পরিবহণে যৌন হয়রানি থেকে পরিত্রাণে আপনার করণীয়?

বাসে লোকের ভীড় দেখে আপনি নিশ্চিন্তে বাসে উঠে গেলেন। কিছুক্ষণ পর দেখলেন যাত্রীরা একের পর এক নেমে যাচ্ছে, কোথাও আবার বাসের হেলপার ইচ্ছাকৃত ভাবেই নতুন করে যাত্রী নিচ্ছে না অথবা আগের যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে। হয়তো এ ঘটনা আপনার কাছে স্বাভাবিক লাগতেই পারে যতক্ষণ পর্যন্ত না অপ্রীতিকর কোনোকিছুর সম্মুক্ষীন হচ্ছেন। যখন আপনার খেয়াল হলো যে অস্বাভাবিক কিছু একটা হতে পারে কিংবা বাসের লোকগুলোর হাবভাব ভালো ঠেকছে না এবং তৎক্ষণাৎ বাস থেকে আপনি নেমে যাবার চেষ্টা করবেন ঠিক তখনই দেখতে পেলেন বাসে থাকা দু একটা মানুষের অদ্ভুত পরিবর্তন। বাসের হেলপার গেট আগলে রেখেছে অথবা গেট লক করার চেষ্টা করছে, এমনকি ড্রাইভারও গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে অথবা যেখানে যাওয়ার কথা ছিলো সেদিকে না গিয়ে গন্তব্য দিক পরিবর্তন করছে। তখন আপনার করণীয় কি হতে পারে সেটা ঠিক করাটা ওই সময় আপনার পক্ষে অগ্নিপরীক্ষার সমতুল্যই মনে হবে। মাত্র কয়েকটি উপায় থাকে আত্মরক্ষা করার। প্রথমত, চড়া গলায় ড্রাইভারকে গাড়ি থামানোর কথা বলা, দ্বিতীয়ত হেলপারকে পাশ কাটিয়ে বাসের গেট পর্যন্ত যাওয়া আর সর্বশেষ চলন্ত বাস থেকে লাফ দিয়ে আত্মরক্ষা করা।

যেসব নারীরা এই ধরণের ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পোস্ট ও কয়েকটি মামলার বয়ান থেকে উপরের দৃশ্যপটটি পাওয়া যায়। কিন্তু এই ঘটনাগুলোকে আর বাড়তে দেওয়া যাবে না। বাসে অবস্থানকালীন সময়ে যদি এমন কোনো ঘটনার ইঙ্গিত বুঝতে পারেন তবে তাৎক্ষণিকভাবে আপনার কিছু একটা করণীয় নির্ধারণ করতেই হবে। আর উত্তেজিত বা অধিক ভীত হয়ে এমন কিছু করা উচিত না যা আপনার বিপদকে আরো বাড়িয়ে দেবে। আপনি যদি ড্রাইভারকে বাস থামাতে বলেন তাহলে পরিবহণ শ্রমিকরা বুঝে যাবে আপনি কিছু টের পেয়েছেন। এক্ষেত্রে তারা আপনার কথা নাও শুনতে পারে যেরকমটা আমরা সম্প্রতি ঘটনাগুলোতে লক্ষ্য করেছি।উল্টো তারা আরো ভয়ানক হয়ে যেতে পারে। পরিণামে আপনার সাথে ঘটতে পারে অপ্রীতিকর ঘটনা। আরো বেশি ভয়াবহ ঘটনা হচ্ছে চলন্ত বাস থেকে লাফ দেওয়া। কারণ ভযে অনেক নারীই চলন্ত বাস থেকেই লাফ দেয়। রাজধানীর যানজটে বাস আটকে থাকলে সেটা অন্য কথা কিন্তু চলন্ত বাস থেকে লাফ দেওয়ার সময় আপনি মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।

এক্ষেত্রে আপনি কি করবেন সেই সময়?

