নকশাল (২০১৫)। মুভির শুরুর সময় ১৯৭১ সালের কলকাতা। কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া ভেঙ্গে গিয়ে পশ্চিম বঙ্গের নকশালবাড়ি গ্রাম থেকে জন্ম নেয় নতুন এক বিপ্লবের। সমাজে সাম্য নিয়ে আসার জন্য সে আন্দোলনের নাম হয় “নকশালবাড়ি আন্দোলন”। সমর, অনির্বাণ আর শঙ্কর- সে আন্দোলনেরই ৩ কর্মী।
৪২ বছর পর কলকাতার বিভিন্ন সরকারি অফিস ও পুলিশ কার্যালয়ে একজন প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তার ফ্যাক্স আসতে থাকে। অনির্বাণ মেট্রো রেলের নিচে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তার আগে কিছু কথা জানিয়ে যাবেন ফ্যাক্সযোগে; কারা তার মৃত্যুর জন্য দায়ী হবে।
এ খবরে প্রথম কেউ গুরত্ব না দিলেও পরে তা সারা শহরে হৈ চৈ ফেলে দেয়। কে এই অনির্বাণ ? ফ্যাক্সে জানা যায়, তিনি, তার স্ত্রী রিনা ও ছেলে ডো ডোকে নিয়ে তার কোনোমতেই দিন চলে যাচ্ছিল। সৎ সরকারি কর্মচারী, বেতনে কুলোয় না। অন্যদের মত ঘুষ খেতে গিয়ে ধরা পড়ে চাকরি হারান। তার কিছুদিন আগেই কিস্তিতে ফ্ল্যাট কেনেন। সেটার টাকা দিতে না পারায় ছেড়ে দিতে হয়। আগে থেকেই ডো ডো ছিল থেলাসেমিয়া রোগী। প্রতিমাসে রক্ত নিতে হত তার। এত খরচ কোথা থেকে আসবে। অনির্বাণের স্ত্রী রিনা মন্ত্রী অরিজিৎ মিত্রের কাছে যায় আর্থিক সাহায্যের আশায়। পরে অনির্বাণ জানতে পারে সন্তানের টাকার খরচ যোগাতে রিনা মন্ত্রীর গেস্ট হাউজে টাকার বিনিময়ে নিজেকে সঁপে দেয় মন্ত্রীর কাছে। অনির্বাণ রিনার ব্যপারটা জেনে গেলে রিনা আত্মহত্যা করে।
এদিকে অনির্বাণের আত্মহত্যা লাইভ দেখানোর জন্য মিডিয়াতে সাড়া পড়ে যায়, স্পন্সরদের লাইন লেগে যায়। কলকাতার নম্বর ১ চ্যানেলের মালিক সিদ্ধার্থ চৌধুরী তার চ্যানেল এডিটরকে নির্দেশ দিলেন সব তথ্য জানাতে। অনির্বাণ এর সুইসাইড ঘটনা তার উচ্চ দামে বিক্রি করতেই হবে। চ্যানেলের টি আর পি বলে কথা! এদিকে মন্ত্রী অরিজিতের সাথে সিদ্ধার্থের দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। যেকরেই হোক তাকে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে। সিদ্ধ্বার্থ তার চ্যানেলকেই বেছে নিলেন, অনির্বাণের বক্তব্য জনতাকে জানানোর জন্য। অরিজিতের ক্ষমতা চলে যায়। পরে গণধোলাইয়ে সে মারা পড়ে।
এদিকে লাখ লাখ জনতা অনির্বাণ এর সুইসাইড দেখতে মেট্রোরেল স্টেশনে হাজির হয়। অনির্বাণ চ্যানেলের মালিক সিদ্ধ্বার্থকে পিস্তলের মুখে মেট্রো রেলের লাইনের উপর দাঁড়ায়। আর জানায়, ১৯৭১ এর ২১ মে, অনির্বাণদের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিতে চেয়েছিল তাদের সহ বিপ্লবী শঙ্কর। পুলিশের কাছে টাকা নিয়ে পরে সে আমেরিকায় চলে যায় সিদ্ধার্থ চৌধুরী নাম দিয়ে। পালাতে গিয়ে গুলি খেয়েছিল সমর।
আজ মরার আগে অনির্বাণ বিশ্বাস ঘাতক শঙ্কর বা সিদ্ধার্থকে হত্যা করবে। অনির্বাণের শেষ কথাগুলো চ্যানেল মালিক শঙ্করের উদ্দেশ্যে, “বেচতে বেচতে ত কিছুই বাকি রাখিস নি। এই যে লোক গুলো এখানে এসেছে, তারা একটা মৃত্যু দেখতে চায়। ভিডিও করবে, ছবি তুলে বন্ধুদের পাঠাবে, বলবে, লাইক, শেয়ার, কমেন্ট। তারা খুশি হবে। এরা ভাবছে এটাই জীবন। কিন্তু এই জীবন আমরা চাই নি। এই স্বার্থপর সোসাইটি আমরা চাই নি।”
চ্যানেল মালিক সাবেক বিপ্লবী সিদ্ধার্থ বলে, “সব কিছুই পণ্য, সব কিছু আমি বিক্রি করবো।”
একজন প্রকৃত বিপ্লবীর বিপ্লবের রোমান্টিসিজম ও বাস্তবতার টানাপোড়েনে আদর্শ থেকে সাময়িক সরে যাওয়া কিংবা বিশ্বাস ঘাতক সঙ্গীকে খুঁজে বের করে সাজা দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টার গল্প “নকশাল”।
অনির্বাণের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিথুন চক্রবর্তী, সিদ্ধার্থ চরিত্রে ধীর্তিমান চ্যাটার্জীর দুর্দান্ত অভিনয় আপনাকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখবে শেষ পর্যন্ত।