শিরোনাম টা দেখেই মনের ভেতর একটি কৌতুহল জেগে উঠতে পারে।কি হতে পারে এই পানামা পেপার্স??তবে চলুন, সত্যতা জেনে নেয়া যাক।
পৃথিবীর অন্যতম গোপনীয়তা রক্ষাকারী একটি প্রতিষ্ঠান, মোস্যাক ফনসেকো। যেটি পানামার একটি আইনি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। বিশ্বের প্রায় ৪২ টির বেশি দেশে এ প্রতিষ্ঠানের শাখা রয়েছে।এসব শাখায় কর্মরত রয়েছে ৬০০ এর অধিক কর্মী।
গতবছরের ৩ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে হঠাৎ করেই বেশ আলোড়ন তৈরি করে ফেলেছিলো এই প্রতিষ্ঠানটি।আলোড়ন তৈরি করাটাও ছিলো এক ধরনের স্বাভাবিক ঘটনা।তবে প্রশ্ন রয়েই যায়। কি এমন ঘটনা ঘটেছিলো যা নিয়ে এসময়েও চলছে তুমুল ঝড়??
ধারনা করা হয়, ১ কোটি ১৫ লাখ( যার মাঝে ৪৮ লাখ ই- মেইল, ১০ লাখ ছবি এবং ২১ লাখ পিডিএফ ফাইল) গোপন নথি ফাঁস করাটাই প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে সাহসিকতারর পরিচয়ক ।এমনকি ২০১০ সালে উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্যের চেয়েও কয়েক হাজার গুন বেশি।মোস্যাক ফনসেকার অভ্যন্তরীণ ডাটাবেজ থেকে ফাঁস হয় ১১ দশমিক ৫ মিলিয়ন নথি এবং ২ দশমিক ৬ টেরাবাইট তথ্য।
মূলত এসব নথিতে প্রকাশ পেয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের ক্ষমতার জোড়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের নানাবিধ অবৈধ কার্যকলাপের তথ্যচিত্র।অধিকাংশের বিরূদ্ধেই কর ফাকি দিয়ে বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ আনা হয়।১৯৭৭ সাল থেকে মোস্যাক ফনসেকা ফাঁকি দেয়ার নানা উপায় নিয়ে কাজ করছে এবং ক্ষমতাধরদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে আইনি ফাঁক ফোকরের মাধ্যমে জনগণের টাকার দুর্বৃত্তায়ন করেছে।
এ নথিতে বর্তমান ও সাবেক ৭২ জন রাষ্ট্রপ্রধান ও তাদের নিজ দেশের সম্পদ লুণ্ঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশ পায় । ১২৮ রাজনীতিক ও সরকারী কর্মকর্তার নামও রয়েছে।তাদের মাঝে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম না থাকলেও তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের নাম রয়েছে।তবে পুতিনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে রাশিয়া।এছাড়াও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মৌরিসও মাক্রির একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত থাকার গোপন তথ্য প্রকাশ করা হয়।তবে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টেরর মুখপাত্র বলেন, প্রেসিডেন্টেরর নামে কখনো কোন প্রতিষ্ঠান ছিলনা।নাম এসেছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামরনের প্রয়াত বাবার নামও।নাম এসেছে আইসল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দুই সন্তানের। সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ বিন আবদুল রহমান আল সৌদ, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এবং মিসরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের নামও আছে কর ফাঁকির তালিকায়।
অত্যন্ত উন্নতমানের প্রযুক্তির মাধ্যমে এই তথ্যগুলো তৈরি করা হয়েছিলো।এই নথিপত্র সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছিলো ২০১৪ সালের দিকে।ওয়্যারড রিপোর্টসের তথ্যমতে, এক ‘অজানা’ সূত্র ‘ স্যুডয়েশ যেইটং’ নামের এক জার্মান পত্রিকার প্রতিবেদনের সাথে বিশেষ এক আলাপের মাধ্যমে পুরো বিষয়ের আভাস পাওয়া গিয়েছিলো।এরপর এই ফাঁস হয়ে যাওয়া তথ্য নিয়ে কাজ করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্ভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের ডেভেলপাররা একটি বিশেষ সার্চ ইণ্জিন তৈরি করেন। দুনিয়াজোড়া বিভিন্ন পার্টনার পার্টনার সংবাদমাধ্যমের সাথে এই সার্চইন্জিনের তথ্য আদান প্রদান করা হয়।
পুরো বিষয়টি ছিলো একটি সম্মিলিত, দলীয় প্রচেষ্টা। আইসিআইজি, ফ্রান্সের ‘ লো ম্যঁদ ‘, আর্জেন্টিনার ‘ লা নাসিওন ‘, সুইজারল্যান্ডের ‘ সোন্টাগভযেইটং ‘ এবং যুক্তরাজ্যের ‘ গার্ডিয়ান ‘ ও ‘বিবিসি ‘ এই প্রকল্প নিয়ে বিশেষ ভাবে কাজ করেছে, যার সাথে জড়িত ছিল প্রায় ৪০০ সাংবাদিক।
আইসিআইজের ওয়েবসাইটে অর্থপাচারের তালিকায় থাকা ৪৫ বাংলাদেশি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার কথা জানানো হয়।যাদের অনেকেই বিদেশে নামে-বেনামে কোম্পানি খুলে কর ফাঁকি দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন। তবে বাংলাদেশের যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করবে দুর্নীতি দমন কমিশন।আলোচিত পানামা পেপারসে বাংলাদেশের ৩৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয়ে ওঠে দুর্নীতি দমন কমিশন।