শারীরিক সুস্থতা নিয়ে সবাই যতটা পরোয়া করে, মানসিক সুস্থতা নিয়ে কারো তেমন মাথাব্যথা নেই। বেশিরভাগ মানুষের কাছেই মানসিক রোগী মানে বদ্ধ পাগল। এছাড়া অন্য যে কোন মানসিক তাড়নাই মানুষ হালকা করে দেখে। এমনকি ডিপ্রেশনের মতো একটি ভয়ানক অসুখকে অত্যন্ত তুচ্ছ করে দেখা হয়। কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য শারীরিক সুস্থতা যতটা জরুরী, ঠিক ততটাই জরুরী মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা। একটি অসুস্থ মন নিয়ে একটি সুস্থ শরীর খুব বেশিদিন বাঁচতে পারেনা।
আর্টিস্ট শন কস (Shawn Coss) মানুষের মাঝে মানসিক অসুখ নিয়ে সচেতনতা তৈরী করতে চেয়েছেন। তিনি তার ছবির মাধ্যমে অসুখগুলোর সত্যিকারের রূপ্ তুলে ধরতে চেয়েছেন। যারা মানসিক সুস্থতাকে গুরুত্ব দেয় না, তাদের মনে সচেতেনতা গড়ে তোলাই ছিলো তার উদ্দেশ্য।
১: বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার ( Borderline Personality Disorder)
বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার সাধারণত কৈশোর এবং তারুণ্যের মাঝামাঝি অবস্থানকারী ছেলেমেয়েদের মধ্যে দেখা যায়। যারা এই BPD তে ভোগে তারা সাধারণত নিজের আবেগ ও চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হয়। তারা প্রচণ্ড বেপরোয়া এবং কথায় কথায় আবেগপ্রবণ হয়ে পরে।এরা এদের সম্পর্কগুলো নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এমনকি নিজেকেও তারা তুচ্ছ করে দেখে।
২: ইনসমনিয়া ( Insomnia )
ইদানীং মানুষের মধ্যে যে মানসিক রোগটি বেড়ে চলেছে তা হচ্ছে ইনসমনিয়া।সাধারণত দুই ধরণের ইনসমনিয়া রয়েছে। প্রথম ইমসমনিয়াটি হয়েছে, যখন কোন কারণ ছাড়াই ঘুম আসে না, রাতের পর রাত জেগে থাকতে হয়। এবং দ্বিতীয় ধরণটি হচ্ছে নির্ঘুম থাকাটা কোন অসুস্থতার সাথে সম্পর্কিত। যেমন ব্যথা, ঔষধের প্রভাব কিংবা কোন কিছুর প্রতি আসক্তি যেমন ক্যাফেইন, অ্যালকোহল বা অন্যান্য মাদকদ্রব্য।
৩: ডিজইনহিবিটেড সোশ্যাল এনগেজমেন্ট ডিজঅর্ডার (Disinhibited Social Engagement Disorder)
এই অসুখটি সাধারণত বাচ্চাদের হয়। তারা অপরিচিতদের সাথে কথা বলে না, তাদের সামনে যেতে চায় না। এমন কিন্তু নয় যে তারা বিপদের আশংকায় অপরিচিতদের সান্নিধ্যে যাচ্ছে না। তাদের ইচ্ছেই করেনা।
৪: অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (Obsessive Compulsive Disorder)
OCD রোগের ভুক্তভোগীরা সাধারণত একই চিন্তা বারবার করে এবং কোন একতি নির্দিষ্ট ব্যপার নিয়ে ক্রমাগত দুশ্চিন্তা করতে থাকে। তারা সবকিছু গুছিয়ে রাখতে পছন্দ করে। কোন জিনিস জায়গামতো না থাকলে তারা সেই জিনিসটি না গুছিয়ে রাখার আগপর্যন্ত শান্তি পায় না।এই রোগের আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতা নিয়ে বেশি মাথা ঘামানো, একই জিনিস বারবার ধোয়া, বারবার স্নান করা, ময়লা লেগে আছে ভেবে বারবার ধোয়ামোছা করা এই রোগের অন্যতম লক্ষণ।
৫: কটার্ড’স ডিল্যুশন (Cotard’s Delusion)
এই রোগটি খুব বিরল একটি অসুখ।এই অসুখের রোগীরা মনে করে যে তারা মৃত। না, মানসিকভাবে নয়, তারা ভাবে শারীরিক ভাবে তারা সত্যি সত্যি মৃত।
৬: বাইপোলার ডিজঅর্ডার (Bipolar Disorder)
এই অসুখের রোগীদের মেজাজের কোন ঠিকঠিকানা নেই।কখনো তারা প্রচন্ড হাসিখুশি প্রাঞ্জল এবং পরমূহুর্তেই তারা হতাশাগ্রস্ত।এই রোগীদের প্রাণোচ্ছলতার সময়টাকে বলা হয় “মেনি্য়া এপিসোড” এবং হতাশার সময়টাকে বলা হয় “ডিপ্রেসিভ এপিসোড”।
৭: ডিপেন্টেন্ড পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার (Dependent Personality Disorder)
এই অসুখে যারা আক্রান্ত তারা অন্যের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল।তারা নিজে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা যার। প্রতিটি ছোটবড় সিদ্ধান্ত তারা ততক্ষণ নেয় না যতক্ষণ না তাদের আশ্বস্ত করা হচ্ছে যে এই সিদ্ধান্ত থেকে তাদের কোন বিপদ হবে না।
৮: মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার (Major Depressive Disorder)
