মোবাইল ফোনের ইতিহাসে নোকিয়া ফোনের নাম আলাদা ভাবে বলতেই হবে । আমাদের মোবাইল চেনা শুরু হয়েছিল মূলত নোকিয়া ফোনের মাধ্যমেই । এখনকার যুগটা যদিও স্মার্ট ফোনের দখলে তথাপি বাটনযুক্ত সাদাকালো বা কালারফুল স্ক্রিনের নোকিয়া ফোন এখনো ভুলবার নয় । সেই সাথে পরিচিত নোকিয়া রিংটোনের কথা না বললেই নয় । সেই চিরচেনা রিংটোন যা কিনা বহুদিন ধরে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল । আজকে আমরা সেই চিরচেনা নোকিয়া রিংটোনের ইতিহাস নিয়েই কথা বলবো ।
কিভাবে শুরু হয়েছিল ?
নোকিয়া রিংটোনটি নেয়া হয়েছে ১৯০২ সালে কম্পোজ করা একটা গানের অংশ বিশেষ থেকে । ফ্রান্সিস টেরেগা নামে একজন স্প্যানিশ গিটারিস্ট গানটি কম্পোজ করেছিলেন । গানটির নাম ছিল “” Gran Vals”” । নোকিয়া এই গানটির স্বত্ব কিনে নেয় ১৯৯২ সালে ।
গানটি শুনুন এই লিঙ্ক থেকে। রিং টোনের অংশটুকু শোনা যাবে এই ভিডিও লিঙ্কের ২.২৮ মিনিট থেকে।
প্রথম দিকে তারা এই কম্পোজিশনটিকে নিজেদের বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যাবহার করতো । মূলত বিজ্ঞাপনটি করা হয়েছিল Nokia 1011 মডেলের সেটের জন্য । ৩৩ সেকেন্ডের ওই বিজ্ঞাপনটিতেই সর্বপ্রথম এই টিউনের ব্যাবহার দেখা যায় যেটি পরবর্তিতে নোকিয়া টিউন নামে পরিচিতি লাভ করে ।
এক সাক্ষাৎকারে নোকিয়া কোম্পানির সাউন্ড বিভাগের প্রধান বলেছিলেন ,আজকের দিনে যদিও এই টিউনটি অনেক বড় কিছু নয় ,কিন্তু সেই সময় রক আর মেটাল ব্যান্ডের যুগে এরকম একুইস্টিক কম্পোজিশনের ব্যাবহার খুব কম ছিল । মূলত এটাই মানুষকে নোকিয়ার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট করেছিল এবং নোকিয়ার প্রধান স্লোগান “”connecting people “” কথাটিকে অর্থবহ করে তুলেছিল ।
এক বছরের মাঝেই নতুন প্রযুক্তি চলে এসেছিল । প্রচুর মেলোডিক কম্পোজিশনও পাওয়া যাচ্ছিল । কিন্তু নোকিয়া কোম্পানি তাদের অনুপ্রেরনা খুজে নিতো শুরুর দিকের এই টিউন থেকেই।
১৯৯৪ সালে নোকিয়ার 2110 মডেলের হ্যান্ডসেটের সাথে এই টিউনটা জুড়ে দেয়া হয়েছিল যা কিনা বাজারে ব্যাপক সাড়া ফেলে ।
প্রথম দিকে এটি শুধু একটি সাধারন রিংটোন ছিল । ১৯৯৭ সালের দিকে টিউনটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় । এবং ১৯৯৯ সালে নোকিয়া টিউন হিসাবে পরিচিতি পায় । এপর থেকে নোকিয়ার সকল মডেলের হ্যান্ডসেটে টিউনটিকে ডিফল্ট হিসাবে ইউজ করা শুরু হয় ।
২০০০ সালের দিকে নোকিয়া 3310 মডেলের হ্যান্ডসেট বাজারে আসে ।
দ্যা পলিফোনিক স্প্রি
এর দুই বছর পর থেকে পলিফনিক স্প্রি ( বহু স্বরের সমাগম হয়েছে এমন টিউন) টাইপের রিংটোনের প্রচলন হয় । এই ধরনের রিংটোন প্রথম শোনা গিয়েছিল নোকিয়া 3510 মডেলের হ্যান্ড সেটে । হ্যান্ডসেটের ফাস্ট সাউন্ড হিসাবে ( ফোন অন করলে যে সাউন্ড হয় ) তখন পলিফোনিক টিউনের সূচনা হয় ।
এভাবেই ফ্রান্সিস টেরেগার কম্পোজিশনটি ধীরে ধীরে নোকিয়া টিউন হিসাবে পরিচিতি লাভ করে ।
লেখকঃ আরাফাত আবদুল্লাহ, শিক্ষার্থী, মাইক্রোবায়োলজি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।