নিশ্চয় জানেন সম্প্রতি ৯৯৯ নামে একটি সেবা চালু হয়েছে যা বাংলাদেশ পুলিশের অধীনে পরিচালিত হয়ে থাকে যেখানে জরুরি পুলিশ, জরুরি ফায়ার সার্ভিস ও জরুরি এ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হয়। দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে যে কোন ব্যক্তি ৯৯৯ কল করার মাধ্যমে এ সকল জরুরি সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। ৯৯৯ টোল ফ্রি নাম্বার। অর্থাৎ এই নাম্বারে কল করার জন্য আপনাকে কোন টাকা খরচ করতে হবে না। আপদকালীন সময়ে যদি আপনার কাছে কোনো থানা কিংবা ওসিদের নাম্বার না থাকে সেক্ষেত্রে ৯৯৯ নাম্বারে কল নাম্বারে কল দিয়ে আপনার বর্তমান অবস্থা ও কোন রুটে আছেন কিংবা কোনদিকে বাসটি যাচ্ছে তা জানিয়ে দিতে পারেন। সম্প্রতি ৯৯৯ নাম্বারে যোগাযোগ করে এক ধর্ষককে আটক করার মতো ঘটনা ঘটেছে। সেক্ষেত্রে বলা যায় এ সেবাটি সেই জরুরি সময়ে বা যেকোনো সময় আপনার কাজে লাগতে পারে।

তাছাড়াও আপনি নিয়মিত যেসব রুটে যাতায়াত করেন কিংবা নতুন কোনো রুটে যাতায়াতকালে সে রুটের নিকটস্থ থানার কর্মকর্তাদের মোবাইল নাম্বার অবশ্যই নিজের সংগ্রহে রাখুন। কেননা যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে এসব নাম্বার আপনার কাজে দেবে। যেকোনো অন্যায় প্রতিহত করতে আপনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা নিতে পারবেন।

আপনাদের সুবিধার্থে রাজধানীর আওতাধীন থানা গুলোর ওসিদের মোবাইল নাম্বার দেওয়া হলো- রমনা থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১২৫, ধানমন্ডি থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১২৬, শাহাবাগ থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১২৭, নিউ মার্কেট থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১২৮, লালবাগ থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৩৪, কোতয়ালী থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৩৫, হাজারীবাগ থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৩৬, কামরাঙ্গীরচর থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৩৭, সুত্রাপুর থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৪৩, ডেমরা থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৪৪, শ্যামপুর থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৪৫, যাত্রাবাড়ী থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৪৬, মতিঝিল থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৫২, সবুজবাগ থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৫৩, খিলগাও থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৫৪, পল্টন থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৫৫, উত্তরা থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৬১, এয়ারপোর্ট থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৬২, তুরাগ থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৬৩, উত্তরখান থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৬৪, দক্ষিনখান থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৬৫, গুলশান থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৭১, ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৭২, বাড্ডা থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৭৩, খিলক্ষেত থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৭৪, তেজগাও থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৮০, তেজগাও শি/এর থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৮১, মোহাম্মদপুর থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৮২, আদাবর থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৮৩, মিরপুর থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৮৯,  পল্লবী থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৯০, কাফরুল থানার ওসির নাম্বার- ০১৭১৩৩৭৩১৯১।

আপনি কারো সাথে যোগাযোগ করছেন এ ব্যাপারটি পরিবহণ শ্রমিকদের বুঝতে দেওয়া যাবে না। যথেষ্ট সাবধানতা ও উপস্থিত বুদ্ধি প্রয়োগ করে যেমন নিজেকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করবেন তেমনি সেসব অপরাধীদেরও ছাড় দেবেন না। আপনার অভিজ্ঞতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে প্রকাশ করুন। এতে করে আপনার অভিজ্ঞতা আরো অনেক মানুষকে যৌন হয়রানির মতো অপরাধের কবল থেকে রক্ষা করবে। সাবধানে থাকুন, সচেতন থাকুন।