কিছু মানুষের তাদের পুরো জীবদ্দশয়া প্রয়োজন এর থেকেও বেশি অর্থ থাকে। এরকম পরিস্থিতিতে সমাজের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন খাতে ব্যয় করাটাই অধিক উত্তম। এখানে এমন ১০ জ্ন মানুষের দানশীলতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। দরিদ্র,অসহায় মানুষ যারা প্রতিনিয়ত জীবন সংগ্রামে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকে সেসব মানুষের কাছেই অনেক সময় এই মহান মানুষেরা বিভিন্নভাবে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যায়।
১। বিল গেটস
– নেট আয় $৮৪.২বিলিয়ন
– লাইফটাইম অনুদান বিলিয়ন $২৭বিলিয়ন
মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস সবার কাছেই অনেক পরিচিত।শুধু মাত্র মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা নন তিনি বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনও প্রতিষ্ঠা করেন,যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানবহিতৈষী সংগঠন।বিল গেটস এর স্ত্রী ও এর সাথে জড়িত।সংস্থাপনটি ম্যালেরিয়া ও পোলিও নির্মূল করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় এবং এইচআইভি সংক্রমণ রোধ,যক্ষ্মা,স্যানিটেশন, কৃষি উন্নয়ন, এবং শিক্ষা বিস্তারের নিয়ন্ত্রণ এর মূল লক্ষ্য।বিভিন্ন নামকরা প্রতিষ্ঠান যেমন রোটারি ফাউন্ডেশন, ইউনিসেফ,গ্লোবাল ফান্ড অব এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া , বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আরও অনেক প্রতিষ্ঠানে টাকার যোগান দিয়ে থাকে বিল গেটস এবং তার স্ত্রীর এই মানবহিতৈষী সংগঠনটি।
2। ওয়ারেন বাফেট
– নেট আয় $৬১বিলিয়ন
– লাইফটাইম অনুদান $২১.৫বিলিয়ন
হোল্ডিং কোম্পানি বারকশায়ার হ্যাথঅ্যাওয়ে এর চেয়ারম্যান এবং সিইও ওয়ারেন বাফেট,বিশ্বের অন্যতম একজন ধনী ব্যক্তি।তিনি শুধু ধনী হিসেবেই পরিচিত নন দানশীল হিসেবেও পরিচিত।তিনি বিল গেটস এর প্রতিষ্ঠানটির অগ্রগতি দেখে উদ্বুদ্ধ হন এবং প্রতিশ্রুতি দেন তিনি তাঁর সম্পদের ৯৯% দান করে দিবেন যার ৮৩% দিবেন বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এ এবং বাকিটা বাচ্চাদের।বাফেট পারিবারিক ফাউন্ডেশন টি বাচ্চাদের প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ,নারীর ক্ষমতায়ন.শিক্ষা, খাদ্য, পানি ও নিরাপত্তা বন্দোবস্তের প্রতি প্রধানত লক্ষ্য করে।
৩। জর্জ সোরোস
– নেট আয় $২৪.৪ বিলিয়ন
– লাইফটাইম অনুদান $৮ বিলিয়ন
জর্জ সোরোস ওপেন সোসাইটি এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান।ওপেন সোসাইটি মূলত প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, এবং সামাজিক সংস্কারের জন্য কাজ করে।জর্জ সোরোস প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবিদ্বেষ কালো সম্প্রদায়দের বৃত্তি প্রদান করে তাঁর মানব হিতৈষীমূলক কাজ শুরু করেন। তিনি আফ্রিকার চরম দারিদ্র্যতা দূরীকরণের প্রচেষ্টায় বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন আয়োজনে সক্রিয় হন।ওপেন সোসাইটি মানবাধিকার এর উপর প্রধানত দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
৪। আজিম প্রেমজি
– নেট আয় $১৫.৯ বিলিয়ন
– লাইফটাইম অনুদান $৮ বিলিয়ন
ভারতীয় পরামর্শ এবং আইটি কোম্পানি উইপ্রো এর চেয়ারম্যান আজিম প্রেমজি।তিনি আজিম প্রেমজি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান। এটি ভারতের স্কুল শিক্ষার মান উন্নতি ও সমতার উপর গুরুত্ব প্রদান করে। সংগঠনটি বিভিন্ন ভাষায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণের এর সুচনা করে।এছাড়াও আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা পরিবর্তনের জন্য বিকল্প মডেল এর কাজ করে।আজিম প্রেমজি প্রথম ভারতীয় যিনি কিনা Giving Pledge এ যোগদান করেছেন।
৫। চার্লস ফীনী
– নেট আয় $১.৫ মিলিয়ন
– লাইফটাইম অনুদান $৬.৩ বিলিয়ন
