বিস্ময়কর লাল কাঠের বন: রহস্যময় গ্র্যাভিটি !

বৈচিত্রময় এবং সুন্দর এই পৃথিবী ভরপুর তার রহস্যেময়তায়। যেখানেই অপরুপ সৌন্দর্য দৃষ্টিগোচর হয়, সেখানেই সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ ছুটে যায়। কিন্তু নাছোড়বান্দা মানুষ প্রকৃতির এই আপন খেয়ালীপনা বা রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে কখনও নিজেই রহস্যের মাঝে বিলীন হয়ে যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন যায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন রহস্যময় স্থান, গুহা, বাড়ি, দালালকোঠা ও বন জঙ্গল। তেমনই একটি রহস্যময় বন হচ্ছে রেড উড ফরেস্ট।

এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিস্ময়কর এই রেড উড ফরেস্টের আয়তন প্রায় ১০০ বর্গ কিলোমিটার। এই বনের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ছোট নদ-নদী। নদীগুলোর উৎপত্তি সাগর, মহাসাগর থেকে। বনের পাশেই রয়েছে বিখ্যাত রেড উড ন্যাশনাল পার্ক। রহস্যে ঘেরা এ বনটি দেখতে সত্যিই অদ্ভূত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর। বনটি শুধু তার সৌন্দর্যের জন্যই বিখ্যাত নয়, এটি বিখ্যাত তার রহস্যময়তায় জন্যেও, যার অন্যতম হচ্ছে গ্র্যাভিটি।

এখানে রয়েছে বিভিন্ন রকম গাছপালা। এখানে রয়েছে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার ফুট উচ্চতার গাছ এবং হাজার বছরের পুরনো গাছ। এ বনের গাছগুলো বিচিত্রময় রঙের, লালচে, সবুজ, বাদামি, আকাশি রঙের। এ বনে প্রবেশের রয়েছে শত শত পথ এবং পথগুলো আশ্চর্যরকম লাল গালিচার ন্যায়। কারণ এ বনের মাটি লাল বর্ণের। এই লাল গালিচা বিছানো লাল কাঠের বনের মাঝে রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট ছাউনির ঘর। যেগুলোতে কাঠুরিয়ারা বসবাস করে। দর্শনার্থীরা বনে প্রবেশের আগে ন্যাশনাল পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। তবে বিভিন্ন সময়ে লাল কাঠের বনটি ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যকে ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডোসহ নানা বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে আসছে। রেড উড ফরেস্টের বনের হামবোল্ট পয়েন্ট ছাড়া বনটির বাকি স্থান বেশ নিরাপদ।

এতো গেল বনটির সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা, এবার এ বনের রহস্যময় এবং অদ্ভুত বিষয়গুলো হচ্ছে এ বনের ঠিক মাঝখানে রয়েছে হামবোল্ট পয়েন্ট। আর একে ঘিরে যুগ যুগ ধরে মানুষের রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কথিত আছে, হামবোল্ট পয়েন্ট থেকে ৫০ গজ দূরে গেলে কোনও মানুষ আর এ বন থেকে কখনও বেরিয়ে আসতে পারে না। জানা যায়, এ পর্যন্ত প্রায় ২০ জন লোক এ রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। অনেকে মনে করেন, যারা ফিরে আসেনি তারা ছোট ছোট রেড উড ট্রি হয়ে গেছেন। তবে স্থানীয় বন কর্মকর্তারা মনে করেন, হামবোল্ট পয়েন্ট থেকে ৫০ গজ পরেই রয়েছে চোরাবালি। আর এ বালিতে একবার পাঁ পড়লে ফিরে আসা নাকি সম্ভব নয় ! আসলেই চোরাবালির কারণেই কি এতখুলো মানুষ হারিয়ে গেছে নাকি অন্য কিছু রয়েছে এর নেপথ্যে?

