আমাদের সবারই বস, ম্যানেজার অথবা দলীয় প্রধান আছেন যারা বিশ্বের নিকৃষ্টতম ম্যানেজার বা ব্যবস্থাপকের তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করতে পারেন! কিন্তু কিসে তাদের খারাপ করছে? সাধারণত কিছু গুণ বা স্বভাব রয়েছে যেগুলো একজন খারাপ বস বা ম্যানেজারের ক্ষেত্রে অতি সাধারণ। চলুন সেগুলো জানার চেষ্টা করি।
নিকৃষ্ট বস-ম্যানেজাররা খারাপ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার একটা প্রধান কারণ হচ্ছে তারা ভাবে যে, তারা সর্বদাই সঠিক কাজ করছেন অথবা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নেয়ার জন্য যা করণীয় তাই করছেন। যদি আপনি বস বা ম্যানেজার হোন তবে আমি বলব, এই লেখাটি অবশ্যই পড়বেন। সেইসাথে নিজেকে সংশোধন করার মত কিছু পেলে সংশোধন করে নিবেন।
বিশ্বের খারাপ তথা নিকৃষ্টতম ম্যানেজারের গুণাবলী:
১। যোগাযোগ রক্ষা করে না। একজন খারাপ বস বা ম্যানেজারের জন্য এটি চিরন্তন সত্য। ভাল বস কিংবা ম্যানেজার হতে হলে যখনই সম্ভব আপনার স্টাফদের সাথে খোলামেলা ও সৎ হোন।
২। আত্মমগ্নতায় ভোগেন। কর্মচারীর কাজ, কারো সমস্যা ইত্যাদি খারাপ বস ও ম্যানেজারদের কখনই প্রভাবিত করে না। এরা সর্বদাই আত্মমগ্ন থাকেন।
৩। স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয় না। কিছু বসের যেকোন কাজের উপর নজর রাখার প্রয়োজন পড়ে। তবে যদি কোন দলের কাজকে স্বাধীনভাবে করতে দেয়া না হয় তাহলে সেই দলের কাজ সফল হবে না।
৪। ভিন্নজনকে ভিন্ন নজরে দেখেন। অফিসের বাইরে আপনি কোন কর্মচারীকে ব্যক্তিগতভাবে ভিন্ন নজরে দেখতে পারেন। কিন্তু অফিসের ভিতর সবাইকে সমান চোখে দেখবেন।
৫। অস্পষ্ট বা পরিবর্তনশীল প্রত্যাশা থাকা। যদি ম্যানেজার তার নিজস্ব প্রত্যাশা সম্পর্কে না জানে অথবা সঠিকভাবে তার প্রত্যাশা বুঝিয়ে না দেয় তবে কর্মচারীরা তার প্রত্যাশা পূরণ করবে কিভাবে?
৬। প্রেরণা হিসেবে ভীতি প্রদর্শন করে। ম্যানেজার হিসেবে দলকে প্রেরণাদানে যদি ভীতি প্রদর্শন করেন তবে আপনি ভুল করছেন। এটি কখনই করবেন না।
৭। হঠাৎই রেগে যান।
৮। সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। দলের প্রধান হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা অর্জন করুন। সব কাজের সিদ্ধান্তের জন্যই দলের অন্যান্য সদস্যদের উপর নির্ভর করবেন না। এটি করলে খারাপ ম্যানেজারের তালিকায় আপনার নামটি উঠবে।
৯। সফলতার কৃতিত্ব একাই নিয়ে থাকেন! যদি ম্যানেজার কাজের কৃতিত্ব একাই নিয়ে থাকেন তবে তিনি কখনই ভাল ম্যানেজার হতে পারেন না।
১০। ব্যর্থ হলে দলকে দোষারোপ করে। যদি ম্যানেজার ভাল কাজের কৃতিত্ব একাই নেন আর ব্যর্থতার জন্য দলের সবাইকে দোষারোপ করেন তবে তিনি ভাল ম্যানেজার নন।
