ইটপাথরের দেয়াল, তার ভেতরে থাকে রক্ত মাংসের মানুষ। মানুষ হলেও তাদের আমরা আলাদা করে রেখেছি, নির্বাসিত করেছি।আমি যাদের কথা বলছি তাদেরকে এই সমাজ পতিত করে রেখেছে। আমি সে সব যৌনকর্মীদের কথা বলছি, যাদের জীবন আটকে গেছে নিষিদ্ধ পল্লীর চারদেয়ালে।
রোজিনা গার্মেন্টসে কাজ করতো। সে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়েছিলো তারই এক কাকাতো ভাইয়ের সাথে। ঘটনা জানতে পেরে পরিবারের লোকজন তাকে মেরে আধমরা করে ফেলে যায় রাস্তায়। কোন চাকরী, মাথার ওপর ছাদ না পেয়ে শেষে সে আশ্রয় নেয় কান্দাপাড়ার যৌনপল্লীতে। আজ ও সে তার আয়ের সিংহ ভাগ পাঠিয়ে দেয় তার বাবার কাছে। সে আশায় আছে, কোন একদিন তারা তাকে ক্ষমা করে কাছে টেনে নিবে।
জুলির বাবা ছিলো তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। এক সড়ক দূর্ঘটনায় পা হারিয়ে ফেলেন তিনি। জ়ীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে নামলো জুলি। কোন পথ না পেয়ে দ্বারস্থ হলো নিষিদ্ধপল্লীর।সেই থেকে জুলি আছে সেখানেই। তার উপার্জনে চলছে তার পরিবার।
খুব অল্পবয়সে ধর্ষণের স্বীকার হয়েছিলো লিমা। তারপর আর সে জীবনের মূল স্রোতে ফিরে যেতে পারেনি। ১৫ বছরের লিমার দিন কাটে এখন ১০/১২ জন কাস্টোমারকে “সন্তুষ্ট” করতে করতে। এই অন্ধকার কি তার প্রাপ্য ছিলো?
২৬ বছরের দীপার চোখের জলে মিশে আছে হতাশা, ভয় দুশ্চিন্তা। তার চোখের জলের কারণ হচ্ছে তার গর্ভের অনাগত সন্তান যার বাবার নাম দীপার জানা নেই।
১৪ বছরের সালমার জন্মই হয়েছিলো যৌনপল্লীতে। ছোটবেলায় সে স্কুলে যেত কিন্তু তা বন্ধ হয়ে যায় কারণ মানুষ এক মুহূর্তের জন্যেও তাকে ভুলতে দিতো না যে তার মা একজন যৌনকর্মী। তারপর একসময় সেও একসময় পরিণত হয় যৌনকর্মীতে। এমন আরো অনেকেই আছেন যারা চাইলেও বের হয়ে আসতে পারছেন না এই অন্ধকারের চক্র থেকে।
এ জীবন বড্ড গ্লানির, বড্ড অপমানের। নিজের স্বপ্নগুলো ডাস্টবিনে ফেলে অন্যের হাতে পুতুল হয়ে বাঁচতে হয়।
তবুও তারা চলছে, শ্বাস নিচ্ছে, হাসছে। নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়ে যতটুকু আছে, ততটুকুতেই নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে তারা। বেঁচে আছে তারা।
ছবি ও তথ্যঃ ইন্টারনেট
বিঃদ্রঃ এই কনটেন্ট এর শিরোনাম লেখক হুমায়ুন আহমেদ স্যারের একটি বইয়ের নামের অনুকরণে দেয়া হয়েছে।