এই যায়গাটি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল থেকে কোন অংশেই কম নয়। কারণ এই বনের ভেতরে একশ পঞ্চাশফুট প্রশস্ত এমন এক যায়গা রয়েছে যেখানে পদার্থ বিদ্যা ও অভিকর্ষের কোন সুত্রই খাটেনা। যায়গাটির নাম মিস্ট্রি স্পট বা রহস্যময় স্থান। এই স্থানে ঢোকার পরে কোন লম্বাটে মানুষকে তুলনামুলক খাটো অথবা লম্বাটে মানুষকে খাটো মনে হতে পারে। আবার অনায়াসে পেছনের শূণ্যের দিকে হেলে দেয়াল বেয়ে ওঠার সময়ে কেউ নীচে পড়ে যাবেনা।

blank

এখানে কম্পাসের কাটাও পাগলের মত ভুল দিক নির্দেশ করে থাকে। এখানে অনেকেই এসে নিজেকে খুব হালকা অনুভব করেন আবার অনেকেই ভেতরে অনেক চাপ অনুভব করেন। এ মিস্ট্রি স্পটের ভেতরে একটি কাঠের ঘর রয়েছে। এ যায়গাটির মালিক এই ঘরটি তৈরী করেছিলেন। এ ঘরটি তৈরি করার সময় তিনি লক্ষ্য করলেন ঘরটি বার বার হেলে পড়ছে ! শত চেষ্টা করেও তিনি ঘরটি সোজা করে তৈরি করতে পারলেন না। ফলে হাল ছেড়ে দিলেন ঘরটি এভাবেই রেখে দিলেন। এ ঘরটির দরজার সামনে কেউ দাঁড়ালে তাকে তুলনামূলকভাবে বাঁকা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে বলেই মনে হবে। এই জায়গাটিতে যারা বার বার এসেছেন তাঁরা বুঝতে পেরেছেন এই রহস্যময় ব্যাপারগুলো, আসলেই যায়গাটির চৌম্ববকক্ষেত্রে বড় ধরণের কোন গন্ডগোল আছে। ঠিক বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মত।
এই যায়গাটির মালিক যায়গাটি সমতল করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এই মিস্ট্রি স্পটে সমতল যায়গাকে অসমতল মনে হবে। আরেকটি আজব ব্যাপার যে, সাধারণত স্বাভাবিক নিয়মে উত্তর গোলার্ধের গাছগুলো বাঁকলে তা ঘড়ির কাঁটা দিকে বেঁকে থাকে। কিন্তু মিস্ট্রি স্পটের গাছগুলো উল্টো দিকে অর্থাৎ দক্ষিণ গোলার্ধের মত ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে বেঁকে থাকে। ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত তিনজন উদ্ভিদবিদের দাবি রয়েছে, এখানের গাছপালাগুলো এমন আচরণ করে যেন তারা পৃথিবীর বাইরে বা নিরক্ষরেখার অপর পাশে আছে। এখানের সমতল জায়গাগুলো দেখলে মনে হবে অসমান। এখানে যন্ত্রপাতিও ঠিকভাবে কাজ করেনা। উনিশশো ঊনচল্লিশ সালের দিকে যায়গাটির অভিকর্ষ বৈশিষ্ট্য জানতে প্রথম সার্ভে করা হয়, উনিশশো পঞ্চাশ সালের শেষের দিকে আবারও ক্যালিফোর্নিয়া থেকে তিনজন সার্ভেয়ার উপসাগরের দিকে সার্ভে করার জন্য আসেন। তখন তাঁরা একটি অবাক বিষয় খেয়াল করেন যে তাদের যন্ত্রপাতিগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না বা দিক নির্দেশনা দিচ্ছে না। অভিকর্ষের এই আজব অদ্ভূত আচরণের জন্যই একে মিস্ট্রি স্পট বলা হয়।

রেড উড ফরেস্টের এমন রহস্যময় , অদ্ভুত আচরণের কারণে যুগ যুগ ধরে এই বনটি আজও রহস্যময় রয়ে গেছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে বিজ্ঞানীরা এ রহস্য উদ্ঘাটনে সক্ষম হবে।

তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট