বিষ শুধুমাত্র সাপ ও সরীসৃপের অস্ত্র নয়,আমাদের চারপাশের বিভিন্নরকম গাছের মাঝে এই বিষ থাকে।এগুলো তাদের জন্য একরকম আত্মরক্ষার প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়।অনেক মানুষ এসব গাছপালার অংশ খেয়ে যতটা মারা গেছে তার চেয়ে বেশি তাদের সংস্পর্শে মারা গেছে।চলুন জেনে নি এমন কয়েকটি গাছের নাম ও তাদের পরিচিতি –
ক্যাস্টর বীন
ক্যাস্টর বীন থেকে ক্যাস্টর অয়েল প্রস্তুত করা হয় যা আমাদের সকলের কাছে খুবই পরিচিত।ক্যাস্টর অয়েল রান্নার কাজে এবং ওষুধ তৈরিতে ব্যাপক ব্যবহৃত হয়।এছাড়াও এ গাছটি এমন একটি ক্ষতিকর পদার্থ উৎপন্ন করে যা সাপের বিষ থেকেও ক্ষতিকর।এটি বীনের মধ্যে থাকে।শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ক্ষতিকর।বীজ খাওয়ার ফলেও ক্ষতি হতে পারে।এর ফলে বমি এবং দুর্বলতা অনুভব হয়।পরবর্তীতে এটি কিডনিকে অকেজো করে এমনকি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।
সুইসাইড বৃক্ষ
ভারতের কেরালা রাজ্যে প্রতি বছর প্রায় পঞ্চাশ জনের হতাহতের কারণ সুইসাইড বৃক্ষ।এটি অনেকটা অলেন্দার এর মতই,সারবেরিন নামক এক প্রকার শক্তিশালী টক্সিন থাকে যা হার্টের জন্য ক্ষতিকর।গাছটি আত্মহত্যা এবং অন্যান্য খারাপ কাজের জন্য কুখ্যাত।মশলাযুক্ত খাবারের মধ্যে এটি ব্যবহার করা হয়।গাছটি দক্ষিণ ভারতে বেশি পরিচিত।
একোনাইট
একোনাইট গাছটি বিভিন্ন রকম অশুভ নামে (শয়তানের শিরস্ত্রাণ)বিখ্যাত।অনেক ক্ষেত্রেই এটি বিষের রানী হিসেবে পরিচিত।বিষাক্ত একোনিটি মানুষের মৃত্যুর জন্যও দায়ী।একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ এর ছোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং এর বিষাক্তটা এতোটাই ভয়ানক যে এই বিষক্রিয়ার প্রভাবে ডায়রিয়া থেকে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা হয়ে মৃত্যু হতে পারে।এ গাছটি প্রধানত উত্তর গোলার্ধে পাওয়া যায়।
নাইটশেড
টমেটো এবং আলুর মতই কাছাকাছি জাতের নাইটশেড।এই গাছটির সব অংশই বিষাক্ত তবে এর শিকড় আর ফল বেশি বিষাক্ত।এত্রপাইন,স্কপোলামাইন,সিয়ামাইন নামক বিষাক্ত পদার্থ থাকে এতে।এটি স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতিসাধন করে।এই উদ্ভিদের বিষক্রিয়ার প্রভাব বেশ কয়েকদিন পর বোঝা যায়।হৃদযন্ত্রের সমস্যা,ঝাপসা দৃষ্টি ইত্যাদি এর প্রধান লক্ষণ।অতিরিক্ত বিষ মানুষের মৃত্যুর কারণ ও হতে পারে।
হোয়াইট স্নেকাররুট
হোয়াইট স্নেকাররুট নর্থ আমেরিকায় প্রধানত পাওয়া যায়।কথিত আছে আব্রাহাম লিঙ্কন এর মা ন্যান্সি হ্যাঙ্কস লিঙ্কন এর মৃত্যুর কারণ এই গাছটি।ত্রিমেটম নামক রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতিতে এটি বিষাক্ত।বিষের প্রভাবে অধিক বমি মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।সাপের কামড়ের প্রতিকার হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয় আর স্নেকাররুট নামটি এখান থেকেই উদ্ভূত।
এঞ্জেল’স ত্রাম্পেট
দক্ষিণ আমেরিকার ক্রান্তীয় অঞ্চলের এঞ্জেল’স ত্রাম্পেট একটি অন্যতম বিষাক্ত গাছ।তাদের নামানুসারে তারা বৃহৎ ঝোপঝাড়ের সমন্বয়ে হয়।এরা বিভিন্ন রঙের হয় এবং ত্রপেন,স্কপোলামাইন নামক বিষাক্ত পদার্থ থাকে।এই বিষের প্রভাবে ডায়রিয়া,পেরালাইসিস হয়ে থাকে,অতিমাত্রার ফলস্বরূপ মৃত্যু হতে পারে।
অলেয়ান্দার
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার জেরিকো রোজ, করবী নামেও পরিচিত অন্যতম একটি বিষাক্ত উদ্ভিদ।এর শিকড় থেকে শুরু করে সর্বত্র বিষ ছড়ানো।বিভিন্ন রকম টক্সিন যেমন অলেন্দ্রিন এবং নেরোসাইদের উপস্থিতি অন্যান্য উদ্ভিদের প্রাণঘাতীর স্বরূপ।এই উদ্ভিদের ক্ষতিস্বরূপ বমি,ডায়রিয়া হতে পারে।কথিত আছে যে, একটি জ্বলন্ত করবীর কাছে ধোঁয়া পর্যন্ত বিষাক্ত হয়ে যায়।
ওয়াটার হেমলক
সবচেয়ে বিষাক্ত এক গাছ হেমলক,যা গ্রীক দর্শনের মহান সক্রেটিসের কথা মনে করিয়ে দেয়।প্রাচীন এই দার্শনিক কে হেমলক বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হয়।বিভিন্ন রকম হেমলক রয়েছে যার মধ্যে ওয়াটার হেমলক বেশি কুখ্যাত।গাছটিতে এমন সব টক্সিন থাকে যার ফলে স্নায়ুতন্ত্রের ব্যপক ক্ষতিসাধন হয়।এটি এতোটাই ক্ষতিকর যে কেউ যদি বেঁচেও যায় তবু এম্নেসিয়া নামক রোগ থেকে মুক্তি পাবে না।
Comments are closed.