মৃত্যু। শব্দটা শুনলেই আমাদের বুকে ভয়ের কাঁপন ধরে যায়। আর যদি আপনাকে কেউ জীবন্ত কবর দেয়ার কথা বলে তাহলে তো কথাই নেই! কল্পনা করুন, আপনি বেঁচে আছেন, কিন্তু একদল মানুষ আপনাকে মাটিচাপা দিয়ে চলে গিয়েছে। এ অবস্থায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে কি ফিরে আসা যায়? সম্ভব আদৌ?
এখন আপনার প্রবেশ করতে যাচ্ছেন এরকমই এক লেখায় যেখানে আমরা তুলে ধরবো এরকমই কিছু ভয়াবহ সত্য ঘটনা। যা অবাস্তব মনে হলেও বাস্তবেই ঘটেছিল।
১। ফিলোমেলে জিনোত্রে
১৮৬৭ সাল। ফ্রান্সের ২৪ বছর বয়সী মেয়ে ফিলোমেলে জোনেত্রে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর কিছুদিন করার পরও তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। শুধু তাই নয়, একজন পাদ্রী এসে তার শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। এক ঘন্টা পর তাকে কফিনে ঢোকানো হয়। এর ৬ ঘন্টা পর তাকে কবরে সমাহিত করা হয়।
গোরখোদকরা ফিলোমেলেকে কবর দিয়ে চলে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে তারা কবর থেকে কিছু একটার শব্দ শুনতে পেল। তারা বুঝতে পারলো যে ফিলোমেলে তখনো জীবিত। প্রথমে তারা ভয় পেয়ে গেলেও দ্রুত এগিয়ে গেল। কবর খুঁড়ে ফেলে ফিলোমেলেকে উঠালো ও একজন চিকিৎসককে খবর দেয়া হলো।
তিনি এসে ফিলোমেলেকে পরীক্ষা করলেন। মেয়েটির হৃদস্পন্দন তখনো খুব ক্ষীণভাবে চলছিল। কফিনের গায়ে ক্রমাগত ধাক্কাধাক্কি করার ফলে তার হাতে ক্ষত তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তার নিঃশ্বাস এতই ধীর হয়ে চলছিল যে বোঝাই যাচ্ছিল না যে সে বেঁচে আছে কিনা। চিকিৎসক চেষ্টা করলেন মেয়েটিকে বাঁচানো যায় কিনা। হ্যাঁ, মেয়েটি আরো ১দিন বেঁচে ছিল। এরপর মেয়েটি মারা যায়। আগে থেকেই কলেরাতে আক্রান্ত হয়ে আর কফিনের ভেতরে আটকে থাকার আতঙ্কের জন্য সে এবার আসলেই চলে যায় না ফেরার দেশে!
২। ফেরাস দ্য ভাসকোনসেলসের লোকটি
সাও পাওলোর এক মহিলা একবার শহর থেকে নিজের বাড়িতে গেল, তাদের স্থানীয় কবরস্থানে নিজের প্রয়াত আত্মীয়দের আত্মার শান্তি প্রার্থনার জন্য। সময়টা ২০১৩ সাল। কিছুক্ষণ পরেই তিনি এক ভয়াবহ দৃশ্যের মুখোমুখি হলেন। দেখলেন, এক লোক তার কবর ফুঁড়ে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছে। তার এক হাত ও মাথা ইতিমধ্যেই কবরের বাইরে চলে এসেছিল। এখন সে চেষ্টা করছিল পুরো দেহকেই কবরের বাইরে নিয়ে আসতে।
দ্রুত গতিতে উদ্ধারকর্মীরা ছুটে আসেন ও লোকটিকে কবর থেকে উদ্ধার করেন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে জানা যায়, তিনি স্থানীয় সিটি হলে চাকরি করতেন। তিনি কিভাবে কবরে ঢুকে গিয়েছিলেন, তার ব্যপারে কখনোই কিছু জানা যায় নি। ধারণা করা হয়, কারো সাথে শত্রুতার জেরে তার এ পরিণতি হয়। তার ভাগ্নে পরবর্তীতে জানান যে, কবরে আটকে থাকার কারণে লোকটি ভয়াবহ মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়।
৩। ডংডং এর ছোট্ট শিশুটি
