্ত নেয় সে তার ভালবাসার কথা বলবে।
পরেরদিন ছেলেটির মেসেজ :
-কেমন আছো?
-(জবাব না দিয়ে) এতোদিন কোথায় ছিলে? এতোদিন পর মনে পড়লো আমার কথা? চিন্তায় অস্থির হচ্ছিলাম।
-আগে তুমি শান্ত হও।শুনো আমি তো সবসময় তোমার সাথে আছি।আর আমি যদি রিপ্লাই না দিয়ে থাকি তাহলে মনে করবে,আমি মনে মনে দিয়ে দিয়েছি।
-তুমি পারো ও বটে।শুনো একটা কথা
বলার আছে।
– নাহ, আজকে আমি আগে বলব
-আচ্ছা, ঠিক আছে।বলো।
-শুনো, আমার জন্য যে মেয়েটি দেখছিল? ওই সম্বন্ধটা পাকা হয়ে গেছে।সামনের মাসেই বিয়ে।
-অও।congrates.
-বিয়েতে আসতে হবে কিন্তু।
-হুম।আচ্ছা যাই। পরে কথা হবে।
নাহ।আজ মেয়েটি আর চেপে রাখতে পারছেনা তার অনুভূতি।হ্যাঁ সে অনুভব করে ছেলেটির জন্য।কিন্তু সে হাজার কষ্ট সহ্য করবে কিন্তু নিজের বন্ধুত্বকে ছোট করবেনা।সে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। কথা বলে কিন্তু নিজের ভাব, আবেগকে প্রশ্রয় দেয়না। এক মুহুতের জন্যও বুঝতে দেয়না ছেলেটিকে।
কারণ সে জানে ছেলেটি সবসময় তার হৃদয়ে থাকবে।যেখান থেকে কেউ তাকে সরাতে পারবেনা। আর নাতো কেউ জানতে পারবে। আর একতরফা ভালোবাসায় অধিকারটা একার ই থাকে,ভালবাসাটাও থাকে অফুরন্ত।
লাল আকাশটা কালো হতে থাকে, অন্ধকার ঘনিয়ে আসে। মেয়েটি ভাবতে থাকে আর আকাশের তারা গুণতে থাকে। আসলেই তো এই ভালবাসার কোনো শেষ নেই।আর না তো সমাপ্তি। এইজন্যই তো এটা “অসমাপ্ত ভালবাসা “।
লেখকঃ আফরোজা আলী ( তুলি)। ভালো লাগে লিখতে, গান শুনতে, বই পড়তে। নতুন কারো সাথে পরিচিত হওয়া ও নেটওয়ার্ক তৈরি করা অন্যতম কাজ।