পুরো ঘর জুড়ে আবছা আঁধারের রাজত্ব। শুধু বিছানার পাশ ঘেঁষে থাকা ড্রেসিংটেবিলটা যেন একটু আলো ভিক্ষে চাইছিলো। আর তার আকুতিতে সাড়া দিয়ে সেখানটাই রাখা হয়েছে ছোট্ট একটি মোমবাতি। মোমের লালচে আভা বিছানায় এলিয়ে থাকা নিথর দেহটির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। ইজি চেয়ারের কটমট শব্দ চলছে তার নিজ ছন্দে। আর সে চেয়ারে বসে আছে উষ্কখুষ্ক চুলের, তির্যক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকা এক মানব। তার পুরো চোখ জুড়ে রয়েছে এলিয়ে পড়ে থাকা দেহটি।
-“তুমি কি জানো, তোমায় আজ কতটা সুন্দর লাগছে? ঠিক যেমন আমি তোমায় প্রথম দেখেছিলাম তোমাদের গ্রামে ঠিক সেরকমটি লাগছে তোমায়। প্রথম দেখাতেই মনের ক্যানভাসে সাত রঙ্গে রাঙ্গিয়ে নিয়েছিলাম তোমার ছবি।হঠাৎ পেছন থেকে একজন রোশনি বলে ডাক দিলে তুমি ঘুরে তাকাও।তখন শুধু একটা কথায় আমার মন বার বার বলে যাচ্ছিলো, তুমি আমার জীবনের রোশনি, তোমাকে আমার চাই আমার চাই। খবর নিয়ে জানতে পারলাম, তোমার বাবা-মা নেই, কাকা-কাকীর কাছে মানুষ । টাকার কচকচে গন্ধ তোমার কাকা-কাকীকে বশ করে নিতে খুব একটা সময় নেই নি। কিন্তু তোমার চোখ-মুখ স্পষ্টভাবে জানান দিচ্ছিলো তোমার আমাকে পছন্দ হয়নি। কেন পছন্দ হয়নি আমাকে? কেন? “
চেয়ার থেকে উঠে পাগলে মতো পড়ে থাকা দেহটির হাত ধরে চিৎকার করতে থাকে জয়।
-” তোমার খুব লেগেছে বুঝি? কি করবো বলো, তোমার চোখে আমার জন্য ঘৃণা ছাড়া আর কিছু যে আমি দেখতে পাইনি। তোমার চাহনী বারবার আমকে বলে যায়, তুমি আমায় ভালোবাসোনা। কেন তুমি আমায় ভালোবাসনা? একটু ভালোবাসলে কি হতো? তখন তো আর এই দিনটা দেখতে হতোনা। তোমাকে তো বলাই হয়নি। আমার প্রথম স্ত্রী মিলা, তাকে মেরে ফেলার পর তার নিথর শরীরটিও ঠিক এইভাবে পড়ে ছিলো। বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরেছিলাম। সেও যে আমাকে তোমার মতোই ঘৃণা করতো। দেহটি চাপা দিয়ে রেখেছি ঐ গোলাপ গাছটির তলায়। সেই গাছের গোলাপ বহুবার গেঁথে দিয়েছে তোমার চুলে।তোমায় কিন্তু আমি অতো কষ্ট দিয়ে মারিনি। শরবতের সাথে বিষ মিশিয়ে রেখেছিলান। আর আমি খেতে বললে তুমি না করতে পারবেনা সেতো আমার জানা ছিলো।আমাকে যে ভালোবাসবেনা তাকে দরকার নেই বেঁচে থাকার। তোমাকে শেষ একটি কথা বলে যাই। গ্লাসটি দেখতে পাচ্ছ? এতে রাখা শরবতের মধ্যেও আমি বিষ মিশিয়ে রেখেছি। একটু পর পুরোটার প্রবেশ ঘটবে আমার শরীরে।জানো তো, নিজের প্রতি মায়াটা আর নেই। তাই নিঃশেষ করে দেবো এই মাটির দেহ। “
মুহূর্তের মধ্যে জলে মেশানো বিষের সবটাই পৌঁছে গেছে জয়ের শিরায় শিরায়। ধীরে ধীরে পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে। চোখের দৃষ্টি হয়ে আসছে ক্ষীণ। ধপ করে মাটিতে পড়ার শব্দ। কিন্তু জয় ভুল দেখছেনা। রোশনি তার সামনে দাঁড়িয়ে।
-” তোমার মতো অপরাধীরা নিজেকে যতই চতুর ভাবুক না কেন তাদের অপরাধের কিছু চিহ্ন তারা রেখেই যায়। তুমি যখনি জঘন্য কিছু করতে যাও তার কিছুদিন আগে থেকেই তোমার বীভৎস রূপ তোমার চেহারায় ফুটে উঠে। আমাকে রুমে তালাবন্ধ রেখে তুমি পাশের রুমে গিয়ে নিজেকে শোনাও সেই অপরাধের বর্ণনা। তোমার বীভৎস চোখ দুটো আমায় বলে দিচ্ছলো আমার সাথে ভয়ানক কিছু ঘটতে চলেছে। তাই আমি টেপ-রেকর্ডারটা আগেই সেই রুমে রেখে এসেছিলাম। আমার জন্য রাখা বিষের শিশিতে বিষ ফেলে ভরে রেখেছিলাম মধু। গ্রামের মেয়ে। সাঁতরে বড় হয়েছি। ডুব সাঁতারের দম বন্ধের প্রতিযোগিতা কখনো এই ভাবে কাজে লাগতে পারে সত্যি কল্পনাতীত ছিলো।তুমি নিজেকে নিজেই নিজ অপরাধের শাস্তি দিয়েছো।
ধন্যবাদ, আমাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। শেষবারের জন্য বলছি। আমি তোমায় খুব ঘৃণা করি। বিদায়।”