মানুষ হয়েও যারা নিজেদের “গড” দাবি করতেন!

infinite-possibilitiesদেবতা বলতেই সাধারণত আমাদের মনে হয়  অনন্ত,পৃথিবী সৃষ্টির পূর্ব থেকেই  বিদ্যমান।যদিও সকলের ধারণা ঠিক এমনটাই নয়। ইতিহাস জুড়ে আমাদের মত কিছু মানুষেরাও দেবতার আসনে উন্নীত হয়েছেন।এমন কিছু মানুষ যাদেরকে পরবর্তীতে দেবতা হিসেবে মান্য করা হয় চলুন জেনে নি তাদের নিয়েই কিছু কথা।

জর্জ ওয়াশিংটন

আমেরিকানদের তাদের রাষ্ট্রপতির প্রতি অন্যরকম এক গভীর শ্রদ্ধা থাকলেও তারা কিন্তু তার পূজা করে না।জর্জ ওয়াশিংটন আমেরিকার সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতি এবং তিনি সর্বপ্রথম ব্যক্তি যিনি কিনা আমেরিকাকে একটি সুনির্দিষ্ট আকৃতি প্রদান করেন।যদি আমরা কখনো ওয়াশিংটন,ডিসি ক্যাপিটল এ যাই তবে একটি গম্বুজে এই মহান মানুষটির চেহারা দেখতে পাব।একে বলা হয় “এপোথিয়সিস অব ওয়াশিংটন”।ছবিটি এমনভাবে অঙ্কিত মনে হয় ওয়াশিংটন যেন স্বর্গে ভেসে বেড়াচ্ছেন।এই প্রতীকি স্থাপনাটি ওয়াশিংটনকে দেবতা হিসেবে উপস্থাপন করে এবং কামি নামক এক পূজা করা হয়।

জিড্ডু কৃষ্ণমূর্তি

ধর্মতত্ত্ব উনিশ এবং বিশ শতাব্দীর মাঝে অনেক জনপ্রিয় ছিল।কিছু দিব্যজ্ঞানীদের বিশ্বাস ছিল এমন যে মৈত্রেয় নামক একটি  আধ্যাত্মিক সত্তা এসে বিশ্বের নেতৃত্ব করবে।১৯১১সালে এক দিব্যজ্ঞানী ভাবে সে তাঁকে খুঁজে পেয়েছে। জিড্ডু কৃষ্ণমূর্তি একজন যুবক হিসেবে বিভিন্নরকম দিবাস্বপ্ন দেখতেন এবং মৃত  আত্মীয়দের নিয়ে রহস্যময় অভিজ্ঞতা ছিল।দিব্যজ্ঞানীরা তাকে ভারতে তার পরিবার থেকে সরিয়ে নিয়ে আসে এবং পশ্চিমে নিয়ে গিয়ে শিক্ষা দেয় কি কি উপায়ে বিশ্বের পরিবর্তন করা সম্ভব হবে। দুর্ভাগ্যবশত, মৈত্রেয় নামক বিশ্বাসটি ধর্মতত্ত্বে আসেনি এবং ১৯৩০ সালে এই ধারণা বাতিল করা হয়।তিনি একজন দেবতা ছিলেন এটি দাবি করা হয়না।

 প্রিন্স ফিলিপ

প্রিন্স ফিলিপকে অধিকাংশ মানুষ ব্রিটিশ রাণীর স্পষ্টভাষী সঙ্গী হিসেবে জানেন।অনেকেই জানে না তিনি একজন দেবতার ন্যায়।তান্না দ্বীপ নিয়ে এক কাহিনী আছে যে  পর্বত দেবতার ছেলে শক্তিশালী স্ত্রী সন্ধানে মহাসাগর পাড়ি দেন।গ্রামবাসীরা প্রিন্স ফিলিপকে দেখতে আসেন যিনি কিনা শক্তিশালী স্ত্রীর সন্ধানে আসেন এবং তাঁরা তাঁকে দেবতা হিসেবে ভাবতে থাকেন।প্রিন্স ফিলিপ আন্দোলনের অনুসারীদের এখনও আশা যে, তিনি তাদের মাঝে এসে বাস করতে শুরু করবে্ন।

এন্তিনাস

রোমান সাম্রাজ্য এ এটা বহুল প্রচলিত ছিল সম্রাটরা তাদের মৃত্যুর পর দেবতার মত স্থান পায়।বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সম্রাটদের মায়েরা, স্ত্রী ও শিশুরা ও দেবতা হয়ে আসে।সম্রাট হাদ্রিয়ান এন্তিনাস নামক এক তরুণকে তার প্রেমিকা হিসেবে গ্রহন করেন এবং সম্রাটের নিকট  এন্তিনাস যেন অন্যরকম এক শ্রদ্ধার বস্তু।সম্রাট এবং এন্তিনাস এর সম্পর্কটি অবিচ্ছেদ্য ছিল।যদিও কিছু কলঙ্কিত কাজকে লজ্জাজনক হিসেবে বিবেচনা করা হয় নি তখন।

খ্রিস্টাব্দ ১৩০  সালে এন্তিনাস এক সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে নাহলে ডুবে মারা যায়।তাকে কি হত্যা করা হয়?তিনি আত্মহত্যা করেন? নাকি সম্রাটের জন্য বলি দেওয়া হয় কিছুই জানা যায়নি।

যাই ঘটেছিল সেদিন জানা না গেলেও সম্রাট বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল।তিনি তার প্রেমিকার জন্য  এন্তিনোপোলিস নামক একটি দুর্গ স্থাপন করেন।

ইম্হোটেপ

পাথর কেটে বানানো হয়  ফেরাউন প্রাচীন স্থায়ী সোপানযুক্ত পিরামিড।যখন মিশরের ফেরাউনদের দেবতা হিসেবে ধারনা করা হয় তখন এই স্তম্ভটি একটি জনপ্রিয় দেবতা হিসেবে গণ্য করা হয়।ইম্হোটেপ ফেরাউনদের প্রধান উপদেষ্টা এবং দরবারের মধ্যে জ্ঞানী লোক ছিলেন।সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও তিনি আমাদের একটি দীর্ঘস্থায়ী উপহার, পিরামিড দিয়ে গেছেন যা কিনা একটি নতুন সভ্যতার প্রতিনিধিত্ব করে। ইম্হোটেপ মৃত্যুর ১০০ বছরের মধ্যে ওষুধের শক্তিতে তাকে অর্ধদেবতা হিসেবে মনে করা হয়।ইম্হোটেপ শুধুমাত্র ২,০০০ বছর পরে পারস্য সাম্রাজ্যের অধীনে পূর্ণ দেবতার অর্জন করেন।গ্রেকো-রোমান জগতে নাইলের সাথে সংলগ্ন তার মন্দিরটিতে মানুষকে দেখা যায় সাহায্য প্রার্থনা করতে তাঁর নিকটে।

 লউরেন্স ভরতুইযেন

লউরেন্স ভরতুইযেন একজন ডাচ জেলে ছিলেন যিনি কিনা লূ দে পালিংবার নামে পরিচিত ছিল।তিনি ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি হিসেবে দাবি করেন।পরিশেষে ১৯৩০ সালে উচ্চাভিলাষী এক বান্ধবীর  সঙ্গে পরিচয়ের পর তিনি একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছান। তাঁর সম্প্রদায় বৃদ্ধির সাথে সাথে লু এর বান্ধবী সকলের কাছে প্রেমের দর্শন হিসেবে ফুটে ওঠে।লু দাবি করেন তিনি ছিলেন অমর এবং রোগীদের সুস্থ করার ক্ষমতা ছিল।এই বিশ্বাসটি তখনই সমস্যা করে যখন একটি ১৪মাস বয়সী শিশু মারা যায় চিকিৎসা গ্রহণ না করার ফলে।লউরেন্স ভরতুইযেন নামক এই দেবতা ১৯৬৮সালে বেলজিয়ামে মারা যান।তা সত্ত্বেও, বেশ কিছু মানুষ এখনও লু এর প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং সারা বিশ্বে তার শিক্ষাগুলো আনতে একটি ওয়েবসাইট পরিচালনা করে।

হাইল সেলাসী

হাইল সীলাসী ইথিওপিয়া এর ২২৫তম ও শেষ সম্রাট ছিলেন। তিনি রাস তারাফি হিসেবে পরিচিত হন। রাস্টাফারিয়ান বিশ্বাসে দেবতা এবং যীশুখ্রীষ্ট অবতার হিসাবে পরিচিত হন।মার্কাস গার্ভি জ্যামাইকার মধ্যে কালো অধিকারের জন্য প্রচার শুরু করে।তিনি প্রচার করেন জে,আফ্রিকায় যখন কালো রাজা মুকুটে ভূষিত হবেন তখনি উদ্ধার সন্নিকতে।তার এই কথাটিকে ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে গ্রহণ করা হয়।১৯৩০সালে হাইল সীলাসী মুকুটে ভূষিত হন এবং মনে করা হয় মুক্তি যেন খুব নিকটেই। ১৯৩৪ সালে ইতালি ইথিওপিয়াকে আক্রমণ করে  এবং ১৯৩৬ সালে, সীলাসী নির্বাসনে যান।পরবর্তীতে ১৯৪১ সালে তিনি ইথিওপিয়া তে ফিরে আসেন। ১৯৬৬সালে সীলাসী জ্যামাইকা পরিদর্শন করে এবং বিমানবন্দরে হাজার হাজার রাস্টাফারিয়ান অভ্যর্থনা জানান। প্রত্যাশা ভেঙে  তার ঐশ্বরিক অবস্থা অস্বীকার করা হয়নি এবং সে রাস্টাফারিয়ান কেন্দ্রীয় একটি বিশ্বাসে অবস্থান করেন সবসময়। 

ফাদার এম.জে. ডিভাইন

ফাদার এম.জে. ডিভাইন ১৮৮০ সালের দিকে জন্মগ্রহন করেন।১৯২০ সালে তিনি একটি গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন এবং আফ্রিকান-আমেরিকানদের ধর্ম বার্তা প্রচার করেন।একসময় তাঁর প্রতিবেশীরা তাঁর সভা নিয়ে আপত্তি প্রকাশ করে এবং ফলপ্রসুত তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়।দুদিন কারাগারে থাকার পর ডিভাইন এর মামলার বিচারক মারা যায়।এই ঘটনা নিয়ে ফাদার ডিভাইন বলেন তিনি এই কাজটি করা খুব ঘৃণা করেন।মামলা এবং “ঐশ্বরিক শাস্তি” তাকে খ্যাতি এনে দেয়, এবং তার অনুসারীরা পৃথিবীর দেবতা বলে মেনে নেন।১৯১৫ সালে ফাদার ডিভাইন এর সর্বশেষ অনুসারী ২০জন এবং তারা সকলে ৭০ এর উপরে।