কোকা-কোলা, পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় সম্ভবত এটিই। অভিনব আকৃতির চিরচেনা এক বোতলে করে কালচে রংয়ের এই পানীয়টি প্রতিদিনই পৌঁছে যাচ্ছে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে।
কোকা-কোলা কম্পানি পৃথিবীর সর্বকালের সবচেয়ে ধনী কম্পানিগুলোর মধ্যে অন্যতম। সারা বিশ্বের এক লক্ষ ত্রিশ হাজার লোক এই কম্পানিতে নিযুক্ত আছেন।
Source: https://en.m.wikipedia.org/wiki/The_Coca-Cola_Company#/media/File:Coca-ColaHQ.jpg
তবে এই কম্পানি প্রতিষ্ঠার পেছনে লুকিয়ে আছে বেদনাদায়ক এক কাহিনী। জন পেম্বারটন নামে এক ফার্মাসিস্ট এই বিখ্যাত পানীয়টি আবিষ্কার করেন। তিনি আমেরিকান সিভিল ওয়ারে কনফেডারেট আর্মি’র সৈন্য হিসেবে লড়াই করেছিলেন। ১৮৬৫ সালে কলাম্বাসের যুদ্ধের সময় বুকে মারাত্মক আঘাত পেয়ে তিনি প্রায় মৃত্যুমুখে পৌঁছে যান। সেই আঘাতের পর ব্যথানাশক হিসেবে দীর্ঘসময় ধরে তাঁকে মরফিন সেবন করতে হয়েছিলো। ফলে একসময় তিনি মরফিনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। এই আসক্তি কাটিয়ে ওঠার জন্যে তিনি নিজের ফার্মাসিউটিক্যাল জ্ঞান কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরণের গাছ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে শুরু করেন।
১৮৬৬ সালে, অর্থাৎ কলাম্বাসের যুদ্ধের এক বছর পরে তিনি একটি অ্যালকোহলিক পানীয় বিক্রয় করতে শুরু করেন, যার নাম তিনি দিয়েছিলেন “পেম্বারটন’স ফ্রেঞ্চ ওয়াইন কোকা”। এই পানীয়টি তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ফার্মেসি “পেম্বারটন’স ঈগল অ্যান্ড ড্রাগ হাউজ”-এ তৈরি করেছিলেন। পানীয়টি ব্যথানাশক, বিষন্নতানাশক ও যৌন উদ্দীপক হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
১৮৮৬ সালে আটলান্টাতে আইন করে সেখানকার বাসিন্দাদের জন্যে অ্যালকোহল উৎপাদন, ক্রয় ও বিপণন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পেম্বারটনের উদ্যোগটি এতে বিপাকে পড়ে যায় এবং তিনি তাঁর উদ্ভাবিত পানীয়টিকে নন-অ্যালকোহলিক পানীয়তে পরিণত করতে বাধ্য হন।
তিনি তাঁর কম্পানিটিকে নিবন্ধিত করেন এবং তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু Willis E. Venable এর সহায়তায় নিজের বিখ্যাত গোপন রেসিপিকে আরও নিখুঁত করে তোলেন। তাঁদের ইচ্ছা ছিল, এই পানীয়টিকে ঔষধ হিসেবে প্রচার করবেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে মূল সিরাপটিকে তাঁরা কার্বোনেটেড পানির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলেন এবং পানীয়টিকে রিফ্রেশিং সোডা হিসেবে প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেন।
মানুষ পেম্বারটনের ড্রিংক টি খুব বেশি পছন্দ করেনি। তবুও তাঁর বিশ্বাস ছিলো, এটি একদিন ন্যাশনাল ড্রিংকে রূপান্তরিত হবে। একসময় পেমবারটন তাঁর পানীয় তৈরির রেসিপি আটলান্টায় বসবাসরত তাঁর বিজনেস পার্টনারদের কাছে বিক্রি করতে শুরু করেন।
ঐ পানীয় তাঁর মরফিন আসক্তি সারিয়ে তুলতে পারেনি। ফলে খুব দ্রুত তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছিলো। মরফিনের দাম ছিল অনেক চড়া হওয়ায় পেম্বারটনকে নিজের নেশা পূরণের জন্যে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছিলো। ১৮৮৮ সালে পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় কপর্দকহীনভাবে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তারপরও পেম্বারটনের ইচ্ছা ছিল, কোকা-কোলা কম্পানির একটি অংশ নিজের পুত্র চার্লস পেম্বারটনের জন্যে রেখে যাবেন। দুর্ভাগ্যবশত চার্লস পেম্বারটন, যিনি নিজেও মরফিনে আসক্ত ছিলেন, পেম্বারটন পরিবারের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্যে নিজের অংশটি বিক্রি করে দেন। তাঁর পিতার মৃত্যুর মাত্র ছয় বছর পরেই তিনিও মৃত্যুবরণ করেন। কোকা-কোলার তুমুল জনপ্রিয়তা চাক্ষুষ দেখার সৌভাগ্য তাঁর হয়নি।
Source: https://www.thevintagenews.com/2017/02/13/john-pemberton-the-inventor-of-coca-cola-died-penniless-and-addicted-to-morphine/