ফাইট ফর আ ডায়িং সিটি-দরজায় ছবি আঁকো, মৃত শহরকে বাঁচাও

শহরেরও জীবন আছে।আমাদের অলক্ষ্যে শহরের বয়স বাড়ে।ঠিকমত যত্ন না নিলে মরেও যায়!মানব সভ্যতায় অনেক বড় বড় শহর মরে গেছে এভাবে।

পড়ুন,কীভাবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া একটা শহর প্রাণ ফিরে পেয়েছিল আশ্চর্য এক শিল্পমাধ্যমের হাত ধরে।

পাহাড়ের কোল ঘেঁষে ছোট্ট ঘুম ঘুম এক শহর,নামটাই কেমন যেন মায়ায় জড়িত-

blankভালোরিয়া।ইতালিয়ান ভূমধ্যসাগরের পশ্চিম সৈকতের তীরে গড়ে ওঠা নির্জন এই শহরটি যৌবন পেরিয়ে চলে গিয়েছিল বার্ধক্যে ।আর সব ছোট শহরের মত এই শহরটিও নিষ্প্রাণ হয়ে যাচ্ছিলো।কাজের সন্ধানে সবাই পাড়ি জমাচ্ছিল মিলমে,রোমের মত বড় শহরে।এমন একটা সময় এল,যখন শহরের বাসিন্দা বলতে থেকে গেলেন মাত্র ৩০ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।ঝরা পাতার মত ধূসর হয়ে গেল শহরের রং।

কাজের সন্ধানে ভালোরিয়া ছাড়া তরুণদের একজন অ্যাংঙ্গেলো বালেস্ত্রা।মিলানে একটা বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করতেন।ছুটিছাঁটা পেলেই ছুটে আসতেন বাড়িতে।এমনকি একবার বাড়িতে ফিরে বুকটা তার হাহাকারে ভরে গেল শহরের জীর্ণ দশা দেখে,তার মনে হল শহরটির ইতিহাস কালের অতলে হারিয়ে যাচ্ছে।যে ভালোরিয়া প্রায় উৎসবে মেতে উঠতো,যে ভালোরিয়ার প্রতিটি মানুষের মনে লুকিয়ে থাকতো একটা শিল্পী সেই শহরই বৈধব্যের সাজ সেজেছে।

blankবালেস্ত্রা সিদ্ধান্ত নিলেন,এমন কিছু একটা করতে হবে যেন শহরের প্রফুল্লতা ফিরে আসে আবার।১৯৯১সালে গঠিত হল লে ত্রে ফন্তেন নামের স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। দুটো লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলঃ শহরটির সংস্কারের কাজ আর ছোট একটি জাদুঘর নির্মাণ।১৯৯২সালে আয়োজন করা হয় গ্রীষ্মকালীন উৎসব।প্রথম আয়জনেই দারুণ সাড়া।কিন্তু তাতেই সন্তুষ্ট হলেন না বালেস্ত্রা।এমন কিছু করতে চাইলেন যাতে পর্যটকরা শুধু আকৃষ্ট হবেন না,আলোচিতও হবে।পুরনো ঐতিহ্যের দ্বারস্থ হলেন বালেস্ত্রা।সিধান্ত নেওয়া হল শহরের প্রতিটি দরজা তুলে দেওয়া হবে শিল্পীদের হাতে।ক্যানভাস হিসেবে দরজাকেই ব্যবহার করবেন,সেখানেই আঁকবেন ছবি।

১৯৯৪সালের জুলাই মাসে প্রথম ডোর পেইন্টিং এর আয়োজন করা হল।স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি মিলান আর তুরিন থেকেও এলো শিল্পীরা।প্রথম আয়োজনে সব মিলে ১৮টি  দরজায় আঁকা হলো চিত্রকর্ম।এর মধ্যে বেশকিছু ছবি আলোচিত হলো।

blankমার্সেলোনা বনোমির আঁকা ম্যাডোনা অ্যান্ড চাইল্ড,ফেব্রিজিও এর বিস্মিত ছবি আলোচিত হলো বিশ্বজুড়ে শিল্পী সমাজেও।ধীরে ধীরে ভালোরিয়ার নাম ছড়িয়ে পড়ল সবখানে।বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে অনুরোধ আসতে লাগলো ছবি আঁকার সুযোগ করে দেওয়ার। ফ্লোরেন্সের আলেসান্দ্রা পুপ্পো যেমন বলেছেন,কাউকেই পারিশ্রমিক দেওয়া হয়না।কিন্তু ছোট্ট এই শহরে নতুন প্রাণ ছড়িয়ে দেওয়ার এই যে আয়োজন,তাতে শামিল হতে পারাও সম্মানের’।

blankএখন পর্যন্ত এভাবে ১২২টি দরজায় আঁকা হয়েছে।খুব বেশি দরজা আর বাকি নেই।প্রতি বছর ছয়-সাতটির বেশি দরজা তারা দিতে পারে না পেইন্টিং এর জন্য।কিন্তু প্রতি উৎসবেই অনেকগুলোর আবেদন আসে যাদেরকে না বলে দিতে হয়।এরকম বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা সুযোগ পাওয়া শিল্পীদের একজন যুক্তরাষ্ট্রের মিচেলিনা ক্রোটু।ইন্টারনেটে ভালোরিয়ার দরজার ছবি দেখার পর তিনিও আবেদন করেছিলেন।বেশ সময় নিয়ে এঁকেছিলেন ওরিগামী ফর পিস।নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন,ভালোরিয়ায় আমার অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ।যখন আঁকছিলাম গ্রামের সবাই এসে আমার কাজ দেখছিলো অত্যন্ত আনন্দ সহকারে।


জুলাইয়ে দরজা আঁকা উৎসব শেষে আগস্টে বিরাট উৎসব হয় ভালোরিয়ায়।যে উৎসবে স্থানীয় লোকদের সাথে মিশে একাকার হয়ে যান আমন্ত্রিত অতিথিরা।কিছু কিছু দিক দিয়ে ভালোরিয়া এখনও পরিবর্তন হয়নি।জনসংখ্যা এখনো ৪০।অচেনা এই শহরটি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। আর এভাবেই বেঁচে আছে ইতালির ভালোরিয়া।

আরো কিছু ছবি
blank

  blank