প্রায় সব জন্মদিনের উৎসবেই “Happy Birthday To you” এই গানটি গেয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। কিন্তু সেই জন্মদিন যদি হয় প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি এর এবং সেই গানের গায়িকা হন অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো তাহলে গানটি যে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। আজ পর্যন্ত এই গানটি অনেকেই গেয়েছেন, এর বহু সংস্করণ রয়েছে। কিন্তু আজপর্যন্ত মেরিলিন মনরোর গাওয়া গানটিই সবচেয়ে জনপ্রিয়।
১৯৬২ সালের মে মাসের ১৯ তারিখে অর্থাৎ প্রেসিডেন্টের ৪৫ তম জন্মবার্ষিকীতে ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে এক বিশাল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিলো। তাতে উপস্থিত ছিলো প্রায় পনেরো হাজার অতিথি। শুধু ছিলেন না ফার্স্ট লেডি জ্যাকলিন কেনেডি। তবে রাষ্ট্রদূত হতে শুরু করে সেলিব্রিটি, সব গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন সেখানে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন পিটার লফোর্ড। তিনি মনরোকে স্টেজে আসার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু মনরো আসছিলেনই না। অনেকক্ষণ পর যখন মনরো স্টেজে এলেন, পিটার তাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন, “লেট মেরিলিন মনরো” বলে। কিন্তু যখন মনরো স্টেজে এলেন, সকলে তাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল।
মেরিলিন স্টেজে এসে দাড়ালেন।স্পটলাইটের নিচে দাঁড়িয়ে খুলে ফেললেন তার ফার কোট। দেখা গেলো মনরোর পরনের পোশাক। তার পরনের মার্কুজিট কাপড়ের গাউনের রঙ মিশে গিয়েছিলো গায়ের সাথে। তাতে লাগানো ছিলো ২৫০০ টি ঝলমলে রাইনস্টোন! তবে মনে হচ্ছিলো যেন রাইনস্টোনগুলো তার চামড়ার সাথে লাগানো। ডিজাইনার জেন লুইস এটি বানিয়েছিলেন এবং এতে খরচ পরেছিলো ১২ হাজার ইউ এস ডলার। পরবর্তীতে নিলামে উঠলে এটি বিক্রিত হয় ১.২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ড্রেসটি এত টাইট ছিলো যে মেরিলিনের গায়ে পরার পর তা সেলাই করে ফিটিং করে দেয়া হয়েছিলো। ভাবা যায়?!
এমন দুর্দান্ত একটি পোশাক্ পরে স্টেজে উঠে মেরিলিন মনরো একঝাক মন্ত্রমুগ্ধ দর্শকের সামনে মোহনীয় সুরেলা গলায় গেয়ে উঠলেন, “হ্যাপি বার্থডে, মিস্টার প্রেসিডেন্ট”। যতক্ষণ তিনি গাইলেন, চারদিকে ছিলে পিনপতন নীরবতা। মনরোর গান গাওয়া শেষ হলে দর্শকের ঘোর কাটতে কিছু সময় কাটে। তারপর তারা ফেটে পরে উল্লাসে। তালির আওয়াজে তখন কান পাতা দায়।
তারপর কেক কাটার জন্য স্টেজে উঠে আসেন মিস্টার প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, “এত সুন্দরভাবে কাউকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো যায়, তা আমার জানা ছিলো না। এখন আমি রাজনীতি থেকে রিটায়ার করলেও আমার দুঃখ থাকবে না”
প্রেসিডেন্ট কেনেডির এই জন্মদিনটির বিশেষত্ব অনেক। এই জন্মদিনের ঠিক ১০ দিন পর লি হার্ভি অসওয়ালড এর হাতে খুন হন কেনেডি। এবং মেরিলিন মনরো এই দিনের তিন মাস পর রহস্যজনক ভাবে মৃত্যুবরণ করেন। সেই সাথে হারিয়ে যায় মেরিলিন-কেনেডির জ়ীবনের কিছু রহস্যময় পাতা।
কেনেডি এসাসিনেশন নিয়ে ২০১৬ সালে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে যার নাম “জ্যাকি”। এতে ফার্স্টলেডি জ্যাকলিন “জ্যাকি” কেনেডির চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাতালি পোর্টম্যান।
মেরিলিন মনরোর গাওয়া সেই গানের ইউটিউব লিঙ্কঃ https://www.youtube.com/watch?v=Vg5HIMnPx7k