এটি ক্লিনিকাল ডিপ্রেশন নামেও পরিচিত। এই অসুখ হলে মানুষ সারাক্ষণ হতাশায় ভোগে, দুখী থাকে, পৃথিবীর কোন আনন্দ তাদের স্পর্শ করতে পারে না। এই রোগ অন্যান্য মানসিক রোগের জন্ম দেয়। যেমন ইনসমনিয়া ও বাইপোলার ডিজঅর্ডার ডিপ্রেশন থেকেই হয়। ক্লিনিকাল ডিপ্রেশনের চিকিৎসা না হলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
৯: সোশ্যাল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার (Social Anxiety Disorder)
এই রোগের রোগীরা সমাজকে প্রচন্ড ভয় পায়। তারা মনে করে এই বুঝি কেউ তাদের নিয়ে কটুকথা বলছে, তাদের নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। যার কারণে তারা একসময় সামাজিকতা এড়িয়ে চলতে শুরু করে।
১০: স্কিতজোফ্রেনিয়া (Schizophrenia)
এই অসুখটি সমন্ধে আমরা কমবেশি সবাই জানি। মারাত্মক মানসিক রোগগুলোর মধ্যে এটি একটি। এই রোগে তাদের মাথার ভেতর আওয়াজ শুনতে পায়। তারা মাথার ভেতরে তারা নানান ধরনের কথা শুনতে পায় এবং সেই কথা অনুযায়ী কাজ করে। তারা ভাবে পৃথিবীর বাকি সবাই তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তারা এমন সব কথা বলে এবং কাজ করে যা সাধারণ মানুষ কখনোই করবে না।
১১: পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (Post Traumatic Stress Disorder)
এই অসুখে সধারণত তারা ভোগে যারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসে। হতে পারে তা কোন অ্যাক্সিডেন্ট বা গুরুতর কোন অসুখের কারণে। তাদের মনে সারাক্ষণ এই চিন্তাই থাকে যেন তারা আবার মৃত্যুর মুখোমুখি হবে।
১২: অ্যানরক্সিয়া নারভোসা (Anorexia Nervosa)
অ্যানরক্সিয়ার রোগীরা ভাবে যে তাদের ওজন খুব বেশি বেড়ে যাচ্ছে।তাই তারা খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং এমন সব কাজ করতে থাকে যা তাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে।এই কারণে একসময় তাদের ওজন বাড়ার আগেই কমতে থাকে এবং একসময় তারা কঙ্কালসার হয়ে পরে। সাধারণত রানওয়ে মডেলরা এই রোগে বেশি ভোগে।
১৩: অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডার (Autism Spectrum Disorder)
বিভিন্ন বয়সের মানুষ এই রোগের শিকার হতে পারে। এই রোগের লক্ষণ হচ্ছে রোগী মানুষের সামনে নিজের মুখ খুলতে পারেনা। মনের কথা মনেই থেকেই যায়, মুখে আসে না।
১৪: ডিপার্সোনালাইজেশন ডিজঅর্ডার (Depersonalization Disorder)
এই অসুখে যারা ভোগে তারা সবকিছু থেকে আলাদা হয়ে পরে। তারা সমাজ থেকে নিজেকে আলাদা করে নেয়। তারা মনে করে তারা স্বপ্নে বসবাস করছে। তাদের কাছে এমন লাগে যে তাদের আত্মা তাদের শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেছে এবং তারা শরীরের বাইরে থেকে শরীরকে কাজ করতে দেখছে।
১৫: ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিজঅর্ডার (Dissociative Identity Disorder)
এটি মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার নামেও পরিচিত। এই অসুখের রোগীদের একটির বেশি পার্সোনালিটি থাকে যা তাদের বিভিন্ন সময়ে নিয়ন্ত্রণ করে।
১৬: ক্যাপগ্রাস সিনড্রোম (Capgras Syndrome)
এই রোগে রোগীর মনে হয় যেন তাদের প্রিয়জনের জায়গা তাদেরই মত দেখতে কোন প্রতারক দখল করে নিয়েছে।
১৭: অ্যাগোরাফোবিয়া (Agoraphobia)
এই অসুখ যাদের হয় তারা বাড়ি থেকে বের হতে প্রচন্ড ভয় পায়। তারা ভাবে, বাড়ি থেকে বের হলে রাস্তাঘাটে তাদের ভয়ঙ্কর বিপদ হবে।
১৮: প্যারানয়েড স্কিতজোফ্রেনিয়া (Paranoid Schizophrenia)
এটি স্কিতজোফ্রেনিয়ার একটি ধরণ। এতে শুধু রোগীরা মাথার ভেতর কথা নয়, বরং আশেপাশে এমন সব মানুষ দেখতে পায় বাস্তবে যাদের কোন অস্তিত্ব নেই।
১৯: অ্যাটেনশন ডেফিসিট ডিজঅর্ডার (Attention Deficit Disorder)
এই অসুখে যাদের হয় তারা কোন কিছুতে মনযোগ দিতে পারে না। সারাক্ষণ অস্থিরতায় ভোগে। তারা নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তারা এমন সব কাজ করে যা তাদের বয়সের সাথে একেবারেই মানানসই নয়।
আর্টিস্ট শন কস এর ফেসবুক পেজঃ Shawn Coss