১০ বলিউড মুভি, যেগুলো আটকে দিয়েছিল সেন্সর বোর্ড

black-friday_89ac7dd8-31d6-11e5-a8da-005056b4648eবর্তমান পৃথিবীতে বলিউড সর্ববৃহৎ চলচ্চিত্র সাম্রাজ্য। প্রতিবছর ৭০০ এর ও বেশি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। কিছু হয় সুপারহিট, কোনটা হিট, কোনটা হয় ফ্লপ। কিন্তু সেন্সরবোর্ড কতৃক নিষিদ্ধ চলচ্চিত্রের সংখ্যাও কম নয়। চলুন দেখে নেই তেমনি কয়েকটি ছবির তালিকা যা ভারতীয় সেন্সরবোর্ড কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়।

১। ব্যান্ডিট কুইন

এই ভারতীয় ছবিটি নির্মাণ করা হয়েছিলো ভারতের কুখ্যাত ডাকাত ‘ফুলন দেবী’ এর জীবনকাহিনী নিয়ে। যদিও এতে অনেক রঙ চড়ানো হয়েছিলো। ছবিটির পরিচালক ছিলেন শেখর কাপুর। কিন্ত সেন্সর বোর্ড ছবিটি নিষিদ্ধ করে দেয় কারণ এটি ছিলো কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা, গালিগালাজ এবং অপ্রয়োজনীয় নগ্নদৃশ্য। তাই সেন্সরবোর্ড এটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

২। ফায়ার

দীপা মেহতা একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় চিত্রপরিচালক। তিনি তার ‘Element Trilogy Movie’ এর জন্য প্রসিদ্ধ। এই ট্রিলজির তিনটি ছবি হচ্ছে, ফায়ার (Fire), আর্থ (Earth), ওয়াটার (Water)। এর মধ্যে ফায়ার ছবিটি সেন্সরবোর্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

ছবিটির বিষয়বস্তু হচ্ছে, এক হিন্দু পরিবারে দুই নারীর যারা সমকামী। যার জন্য ভারতীয় হিন্দু ধর্মালম্বীরা বিশেষত শিবসেনা এই চলচ্চিত্রে বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আন্দোলন শুরু করে। ছবির পরচালক দীপা মেহতা, বিখ্যাত অভিনেত্রী শাবানা আজমী এবং নন্দীতা দাস কে ক্রমাগত প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। তাই ভারতীয় সেন্সরবোর্ড বাধ্য হয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়া এই চলচ্চিত্রটিকে ভারতে নিষিদ্ধ করে।

৩। কামাসুত্রা – এ টেল অব লাভ

মীরা নায়ার পরিচালিত এই ছবিতে রয়েছে ভারতের চারজন প্রেমিক যুগলের গল্প। ষোড়শ শতাব্দীর পটভূমিতে নির্মিত এই ছবিটি সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করলেও সেন্সরবোর্ড একে জনসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেন্সরবোর্ডের মতে এই ছবিটি অনৈতিক, ব্যভিচার, ও কুরুচিপূর্ণ নগ্ন দৃশ্যে পরিপূর্ণ । তাই সেন্সরবোর্ড এটি নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়।

৪। দ্যা পিঙ্ক মিরর

এই ছবিটিরর পরিচালক হলেন শ্রীধর রঙ্গনায়ন। এতে দেখানো হয়েছে দুইজন হিজড়া এবং একজন সমকামী কিশোরের কাহিনী যারা একজন পুরুষকে যৌনসঙ্গী হিসেবে পেতে চায়। ছবিটি সেন্সরবোর্ড নিষিদ্ধ করে এ ছবিতে ব্যবহৃত কুরুচিপসম্পন্ন ভাষার জন্য।

৫। পাঁচ

এই সিনেমাটির পরিচালক হলেন অনুরাগ কশ্যপ। এটি ভারতের বিখ্যাত জোশী-অভয়াঙ্কর সিরিয়াল মার্ডার কেসের উপর ভিত্তি করে তৈরি যা ঘটেছিলো ১৯৯৭ সালে। এতে দেখানো হয়েছিলো প্রচুর মারামারি, গালিগালাজ এবং মাদক সেবনের নানা উপায়। যার কারণে সেন্সরবোর্ড একে নিশিদ্ধ ঘোষণা করে।

