‘নেক্রোনমিকন’- কালো জাদুর সেই মহাবিদ্যার বইয়ের খোঁজে

http://www.tamilwin.com

বহুকাল আগে থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন যায়গাতে আনাচে কানাচে কালোজাদু চর্চা হয়ে আসছে। তবে কালোজাদু চর্চা সাধারণত মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য করে থাকে। অতিরিক্ত, অবৈধ কিছু প্রাপ্তির আশায় এবং খুব সহজে হাসিল করার উদ্দেশ্যে করে থাকে কিছু অসাধু মানুষ। কালোজাদু মানুষের ক্ষতি সাধনই বেশি করে থাকে। বর্তমান বিশ্বে অলৌকিক শক্তি বা কালোজাদুর অস্তিত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন মত থাকলেও এর অস্তিত্ব আছে বলেই অনেকে স্বীকৃতি দেন। তাছাড়া সব ধর্মেই কালোজাদু সম্পর্কে বলা হয়েছে তবে ধর্মগ্রন্থে একে অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয় এবং এটি চর্চা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। তবু কুমতললবি মানুষ এর চর্চা করে আসছে।

বিশ্বে কালোজাদুর বই চোরা বাজারে সহজলভ্য। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে রহস্যময় বই হল নেক্রোনমিকন যা কালোজাদুর মহাবিদ্যা বা যাকে কালোজাদুর খনি বলা হয়। তবে রহস্যময় এই বইটি ঠিক কোথায় আছে সে সম্পর্কে কারো কাছে কোন তথ্য নেই। কিন্তু একটি বিশেষ মহলের ধারণা, বইটি এখনও কোথাও আছে, কোন নির্জন জনশূণ্য যায়গায় নিরাপদেই আছে। হয়তো পুরনো কোন লাইব্রেরির ধুলোজড়ানো তাকে অথবা মন্দিরের নিচে।

বিংশ শতকের শুরুর দিকে খ্যাতনামা মার্কিন লেখক এইচপি লাভক্র্যাফ্ট বইটিকে নিয়ে সরব হন। তিনি তার অসংখ্য গল্পে এই বই সম্পর্কে লিখতে শুরু করেন।এই বইটির নাম ‘নেক্রোনমিকন’। জানা যায়, বইটি আরবি ভাষায় লেখা। পরে এর গ্রিক অনুবাদ ইউরোপের রহস্যবাদী কাল্টগুলোর হাতে পৌঁছেছে।

ধারণা করা হয়, ‘নেক্রোনমিকন’ এর লেখক একজন আরব। তাঁর নাম আবু আলি আল-হাসান। তাকে দামাস্কে ‘আরব আবদুল’ বলেই ডাকা হতো। ইউরোপে তিনি ‘দ্যা ম্যাড অ্যারাব’ নামেই পরিচিত ছিলেন। কিন্ত তার আসল পরিচয় সম্পর্কে আজও জানা সম্ভব হয়নি। কিন্তু অনুমান করা হয়, তিনি ৮২৭ সালের দিকে জীবিত ছিলেন। ‘ইরাম’ নামে কোনো এক গোপন শহরে ১০ বছর থেকে তিনি এই গুপ্তবিদ্যার শিক্ষা নেন এবং তারপর তিনি ‘আজিফ’ ছদ্মনামে নেক্রোনমিকন বইটি লেখেন।

মধ্যযুগে ইউরোপে যখন ডাকিনীবিদ্যার চর্চা তুঙ্গে, তখন ‘নেক্রোনমিকন’ নিয়ে পাগলামি বিপুলভাবে দেখা দেয়। অসংখ্য মানুষ সন্ধান করতে থাকে শয়তানি বিদ্যার এই বইটির। ব্যস সুযোগ বুঝে বেশ কিছু নকলনবিশ ‘নেক্রোনমিকন’ নামে কল্পিত বই বাজারে ছাড়তে শুরু করে। তারপর অসংখ্য নকল ‘নেক্রোনমিকন’ এ ভরে যায় ইউরোপের গুপ্ত বইয়ের বাজবাজার।

১৯২৭ সালে লাভক্র্যাফ্ট ‘নেক্রোনমিকন’ কে নিয়ে একটি কল্প-ইতিহাসও লেখেন। ১৯৩৮ সালে তা প্রকাশিত হলে তুমল হইচই পড়ে যায় পাশ্চাত্যে। এরপর থেকে মাঝে মাঝেই এই বইয়ের কথিত খণ্ডাংশ, কল্পিত টীকাভাষ্য ইত্যাদি প্রকাশিত হতে শুরু করে। গুজব ছড়ায় যে জারতন্ত্রী রাশিয়ার কুখ্যাত জাদুকর রাসপুটিন, নাৎসি নেতা হিমলার, এমনকি স্বয়ং হিটলারও এটির একটি করে কপি হস্তগত করেছিলেন। তবে লাভক্র্যাফ্টের মতে, কোনোদিনই পুরো বইটিকে কেউ চাক্ষুষ করেননি। তবু আজও অনেকেই বিশ্বাস করেন, বিশ্বের কোথাও না কোথাও ‘নেক্রোনমিকন’ রয়েছে।
রহস্যময় বইটিতে কি আছে, তা কারো কাছেই স্পষ্ট নয়। তবে লাভক্র্যাফ্টসহ অসংখ্য সাহিত্যিক মনে করেন, এই বই কালোজাদুর এক খনি যাতে পিশাচ-জাগরণের পদ্ধতি থেকে শুরু করে মৃতকে জীবিত করার উপায় পর্যন্ত বর্ণিত রয়েছে। যে ব্যক্তি এই বইটি পড়তে সক্ষম হবেন, সে তার শয়তানি বিদ্যা দ্বারা মহাজগতের সব রহস্য নিজের হাতের মুঠোয় করতে সক্ষম হবে। তার হাতেই আসবে পৃথিবী শাসনের অগাধ ক্ষমতা বা শয়তানি রাজ্যভার।

অবশ্য সব ধর্মগ্রন্থেই বিশ্বজগতের মহাধ্বংসের আগাম বার্তা দেয়া হয়েছে যার জন্য মানুষই দায়ী। কারণ মানুষই ক্ষমতার লোভে, হিংসার বশবর্তী হয়ে একে অন্যকে ধ্বংসের নেশায় মেতে উঠবে শয়তানের সহায়তায়। কালোজাদুর বা গুপ্ত বিদ্যা চর্চার মাধ্যমে।
তথ্যসুত্র: ইন্টারনেট