“ঘরেতে এল না সে তো, মনে তার নিত্য আসা–যাওয়া— পরনে ঢাকাই শাড়ি কপালে সিঁদুর”। শাড়ি নিয়ে বাঙ্গালী মনের অন্যরকম টানের কথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখে গেছেন গত শতকে। শাড়ির সেই আবেদন এখনও একইরকম আছে।
ঢাকাই হোক, বা টাঙ্গাইলের, জামদানি বা মিরপুরী কাতান – শাড়ির প্রতি নাড়ির টান বাঙ্গালী মেয়েদের চিরাচরিত বৈশিষ্ট। যার ফল হচ্ছে ভয়াবহ – আলমারি ভর্তি শাড়ি, যার কোন কোনটা পরা হয়নি বহুদিন। আবার প্রিয় শাড়ি ফেলে দেওয়ার মত মনের জোরও নেই। আলমারির শাড়ি আলমারিতেই তোলা থাকুক, ভাঁজে ভাঁজে নষ্ট হোক। তারপর? রং বিবর্ণ হওয়া, ভাঁজে ভাঁজে ছেঁড়া শাড়ি একসময় মায়া ত্যাগ করে ফেলে দিতে হয়। একটু অন্যকিছু কি করা যায়? চেষ্টা কি করবো অন্যভাবে প্রিয় শাড়িটাকে একটু কাছে রাখতে, একটু ব্যবহার করতে?
আসুন দেখা যাক শাড়ির রকম-সকম অন্যরকম রূপ। ছবির এই গল্পের সবকিছুই পুরনো শাড়ি দিয়ে বানানো।
বিয়ের মৌসুমের লেহেঙ্গা-ড্রেস
চারপাশে এখন বিয়ের মৌসুমের সুবাতাস। সব অনুষ্ঠানের জন্য আলাদা কিছু কিনছেন? তার আগে নিজের সিন্দুক একটু ঘেঁটে দেখুন। আগের কোন কাতান শাড়ি বেকার পড়ে আছে? হলুদের জন্য কেনা কোন প্লেইন সিল্ক আছে একটা? সবগুলো ব্যাগে গুছিয়ে দর্জিবাড়ি ছুটুন। নিজের ইউনিক লেহেঙ্গা, ড্রেস, শাড়ির সাথে পরার লং জ্যাকেট তৈরি হয়ে যাবে, অনেক কম খরচে।
পার্টি ব্যাগ
নিজের হাতে পার্টি ব্যাগ অথবা বটুয়া বানানোর জন্য পুরনো শাড়ি ব্যবহার করার সুবিধা কয়েকটি। ঝলমলে শাড়ির কাপড়টাই ডিজাইন, আলাদা কোন লেইস অথবা পুঁতি বসাতে হবে না। আর একসাথে কয়েক বান্ধবী একিরকম ব্যাগ চাইলেও সহজেই বানানো যাবে, একটা শাড়িই যথেষ্ট।
ল্যাপটপ ব্যাগ
ধুলোবালি থেকে দূরে রাখার জন্য ল্যাপটপ কভার/ব্যাগের ব্যবহার এখন অনেক বেড়েছে। বাজারে সহজলভ্য কভারগুলো বেশীরভাগ দেখতে একই ডিজাইনের। প্রিন্টেড সুতি শাড়ি দিয়ে সেই কভারগুলো একটু “কভার” করে দিলে এক রঙ্গা ল্যাপটপ ব্যাগটার চেহারা পাল্টে যাবে। কমপ্লিট মেইকভার!
পর্দা
জামদানি, মসলিন, নেট, কাতান শাড়ি একটু আলাদা রূপে দেখে নেই। কাতান শাড়ির পাড় বসানো জামদানি পর্দা কিন্তু নিজের হাতে বানানো যায়। এরকম পর্দা অনেক বেশী রঙ্গিন, আর আলোর প্রতিফলন হয়ে ঘরেও বসবে রঙের মেলা।
কুশন
কুশন অথবা পিলো কভারের জন্য সিল্ক, কাতান, খাদি অথবা ভারী শাড়িগুলো বেশী উপযোগী। কয়েকটা শাড়ির আঁচল টুকরো করে জোড়া লাগিয়েও বানানো যায়।
শাল, ওড়না, হিজাব
একরঙা শারিতে পাড় বসিয়ে শাল, ওড়না, হিজাব বানানোর ট্রেন্ড আগে থেকেই ছিলো। গুগল মামাকে জিজ্ঞেস করে আরো নতুন কিছু আইডিয়াও নিয়ে নিতে পারেন। আর দুইদিক একসাথে একটু সেলাই করে পার্টিতে পরার উপযোগী কাফতানও বানাতে পারেন।
শাড়ি থেকে নান্দনিক ডিজাইনের টেবিল রানার, ওয়াল হ্যাংগিং ফ্রেম বানানো সহজ কারন শাড়ির নিজেরই আছে অপরূপ নান্দনিক কারুকাজ। একটু মাপমতো বানিয়ে নিলেই হলো।
আর জুতার বাক্স ফেলে না দিয়ে, শাড়ি দিয়ে মুড়ে নিয়ে জুয়েলারি বক্স বানালে কারো বোঝার সাধ্য নেই কি থেকে কি বানানো হলো। রিসাইক্লিং এর আরও মজার গল্প আরেকদিন হবে। এর আগে শাড়ি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চলতে থাকুক। কিন্তু সাবধান! নতুন, সুন্দর শাড়িগুলো কেটে ফেলবেন না। এসব এক্সপেরিমেন্ট শুধু পুরনো, ফেলে রাখা শাড়ির জন্য।
(এই লেখাটি Bold Ladies দের জন্য যারা নিত্য নতুন সব আইডিয়া দিয়ে জীবনকে আলাদা মাত্রা দিয়ে যাচ্ছেন। ভালো থাকুন সবাই, ভালো থাকুন সবাইকে নিয়ে।)