৬। ব্ল্যাক ফ্রাইডে

এই চলচ্চিত্রটির কাহিনী খানিকটা নেয়া হয়েছে বিখ্যাত বই ব্ল্যাক ফ্রাইডে থেকে। তবে এর মূল কাহিনী হচ্ছে মুম্বাই এর বম্ব ব্লাস্ট বা বোমা হামলার ঘটনা যার জন্য দায়ী ছিলো কুখ্যাত সন্ত্রাসী এস. হুসেইন যায়েদী। এই ছবিতে কিছু ভয়াবহ দৃশ্য ছিলো যা সেন্সরবোর্ডের মতে “Too Dark”। তাছাড়া কিছু আইনি জটিলতার কারণে এই ছবিটি নিষিদ্ধ হয়।

৭। পারজানিয়া

এই ছবিটি নির্মিত হয়েছিলো ২০০২ এর গুজরাটে রায়টের পটভূমিতে। এই ছবিটিতে একটি ছেলে নাম আজহার, সে হারিয়ে যায় রায়টের সময়ে। সেসময়কার নানান ভয়াবহ দুরবস্থার কথা এসেছে এই ছবিতে। জনসাধারণ ও সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয় এই ছবিটি। কিন্তু নানান ধরণের রাজনৈতিক কারণে ছবিটি গুজরাটে নিষিদ্ধ করা হয়। এই ছবিটির পরিচালক হলেন রাহুল ঢোলাকিয়া।

৮। সিনস

এই ছবিটি কেরালায় বসবাসরত এক পাদ্রীকে নিয়ে, ভালবাসে এক মেয়েকে। এবং সে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পরে যা এক পাদ্রীর জন্য নিষিদ্ধ। এই ছবিটিকে ক্যাথলিক সমাজ মেনে নেয়নি। তাদের মতে এই ছবিতে ক্যাথলিসমকে অনৈতিকভাবে দেখানো হয়েছে। তাছাড়া এই ছবিতে কিছু নগ্ন দৃশ্যের প্রতি সেন্সরবোর্ডের আপত্তি ছিলো। তাই এটি নিষিদ্ধ হতে বেশি সময় লাগেনি।

৯। ওয়াটার

এটি দীপা মেহতার এলিমেন্ট ট্রিলজি সিরিজের আরেকটি ছবি। এই ছবিটির প্রেক্ষাপট হচ্ছে বারাণসীর একটি বিধবা আশ্রম। একজন ভারতীয় বিধবার জীবনের নানান দিক তুলে ধরা হয়েছে। দেখানো হয়েছে তাদের অন্ধকার এক জীবনের চিত্র। তাছাড়া এই ছবিতে সমাজ থেকে বহিষ্কার, জাত যাওয়া এসব বিষয় খুব রূঢ়ভাবে দেখানো হয়েছে। যার কারণে কিছু বিদ্বেষীরা সিনেমার সেটে হামলা করে ভেঙে দেয়। তাই আন্দোলনের মুখে পরে সেন্সরবোর্ড ভারতে এই ছবিকে নিষিদ্ধ করে।

১০। ইনশাআল্লাহ, ফুটবল

এই ছবিটির কাহিনি একটি কাশ্মীরী তরুণকে নিয়ে, যার ইচ্ছা দেশের বাইরে গিয়ে ফুটবল খেলা শিখে, খেলে বিখ্যাত ফুটবলার হওয়া। কিন্ত সে মুসলমান হওয়ার কারণে, কাশ্মীরে ঘটিত বিদ্রোহের একজন জঙ্গী বলে তার বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। ছেলেটার স্বপ্ন আর পূরণ হয়না। ছবিতে নানানপ্রকার অন্ধকার এবং স্পর্শকাতর ধর্মীয় বিষয় উঠে এসেছে বলে সেন্সরবোর্ড ছবিটি নিষিদ্ধ করে দেয়।

লেখিকাঃ তাসনিয়া আজমী