আজ মধ্যরাতের কিছু পরেই উৎক্ষেপিত হবে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ “বঙ্গবন্ধু-১”। অনেক দিন ধরেই সবার জল্পনা-কল্পনা চলছিল কবে এর যাত্রা শুরু হবে। আর মাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা।
এ ফাঁকে চলুন জেনে নিই, কিভাবে এলন মাস্কের স্পেস-এক্স বাংলাদেশের এ মাহেন্দ্রক্ষণের সাথে যুক্ত হলো। স্পেস-এক্স এর ফ্যালকন ৯ রকেটের প্রথম দুই গ্রাহক হচ্ছে নাসা ও স্যাটেলাইট ফ্লিট অপারেটর প্রতিষ্ঠান SES. সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ হচ্ছে এর তৃতীয় গ্রাহক।
ফ্যালকন-৯ রকেট ২০১০ সালে প্রথম বারের মত সফলভাবে উড্ডয়ণ করে। এর পরেই নাসা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে রি-সাপ্লাইং কাজের জন্য মোট ৪ বার এ রকেট ব্যবহার করে।
লুক্সেমবার্গের SES হচ্ছে প্রথম স্যাটেলাইট অপারেটকারী প্রতিষ্ঠান, যারা স্পেস-এক্স এর সাথে কাজ করতে সম্মত হয় এবং মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের সেই জিও-স্টেশনারি স্যাটেলাইটের সফল উড্ডয়ণ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়। ২০১৩ তে এই মিশন সফল হবার পর গত বছর পর্যন্ত ফ্যালকন ৯ এর প্রথম সিরিজের রকেটের কার্যক্রম ছিল সফল।
ইউটিউবে স্পেস-এক্স এর অফিসিয়াল চ্যানেলে সরাসরি দেখুন ভিডিও
আজ বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন ( বি টি আর সি), ফ্যালকন ৯ ব্লক-৫; যেটা কিনা ফ্যালকন ৯ এর নতুন, চূড়ান্ত ও সবচেয়ে শক্তিশালী ভার্সন, সেটার প্রথম ব্যবহারকারী হতে যাচ্ছে।এ রকেটটি আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও নাসা’র বাণিজ্যিকভাবে মহাশূন্যযান নীতিমালা অনুসরণ করেই বানানো হয়েছে। এ রকেট কমপক্ষে ১০ বার বা বা তারও বেশি উড্ডয়ণে সক্ষম।
আর এর মাধ্যমে স্পেস এক্স আশা করছে শীঘ্রই বাণিজ্যিকভাবে আরো অনেক দেশ তাদের মাধ্যমে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে আগ্রহী হবে।
আসুন জেনে নিই, বাংলাদেশ কিভাবে স্পেস-এক্স এর মাইলফলকে যুক্ত হলো।
বিটিআরসি যখন প্রথম আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করে তখন প্রাথমিকভাবে স্পেস এক্স কে পেছনে ফেলে ফ্রান্স-ইতালি যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত স্যাটেলাইট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান থেলস এলেনিয়া স্পেসের তালিকাভুক্ত এরিয়ানস্পেসের এরিয়ান-৫ কে বংগবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের জন্য ডিফল্ট লঞ্চার রকেট হিসেবে নির্বাচন করা হয়। স্পেস-এক্স এর ফ্যালকন-৯ ছিল রানার আপ।
কিন্তু ঘটনা মোড় দেয় ভিন্ন দিকে। গত বসন্তে ফ্রেঞ্চ গায়ানাতে অবস্থিত ইউরোপের “স্পেসপোর্ট” স্থানীয় মানুষের প্রতিবাদের মুখে অনির্ধারিত সময়ের জন্য কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ফলে এরিয়ান এর ৫ সপ্তাহের জন্য তাদের রকেট উড্ডয়ণ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। পরবর্তী ২ মাসে ৩ টি মিশন বাতিল হয়ে যায়। ফলে বংগবন্ধু-১ এর উৎক্ষেপণ নিয়েই তৈরি হয় শংকা।
বাংলাদেশ চাচ্ছিল ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ তে, মহান বিজয় দিবস এর দিন বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ হোক। কারিগরী কিছু কারণে এরিয়ান এই সময়েই মাঝেই কাজটি সম্পন্ন করার নিশ্চয়তা দিতে পারে নি।
ফলে এরিয়ানকে ব্যাক আপ হিসেবে রেখে, বাংলাদেশ স্পেস-এক্সকে বেছে নেয়; যদিও এর ফলে ডিসেম্বর, ২০১৭ তে না হয়ে ১১ মে, ২০১৮ তে বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপিত হতে যাচ্ছে।
লেখাঃ জুলকারনাইন মেহেদী
লেখাটি স্পেস নিউজে প্রকাশিত How Bangladesh became SpaceX’s first Block 5 Falcon 9 customer ফিচার থেকে অনূদিত।