The Atlantic Philanthropies এর প্রতিষ্ঠাতা চার্লস ফীনী। তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি প্রায় তার সব সম্পদ দিয়ে দেন। অস্ট্রেলিয়া, বারমুডা, এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য, সামাজিক প্রকল্প এর সমর্থন এই The Atlantic Philanthropies।
৬। সুলাইমান বিন আব্দুল আজিজ রাজি
– নেট আয় $৫.৭ বিলিয়ন
– লাইফটাইম অনুদান $৫৯০ মিলিয়ন
সুলাইমান বিন আব্দুল আজিজ রাজি উনার তিন ভাই সহ আল রাজি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।তিনি সুলাইমান বিন আব্দুল আজিজ রাজি দাতব্য প্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠা করেন।এটি সৌদি আরবের মধ্যে শিক্ষা,স্বাস্থ্যসেবা,ধর্মীয়,সামাজিক ও সম্প্রদায় সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে সাহায্য করে।প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন প্রকল্প ও প্রোগ্রাম যা অলাভজনক সংগঠন দ্বারা পরিচালিত হয় যেমন আরব ইনস্টিটিউট (আরবি ভাষা জন্),রিয়াদ শহর এর শেখ সুলাইমান বিন আব্দুল আজিজ আল রাজি মসজিদ এবং আরও অনেককে এমন সহায়তা করে। তিনি প্রায় তাঁর সর্বস্ব দান করার অঙ্গীকার করেন যার জন্য তিনি পৃথিবীর অন্যতম একজন দানশীল ব্যক্তি হিসেবে খ্যাত।
৭। গর্ডন মুর
– নেট আয় $২৭ বিলিয়ন
– লাইফটাইম অনুদান $৬.৫ বিলিয়ন
ইন্টেলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত, গর্ডন মুর এখন তার সময় অধিকাংশ জনসেবামূলক কাজেই ব্যয় করেন।২০০৬সালে অবসর গ্রহণের পর তিনি তার স্ত্রীসহ “গর্ডন মুর এবং বেত্তী ফাউন্ডেশন” পরিচালনা করেন। পরিবেশ সংরক্ষণ, রোগীর যত্ন, বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে এটি ভূমিকা পালন করে।২৯জুলাই ২০০৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নার্সিং স্কুল খুলে।এছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্প যেমন থার্টি মিটার টেলিস্কোপ, উন্নত সামুদ্রিক মাইক্রোবায়াল ইকোলজি গবেষণা এবং বিশ্লেষণের জন্য কমিউনিটি সাইবার পরিকাঠামো তে ফান্ডটি সাহায্য করে।
৮। কার্লোস স্লিম হেলু
– নেট আয় $২৭.৩ বিলিয়ন
– লাইফটাইম অনুদান $৪ বিলিয়ন
বিশ্বের সবচেয়ে দানশীল মানুষের মধ্যে একজন হল কার্লোস হেলু।বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এই মানুষটি Grupo Carso এর চেয়ারম্যান এবং Carlos Slim Helu এর প্রতিষ্ঠাতা।ইতিমধ্যে বিদ্যমান মেক্সিকোর কিছু প্রোগ্রাম যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, আইন ও সামাজিক হিতকর কাজে সহায়তা করে ফান্ডটি।অধিক দারিদ্র্য নির্মূল এর পর মেক্সিকোর জনসংখ্যার জীবন মান উন্নত হয়।এছাড়াও কেলস হেলু Telmex প্রতিষ্ঠা করেন।এর প্রধান লক্ষ্য মেক্সিক্যান জনসংখ্যার জীবন মান উন্নত করা।
৯। এলি ব্রড
– নেট আয় $৭.৩ বিলিয়ন
– লাইফটাইম অনুদান $৩.৩ বিলিয়ন
এলি ব্রড, ব্রড ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা এবং একমাত্র ব্যক্তি যিনি দুটি কোম্পানি গঠন করেন।কোম্পানিগুলোর প্রধান লক্ষ্য ছিল জনগণের শিক্ষা, বিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিনিবয়োগ করে।সম্প্রদায় এর কল্যাণ ও বানিজ্যিক অগ্রগতির উন্নতি ছিল এর উদ্দেশ্য।
১০। জর্জ কায়সার
– নেট আয় $৯.৩ বিলিয়ন
– লাইফটাইম অনুদান $৩.৩বিলিয়ন
জর্জ কায়সার তুলসা তে অবস্থিত BOK আর্থিক কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান।তিনি জর্জ কায়সার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা যা প্রাথমিকভাবে শৈশবের শিক্ষা, সামাজিক সেবা, স্বাস্থ্য উদ্যোগের, ধর্মীয় ও সামাজিক উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের মাধ্যমে শিশুদের জন্য সমান সুযোগ প্রদান করতে কঠোর পরিশ্রম করে।Tulsa Community College, National Energy Policy Institute and Oklahoma City Educare ইত্যাদি এর মূল ভিত্তি কায়সার এর ফ্যামিলি ফান্ড।২০১০ সালে কায়সার Giving Pledge এ যোগদান করেন এবং তার সম্পদের অর্ধেক দান করার অঙ্গীকার করেন।তাঁর এই অঙ্গীকার তাকে বিশ্বের সবচেয়ে দানশীল মানুষে পরিণত করে।