চীনের একটি প্রদেশের নাম ডং ডং। লি জিয়াউন এই প্রদেশেরই একটি কৃষি প্রধান গ্রামে বাস করতেন। তিনি ছিলেন সন্তান সম্ভবা। তাদের গ্রাম এতটাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছিল যে, সেখানে আধুনিক চিকিৎসা সেবা তখনো গিয়ে পৌঁছায় নি। যেকারণে তার প্রসবের সময় যে এগিয়ে আসছিল, সেটা নিয়ে আশেপাশের কারো ধারণা ছিল না। সবাই ভাবছিল গর্ভ ধারণের মাত্র ৪ মাস হয়েছে। কিন্তু হুট করেই লি’য়ের সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। নবজাতক শিশুটির দেহ ছিল প্রাণের চিহ্নবিহীন।
জিয়াউনের স্বামি বুঝতে পারছিলেন যে তার স্ত্রীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে, তাই তিনি শহর থেকে এম্বুলেন্স এনে স্ত্রীকে হাসপাতলে নিয়ে গেলেন। চিকিৎসকরা জানালেন তার স্ত্রীকে বাঁচানো সম্ভব। এদিকে জিয়াউনের শ্বাশুড়ি তার নাতনিকে মৃত ভেবে কবর দিয়ে দিয়েছিলেন। চিকিৎসকরা সব শুনে বললেন, কোন ডাক্তারকে না দেখিয়ে শিশুটিকে সমাহিত করা ঠিক হয় নি। জিয়াউনের স্বামী দ্রুত বেগে গ্রামে ফিরে গেলেন। কবর খুঁড়ে নিজের সন্তানকে বের করলেন। শিশুটির দেহে প্রাণের স্পন্দন ছিল তখনো! হাসপাতালে তিন দিন রাখার পর অর্থের অভাবে বাচ্চাকে নিয়ে জিয়াউন ও তার স্বামী হাসপাতাল ছেড়ে দিতে উদ্যত হন। কিন্তু ইতোমধ্যেই শিশুটির খবর মিডিয়াতে ব্যপকভাবে আলোচিত হয়, তাই জনগণ নিজেরা চাঁদা তুলে শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।
৪। নাটালিয়া পেস্তারনেক
এই তালিকার উদ্ভট ঘটনার মাঝে এটি একটি। নাটালিয়া সাইবেরিয়ার অধিবাসী ছিলেন ও প্রায়ই তার কুকুরকে নিয়ে স্থানীয় বনে যেতে ঘুরতে। একদিন বনে তাকে এক ভালুক আক্রমণ করে বসে ও এতে তার পা ভয়াবহভাবে যখম হয়। ভালুকটি তার পা ধরে টানতে থাকে ও আতংকে নাটালিয়া অজ্ঞান হয়ে যান। এরপর কি হয়? তাকে মৃত ভেবে ভালুকটি একটি গর্ত খুঁড়ে ও নাটালিয়াকে পুঁতে রাখে, যাতে পরে এসে তাকে খেয়ে ফেলা যায়। কিছুক্ষণ পর একদল শিকারীর সে পথে যাবার সময় গর্তের দিকে নজর পড়ে ও অস্বাভাবিক লাগায় তারা এগিয়ে যায়। গর্ত আর আবর্জনার ভেতর তারা নাটালিয়ার দেহের কিছু অংশ দেখতে পায়। ভালুকটি আশেপাশেই ছিল, সেটি এগিয়ে আসাতে শিকারিরা তাকে হত্যা করে ও নাটালিয়াকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। জ্ঞান ফেরার পর তার প্রথম প্রশ্ন, “ভালুকটাকে মেরে ফেলা হয়েছে কি?”
৫। এসি ডানবার
সাল ১৯১৫। সাউথ ক্যারোলাইনার এসি ডানবার মাত্র ৩০ বছর বয়সে এপিলেপটিক এটাকের শিকার হন। এরপর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তাকে সমাহিত করার প্রস্তুতি শুরু হলো। তার বোন অন্য শহর থেকে আসার কথা থাকায় শেষ কৃত্যানুষ্ঠান এক দিন পিছিয়ে দেয়া হলো।
পরের দিন অনেক বেলা হয়ে যাওয়ায় উপস্থিত আত্মীয়রা এসিকে দ্রুত সমাহিত করতে চাচ্ছিলেন। সমাহিত করার পর এসির বোন আসেন ও তার অনেক অনুরোধের প্রেক্ষিতে এসির কফিনের ডালা খোলা হয়। শেষ বারের মতো বোনকে দেখার ইচ্ছা। সবাইকে ভীত সন্ত্রস্ত করে এসি উঠে বসেন ও তার বোনের দিকে তাকিয়ে হাসি দেন। সবাই দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। এসিও তাদের পেছনে ছুটে যান ও অনেক কষ্টে বোঝাতে সক্ষম হন যে তিনি মৃত নন, জীবিত। এর পর বহু বছর অনেকেই তাকে “জম্বি” ভাবতো। যাই হোক, ১৯৬২ সালে অবশেষে সত্যিই এসি মারা যান।
নিজেকে কি এই মানুষগুলোর জায়গায় কল্পনা করতে পারেন?
ছবিঃ listverse