বিষণ্ণতা দূর করে ঘুরে দাঁড়ান জীবনের গল্পে

ছবি-রিমি শারমিন
ছবি-রিমি শারমিন

বিষণ্নতা আসলে একটি মানসিক রোগ। বিষণ্নতায় যারা ভুগে থাকেন তারা তাদের অনুভূতির ব্যাপক পরিবর্তন দেখতে পান।বিষণ্নতার ক্ষেত্রে কোনো কারণ থাকুক বা না থাকুক এর জন্য দৈনন্দিন কাজেকর্মে দারুণ ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। তবে এটা অতি সাধারণ একটা অসুস্থতা।প্রতিটা মানুষেরই বিষণ্ণতা হতে পারে, কিন্তু এটা খুব সহজেই নিরাময় করা সম্ভব। তো চলুন দেখে নেয়া যাক বিষণ্ণতা দূর করার উপায়গুলো-

ইতিবাচক মনোভাব

আমাদের চিন্তা-ভাবনা গুলো যদি আমরা ইতিবাচকভাবে করি তাহলেই দেখা যাবে যেসব বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের হতাশা তা নিমিষেই কেটে যাবে।তবে এটা সত্য খুব মানুষই পারে নিজেদের নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনাগুলো পরিবর্তন করে তা ইতিবাচক হিসেবে চিন্তা করতে। সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করবেন। চেষ্টা করবেন নেতিবাচক কিছু চিন্তা না করতে।

নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন প্রতি যত্নবান হন

শরীর ও মনের সংযোগ খুবই গভীর। শরীরের প্রতি যত্ন নিন।বিষণ্ণতা কমে যাবে।তাছাড়া বিষণ্ণতা নানান ধরনের শারীরিক সমস্যা যেমন হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

নিজেকে দোষারোপ করা বন্ধ করুন

ক্রমাগত নিজেকে দোষারোপ করবেন না।কোন কাজে ভুল হলে ভাবুন এভাবে না করে অন্যভাবে কাজটি করি।নিজের প্রতি দোষারোপ আত্মবিশ্বাসকে কমিয়ে দেয়।সফল হতে বাধা দেয়।এতে বিষণ্ণতা বাড়ে।

খাদ্যাভ্যাসের দিকে লক্ষ্য রাখুন

সঠিক খাদ্যাভ্যাস মানসিক সুস্বাস্থ্য রক্ষা করে।আমাদের শরীরের সাথে মনের সংযোগ রয়েছে। কম চর্বিযুক্ত খাদ্য, মাছ সমৃদ্ধ, বিশেষত ওমেগা-৩, এবং ফলিক অ্যাসিড মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক এবং পাশাপাশি এলকোহল এড়ানো এবং ক্যাফিনের ব্যবহার কমানো উচিত।

সেবামূলক কাজ

নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করতে পারেন।এতে করে নতুন করে নিজেকে খুঁজে পাবেন এবং বিষণ্ণতাও কাটবে।

ব্যায়াম

মানসিক বিষণ্ণতা দূর করার অন্যতম একটি উপায় হল নিয়মিত ব্যায়াম করা।বিভিন্ন রকমের ব্যায়াম যেমন ইয়গা,অ্যারোবিকস,কমবো ইত্যাদি নিয়মিত করার অভ্যাস গড়ে তোলা।ব্যায়াম মানসিক চাপের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।

চিকিৎসা বন্ধ না করা

ডাক্তার এর মতে নিয়মিত ওষুধ খাওয়া অথবা থেরাপি ছয় থেকে নয় মাস নেওয়ার পর কিছুটা ভালো অনুভব করলেও ওষুধ বা থেরাপি নেওয়া বন্ধ করা উচিত নয় যেটা অনেকেই করে।ডাক্তারের পরামর্শ মত মত ওষুধ বা থেরাপি নিতে এবং বন্ধ করা উচিত।