১১। বসের সামনে শুধু নিজেকেই ভাল প্রমাণের চেষ্টা করে।
১২। কখনই ক্ষমা করেন না। কেউ ভুল করলে ভাল ম্যানেজার তা মেনে নেন। কিন্তু খারাপ ম্যানেজার কখনই ভুলের জন্য ক্ষমা করেন না।
১৩। পরিবর্তনে বাঁধা না দেয়া। দলের সদস্যদের কোম্পানির ক্ষতি হয় এমন ধারণাতেও বাঁধা দেন না।
১৪। কারো কাজের স্বীকৃতি প্রদানে অপারগতা।
১৫। দলের সদস্যদের প্রেরণাদানে ব্যর্থ হওয়া।
১৬। প্রয়োজনের সময় না থাকা। অনেক বসকেই দেখা যায় কফির কাপ হাতে নিয়ে অফিসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনের সময় দেখবেন উধাও! এমন বস অথবা ম্যানেজার অবশ্যই খারাপ।
১৭। সমস্যা হলে পাওয়া যাবে না। একটা প্রবাদ আছে-“আমাকে সমস্যায় ডাকিওনা, সমাধানে ডেকো”। এমন বস-ম্যানেজাররা বিপদে কর্মচারীদের পাশে থাকবে না।
১৮। দূর-দৃষ্টির অভাব। এমন হলে দলের সদস্যদের নির্দেশনা দিতে পারে না। ফলে সদস্যরা হতাশ হয়ে পড়ে।
১৯। মুখে মধু অন্তরে বিষ! ম্যানেজার মুখে প্রশংসা করলেও অন্তরে ভিন্নকিছু করে থাকে। এমন ধরনের ম্যানেজারকে কখনই ভাল বলা যায় না ও বিশ্বাস করা যায় না।
২০। অবাস্তব প্রত্যাশা। কর্মচারীদের কাছে কি চাওয়া হয় তার সঠিক গাইডলাইন থাকা ভাল। অনেক সময় এমনকিছু প্রত্যাশা করা হয় যা সম্পূর্ণ অসম্ভব। একজন ভাল ম্যানেজার শুধু প্রত্যাশাই করেন না পাশাপাশি কাজটি সম্পাদন করা সম্ভব কিনা সেটাও দেখেন।
২১। শুধুই কাজ বোঝে! ভাবতে পারেন এটি খারাপ ম্যানেজারের বৈশিষ্ট্য হয় কিভাবে? দেখুন কাজের বাইরেও কর্মচারীদের আলাদা জগত আছে, পরিবার আছে এসব ভুললেতো চলবে না।
২২। একের কাজের বোঝা অন্যের উপর চাপান। যদি কোন কর্মচারী চলে যায় তবে সেই কাজ বাকীদের দিয়ে করিয়ে নেন। এসবক্ষেত্রে বাকি সদস্যরা বিরক্ত হতে পারে। ভাল ম্যানেজার হলে এটুকু অবশ্যই বুঝতো।
২৩। বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগকারী। যিনি কাজ করিয়ে নিতে মূলা ঝুলান। কৌশলে একের কাজ অন্যের দ্বারা করিয়ে নেন। ভীতি প্রদর্শন করেন। তিনি কখনই ভাল ম্যানেজার হতে পারেন না।
২৪। প্রতিহিংসাপরায়ন। খারাপ ম্যানেজার প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে থাকেন।
২৫। লজ্জ্বা দিয়ে থাকেন। খারাপ বস-ম্যানেজার দলের সদস্যকে কাজে আগ্রহী করতে সবার সামনে অপমানিত করেন লজ্জ্বা দেন! মনে রাখবেন, এতে কোনই লাভ হয় না।
যদি উপর্যুক্ত কোন একটি অথবা একাধিক বৈশিষ্ট্য আপনার মাঝে থাকে তবে ভীত হবেন না। দ্রুত নিজেকে পরিবর্তন করে নিন। তাহলে আপনিও ভাল বস বা ম্যানেজার হতে পারবেন।
লিখেছেন ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম