নাম- দ্য ভিঞ্চি কোড
লেখক- ড্যান ব্রাউন
২০০৩ সালের ১৮মার্চ প্রকাশিত আমেরিকান লেখক ড্যান ব্রাউন এর রচিত দ্যা ভিঞ্চি কোড সর্বকালের সেরা বিক্রিত বইগুলোর একটি।বহু স্তরবিশিষ্ট সিক্রেট আর পাজলের সমন্বয়ে গড়া জটিল প্লটের এই অসাধারণ থ্রিলার বইটি।বইটি পড়তে কখনো কখনো নাড়িস্পন্দন বেড়ে যাবে,শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা হবে।এই বই এখন পর্যন্ত ৫২টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।এটি একটি শিল্প ইতিহাসভিত্তিক বই যা আপনার বিশ্বাসের মূল অন্বেষণ করতে আগ্রহী করে তোলে।
এবার আসি গল্পের কথায়। গল্পের শুরু হয় প্যারিসের লুভর মিউজিয়ামের কিউরেটরের মৃত্যুর মধ্যদিয়ে। বিভৎসভাবে মৃত্যু হয় তার। কিন্তু তার ভেতরেও থেকে যায় রহস্য। অদ্ভুতভাবে একধরণের চিহ্ন রেখে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।বোকা বনে যায় পুলিশ। ঘটনাচক্রে মৃত্যুটির সাথে জড়িয়ে পড়েন হারভার্ড ইউনিভার্সিটির সিম্বলজির প্রসেফর রবার্ট ল্যাংডন। প্রচ্ছন্নভাবে খুনের দায় গিয়ে পড়ে তার উপর। সাহায্য করতে এগিয়ে আসে একজন মহিলা পুলিশ। তারপর শুরু হয় অভিযান। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার অভিযান। আস্তে আস্তে কিছু আশ্চর্য সত্যের সম্মুখিত হতে থাকে ল্যাংডন। বেরিয়ে আসে কিছু সত্য যা আগে কেউ জানতো না। চরম এক ষড়যন্ত্রের জালে জড়িয়ে পড়ে সে।
ইতিহাস, পুরান, শিল্প, সব মিলিয়ে লিখেছেন।হাজার বছরের একটি সিক্রেট লুকিয়ে ছিল একটি গোষ্ঠীর কাছে। তারা একটি গুপ্তসংঘ। যে গুপ্তসংঘের সদস্য হয়ে সিক্রেট লালন করে আসছেন লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, আইজ্যাক নিউটন,ভিক্টর হুগো,বত্তিচেল্লীর মত জগদ্বিখ্যাত মানুষজন।
কালক্রমে এই গুপ্তসংঘের মাত্র চারজন মানুষ এর কাছে ছিল এ সিক্রেটটি লুকোনো।যারা সিক্রেটটিকে রক্ষা করে চলেছিলেন। সবাই একসাথে এক রাতে খুন হয় একই খুনীর হাতে। খুনগুলো হয় হাজার বছর ধরে টিকিয়ে রাখা সেই সিক্রেটটিকে প্রকাশের দাবীতে।খুন হওয়ার আগে এক সিক্রেট রক্ষাকারী অসামান্য দ্ব্যার্থের মাধম্যে সিক্রেটটি হস্তান্তর করে যান তারই বংশধরের কাছে। সিক্রেট টি সরাসরি কারো হাতে তুলে দেওয়া হয়নি, দেওয়া হয়েছিল সূত্র, গোলকধাঁধা, সিক্রেটটিতে পৌঁছনোর জন্য।কেনই বা হাজার বছর ধরে একটি সিক্রেট সোসাইটি সেই সত্যকে সঙ্গোপনে লালন করে আসছে, যে সোসাইটির সদস্য ছিলেন আইজ্যাক নিউটন, ভিক্টর হুগো, বত্তিচেল্লি আর লিওনার্দো ডা ভিঞ্চির মতো ব্যক্তিবর্গ।
সিক্রেট হস্তান্তরের মাধ্যমটি নিয়েই আবর্তিত হতে থাকে কাহিনি। ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়েন একজন সিম্বলজিস্ট,মূলত যাকে ঘটনায় ইচ্ছাবশতই জড়িয়েছিলেন স্বয়ং খুনের শিকার চার জনের মাঝে একজন। সিম্বলজিস্ট এবং যাকে সিক্রেট হস্তান্তর করা হয় তারা দুজন মিলেই ইতিহাস, ক্রিপ্টোগ্রাফি, এবং আরো নানারকম কোডব্রেকিং মাধ্যমে বিপুল বাধা বিঘ্নের মধ্য দিয়ে পৌঁছতে থাকেন সিক্রেট উদঘাটনের দাড়প্রান্তে। শেষ পর্যন্ত, সেই সত্যটা কী—আর পৃথিবীবাসী কি সেই সত্যটা জানতে পেরেছিলো তারই উত্তর নিহিত আছে দ্য দা ভিঞ্চি কোড-এ।
শ্বাসরুদ্ধকর, নাড়িস্পন্দন বাড়িয়ে দেওয়া, ইত্যাদি এসব শব্দগুলো অনায়াসেই যায় বইটির সাথে। বইটি পড়ে যে ইতিহাস, যে জ্ঞান পাওয়া যায় সেটা মোটেই ফেলনা নয়।বইয়ের একদম শুরুতে কিছু তথ্য দেওয়া আছে যে, এই বইয়ে উল্লেখিত সমস্ত শিল্পকর্ম, স্থাপত্যশৈলী, দলিল-দস্তাবেজ আর গুপ্ত-ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের বিবরণ একেবারেই সত্যি। যদি এই কথাটা সত্যি হয় তবে বলতে হবে এর থেকে ভালো থ্রিলার আর কিছু হতে পারে না। যদিও এসব কারণেই বইটি অনেক সমালচিত হয়েছে।তবে যাই হোক প্রায়োরি অব সাইওন, ওপাস দাই, হলি গ্রেইল, ম্যারি মাগদালিন, ক্রিপ্টোলজি সব মিলিয়ে চমৎকার একটা থ্রিলার।
লেখকঃ ফাহমিদা নাসরিন। বাংলাহাব টিম।