বিশ্রাম

প্রতিদিন পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত,ঘুম মনকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং মনের উপরই মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা নির্ভর করে।২০০৫ সালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম হয় তাদের থেকে যারা অনিদ্রায় থাকে তাদের ১০গুন বেশি বিষণ্ণতা থাকে।আরুইন এর মতে, “ঘুম স্বাস্থ্যের ভিত্তি,খাবারের মত”।পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর ও মন সঠিকভাবে কাজ করে না।নিয়মিত ঘুম আমাদের বিষণ্ণতা এবং অবসাদ থেকে দূরে রাখে।

বিশ্বস্ত মানুষের সাথে কথা বলা

অনেক মানুষ আছে যারা তাদের বিষণ্ণতার কথা কাউকে বলতে চায় না কারণ তারা ভাবে তারা নিজেই ঠিক করতে পারবে এবং অন্যদের বোঝা হতে চায় না।এটা না করে প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলা উচিত।আপনার মনের কথাগুলো বললে অনেকটাই মানসিক শান্তি অনুভব করবেন।

কৃতজ্ঞতা

বৃহত্তর একটি সুখের রাস্তা হচ্ছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।যদিও এটি শুনতে অনেক সাধারণ।২০০৫ সালে আমেরিকান মনোবৈজ্ঞানিক দ্বারা প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় মানুষ যদি প্রতিদিন তিনটি ভালো জিনিস এর তালিকা করে তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে তাহলে সেই দিনে তার বিষণ্ণতা অনেক কম মাত্রায় থাকে।তাই কেউ আপনাকে সহযোগিতা করলে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন

মাদকদ্রব্য এড়িয়ে চলুন

মাদকদ্রব্য গ্রহণ বন্ধ করতে হবে।মাদকদ্রব্য কখনও বিষণ্ণতা কাটায় না। ডঃ মারুসাক বলছেন “অ্যালকোহল গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্র্রান্সমিটার হয় নিঃশেষ করে”।সাধারণত রোগীদের অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকতে ডাক্তাররা পরামর্শ দেয়।অ্যালকোহল মেজাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সমর্থন গ্রুপ যোগদান

সাপোর্ট গ্রুপ বিশেষ সহায়ক হয় কারণ সেখানে মানুষ তাদের বিষণ্নতা আলোচনা করে এবং পরামর্শ প্রদান করে।এখানে আলচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান বের হচ্ছে।আপনি উপলব্ধি করবেন আপনি একা নন অন্যরাও একই সমস্যার সাথে লড়াই করেছে এবং একে অন্যকে সাহায্য করছে।

সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন

বিসন্নতা মানুষকে একা করে দেয়।তাই এসময় উচিত পরিবার ও বন্ধু বান্ধবের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করা। ডঃ কাঠ বলছেন- ‘কমিউনিটি রোগের সুচিকিৎসা এবং প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব ফেলে’।বস্তুত ২০০৯ সালে সাইকিয়াট্রিক আমেরিকান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায় যে ৬৫ ভাগ মানুষের বিষণ্ণতার কারণ হল একা থাকা।

আত্মসম্মান গড়ে তুলুন

যদিও আত্মসম্মান রাতারাতি গড়ে উঠে না।তবুও নিজের আত্মসম্মানকে বাড়াতে হবে।তাতে করে নিজের উপর নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়বে।সবার সব গুন থাকে না কিন্তু প্রত্যেকেরই এমনকিছু থাকে যা দ্বারা অনেক কিছুই করা সম্ভব।যে বিষয় আপনি পরিবর্তন করতে পাবেন তার দিকে দৃষ্টি দিন।এভাবে নিজের আত্মসম্মান গড়ে তুলতে হবে। মানসিক চাপ আর বিষণ্ণতা থেকে বের হয়ে আসার জন্য আপনি নিজেকে নিজের থেকে বের করে আনুন।

জীবনকে সংগঠিত করুন

সুসংগঠিত জীবন আমাদেরকে উপহার দেয় একটি শান্তিপূর্ণ মন । সবসময় সবকিছু গুছিয়ে রাখতে চেষ্টা করুন, তাহলে গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় আর ভুলবেন না। সময় ধরে ধরে কাজ করুন এবং সমস্ত কাজের ফাঁকেই নিজের জন্য কিছুটা সময় রাখুন। দেখবেন স্থির হয়ে আসছে মন।