চাকরি নিয়োগদাতার সাথে আলোচনা করার সময় যে বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন

636054903129793177893136202_emoloyedবর্তমানে বিশ্বে চাকুরীক্ষেত্রে ‘জব রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি’ এর চাহিদা তুঙ্গে। জব রিক্রুটার বা চাকরী নিয়োগদাতা এজেন্ট সাধারণত “হেডহান্টার” বলেই পরিচিত। বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে বেশ কয়েকটি জব রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি জনপ্রিয়তা লাভ করছে।

একজন জব রিক্রুটার সাধারণত চাকরীদাতা সংস্থা এবং চাকরী অন্বেষী, দুই পক্ষের হয়েই কাজ করে। তারা আপনার জন্য কাজ খুঁজবে এবং চাকরিদাতা সংস্থার জন্য খুঁজবে কর্মী। আপনার কাছ থেকেও সে যেমন কমিশন পাবে, তেমনি পাবে আপনার চাকরিস্থল থেকে।

যেহেতু আপনার রিক্রুটার কাজ করবে আপনার এবং আপনার নিয়োগকর্তার জন্য, সেহেতু আপনার রিক্রুটার এর সাথে আলোচনা করার সময় আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর উপর।

১. আপনার কাছে অন্য কোন চাকরীর প্রস্তাব নেই, এই কথাটা আপনার রিক্রুটার কে জানাবেন না। বলবেন, যে আপনার কাছে আরো কয়েকটি চাকরির প্রস্তাব আছে কিন্তু আপনার রিক্রুটার আপনাকে যে চাকরির কথা বলছে আপনে সেটার প্রতি বেশি আগ্রহী। যদি রিক্রুটার আপনার অন্যান্য চাকরীর অফারগুলো জানতে চায়, আপনি তাদের বিনয়ের সাথে জানিয়ে দিন যে, এই ব্যাপারে আপনাকে গোপনীয়তা বজায় রাখতে বলা হয়েছে যেহেতু এখনো কোনকিছুই নির্ধারিত হয়নি।

২. আপনার বর্তমান আর্থিক অবস্থা আপনার রিক্রুটারকে জানানোর কোন প্রয়োজন নেই। কারণ আপনার আর্থিক অবস্থার সাথে তাদের কাজের কোন সম্পর্ক নেই। আপনি কতটুকু বেতন পেলে আপনি সন্তুষ্ট হবেন, রিক্রুটারকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন। নিজের যোগ্যতার মাপকাঠি আপনিই ঠিক করে নিন। এই কাজটা আপনার রিক্রুটারের নয়।

৩. কখনোই কোন চাকরীর প্রস্তাবের প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহ দেখাবেন না। যদি কোন প্রস্তাব আপনার খুবই ভালো লেগে থাকে, যদি সেই কাজ আপনার সকল চাহিদাগুলো পূরণ করতে সক্ষম হয়ে থাকে, তাও অতিরিক্ত আগ্রহ দেখাতে যাবেন না। হয়তো আপনার রিক্রুটারের কাছে এর ভেয়েও ভালো প্রস্তাব আছে। এবং আপনার অতিরিক্ত আগ্রহের কারণে তা আপনি হারাতে পারেন। তবে এর জন্য খুব বেশিদিন বসে থাকবেন না যেন। যদি অন্য ভালো কিছু হাতে থাকা সময়ের মাঝে না পান, হাতে থাকা প্রস্তাবটি লুফে নিন!

৪. যদি আপনার রিক্রুটার আপনাকে আপনার যোগ্যতার চাইতে নিচু কোন জায়গায় আপনাকে চাকরি দিতে চায়, তা মেনে নিবেন না। কারণ আপনার যোগ্যতার মূল্যায়ন আপনার প্রাপ্য। নিজেকে অবহেলা করবেন না।

৫. আপনি আপনার বর্তমান কাজের ক্ষেত্রে সমস্যায় ভুগতে পারেন, বা হতাশায় থাকতে পারেন। যার কারণেই হয়তোবা বর্তমান চাকরি ছেড়ে নতুনভাবে শুরু করতে চাইছেন। কিন্তু আপনার রিক্রুটারের কাছে এই হতাশা প্রকাশ না করাটাই উচিত হবে। আপনি বর্তমান কাজ ছেড়ে দিতে বা নতুন কাজ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন, এই ধারণা যেন আপনার রিক্রুটারের মনে না আসে। এতে তার মনে আপনার সম্বন্ধে বিরূপ ধারণা জন্মাতে পারে।

৬. আপনার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আপনার রিক্রুটারকে জানাবেন না। যদি আপনার প্ল্যান থাকে ২/৩ বছর চাকরি করার পর আবার মাস্টার্স ডিগ্রি নেয়া/ শহর বদলানো কিংবা নিজের ব্যবসা করা, সে কথা আপনার রিক্রুটারের জানার বিষয় না। আপনি আপনার এই প্ল্যান তাকে জানালে সে আপনাকে কোন স্বল্পমেয়াদী চাকরীর ক্ষেত্রে ঢুকিয়ে দিতে চাইবে। সুতরাং এই ব্যাপারে মুখ বন্ধ রাখাই শ্রেয়।

৭. চাকরীর বেতনের ব্যাপারে কোন নির্দিষ্ট অঙ্ক নির্ধারণ করে দেবেন না। বরং একটি ধারণা দিন যে কতটুকু বেতন পেলে আপনি সন্তুষ্ট হবেন।

৮: আপনি যদি বর্তমানে একটি চাকরি ছেড়ে অন্য আরেকটি করার কথা ভেবে থাকেন, পুর্ববর্তী চাকরির সমস্যাগুলো বিস্তারিত ভাবে খুলে বলার দরকার নেই। যেমন, আপনার আগের চাকরিটি ছেড়েছেন আপনার বসের সাথে মনোমালিন্যের কারণে বা বা কোন সহকর্মীর সাথে রেষারেষির কারণে। এই কথাগুলো এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। মনে রাখবেন, আপনার রিক্রুটার যেমন আপনার হয়ে কাজ করছে তেমনি কাজ করছে আপনার নিয়োগকর্তার জন্য।

উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও আরো কিছু ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন আপনি আপনার রিক্রুটার ও নিয়োগকর্তাকে জানিয়ে দিবেন যে, আপনি ২৪ ঘন্টা কাজের জন্য তৎপর থাকতে পারবেন না। যদিও আপনি যথেষ্ট পেশাদারিত্ব বজায় রাখবেন এবং নিজের কাজ নিষ্ঠার সাথে পালন করবেন। তাছাড়া চাকরী পুরোপুরিভাবে পাকা না হওয়া পর্যন্ত নিজের উপদেশ বা মতামত আলোচনা করবেন না। সর্বোপরি, আপনার নিজের যোগ্যতার উপযুক্ত সমাদর আপনাকে আদায় করে নিতে হবে। সেকথা ভুলবেন না যেন!