প্রভূভক্তিতে সেরা প্রাণির তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে আছে কুকুর। একাকীত্ব ঘোঁচাতে কিংবা উন্নত বিশ্বের জীবনশৈলীতে কুকুর অনেক পছন্দনীয় প্রাণী। আজকাল আমাদের দেশেও বিভিন্ন জাতের কুকুর পালন করা হয়।
প্রভূভক্ত হলেও কুকুর কিন্তু আক্রমনাত্মক তথা বিপজ্জনকও হতে পারে! যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় কুকুর আক্রান্তের সংখ্যা হিসেব করে ২০১২ সালে বিশ্বের ১০টি বিপজ্জনক কুকুরের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে আশার কথা হল এই তালিকাটি যে আপনার কুকুরের সাথেও মিলবে তা কিন্তু নয়। কারণ, যথাযথ প্রশিক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই কুকুরগুলোও আপনার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলবে। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন জানা যাক তালিকাটি।
১। পিটবুল
পিটবুল হচ্ছে বিশ্বের ১০টি শীর্ষস্থানীয় বিপজ্জনক কুকুরের মাঝে প্রথম। এরা ২৪-২৯ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। এরা এতটাই আক্রমনাত্মক হয়ে থাকে যে আমেরিকার কিছুকিছু প্রদেশে এই কুকুর পালন করা নিষিদ্ধ!
২। রোটেলার
সাধারণত যেকোন কুকুরকেই যদি বিরক্ত, অবহেলা করা হয় ও সামাজিকতার শিক্ষা দেয়া না হয়। পাশাপাশি যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব থাকে তবে তারা আক্রমনাত্মক হতেই পারে। রোটেলারকে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থান অধিকারকারী বিপজ্জনক কুকুর বলা হলেও যথাযথ পরিচর্যায় এটিও অনেক বন্ধুসূলভ আচরণ করবে।
রোটেলার কুকুর দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গৃহপালিত প্রাণী চড়ানোর কাজ করা হয়। সাধারণত পুরুষ রোটেলার ৪৩-৫৯ কেজি এবং স্ত্রী রোটেলার ৩৮-৫২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
৩। বক্সার
যদিও আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করে বক্সারকে শীর্ষ ১০টি বিপজ্জনক কুকুরের তালিকায় রাখা হয়েছে তথাপিও কুকুর পালকদের মতে, এটি ততটা বিপজ্জনক নয়। এটি খুবই বুদ্ধিমান। তবে প্রশিক্ষণ দেয়া খুবই কঠিন। এরা সহজে প্রশিক্ষণ নিতে চায় না। এই জাতের কুকুর সারাদিন খুবই সবল ও উদ্যোম থাকে। এদের এই উদ্যোমকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হয়। এই কুকুরটি সাধারণত ৩১ কেজি ওজনের হয়ে থাকে।
৪। জার্মান শেফার্ড
বিশ্বের ১০টি হিংস্র কুকুরের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে জার্মান শেফার্ড। এটি খুবই চতুর ও শক্তিশালী। পাশাপাশি কুকরটি খুবই বিপজ্জনক। বিপজ্জনক হলেও আবার এটি অনেক জনপ্রিয়ও বটে। কারণ এটিও অনেক প্রভূভক্ত হয়ে থাকে। তবে যথাযথ ব্যবহার না করলে এটি আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠে। কুকুরটি সাধারণত ৪৫ কেজি ওজনের হয়ে থাকে।
৫। চওচও
এই কুকুরটি জিহ্বা নীলচে কালো! এটি বাচ্চাদের সাথে বন্ধুসূলভ আচরণ করে। বাসায় বিড়াল থাকলে বিড়ালের সাথেও মিশে থাকবে। তবে যথাযথভাবে পালন করতে না পারলে এটিও খুবই আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠে। বিশ্বের ১০টি আক্রমনাত্মক কুকুরের তালিকায় থাকা চওচও এর ওজন ৩১ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
৬। হাস্কিস
যদিও হাস্কিসকে দেখতে মোটাসোটা ও কোমল দেখায়, তথাপিও জানা যায় গত ২০ বছরে এরদ্বারা বিশ্বে ১৫ জন লোক মারা গেছে। হাস্কিস কুকুরকে প্রাথমিকভাবে বলা হয় স্লেজ ডগ। স্লেজ গাড়ি চালানোর জন্য এই কুকুর ব্যবহৃত হয়। এরা খুবই খেলতে পছন্দ করে। কুকুরগুলো খুবই শক্তিশালী হয়। যেহেতু এই কুকুর খুবই শক্তিশালী তাই তাদেরকে নিয়মিত হাঁটাতে হয়।
ভালভাবে প্রশিক্ষণ দিতে পারলে হাস্কি খুবই প্রভুভক্ত হয়। অন্যথায়, এরাও খুবই বিপজ্জনক হতে পারে।
৭। হাইব্রিড নেকড়ে
আমরা জানি, সকল কুকুরই নেকড়ে থেকে উদ্ভুত হয়েছে। কিন্তু এখনও অনেক কুকুর রয়েছে যেগুলোকে সরাসরি নেকড়ের সাথে প্রজনন করিয়ে নতুন জাত তৈরি করা হয়েছে। এভাবে নেকড়ে ও গৃহপালিত কুকুরের মাঝে প্রজনন ঘটিয়ে নতুন তৈরিকৃত কুকুরটি অনেকটা ভীত ও শান্ত স্বভাবের হয়। তাছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশেই নেকড়ে হাইব্রিড গৃহে রাখার অনুমতি দেয়া হয়।
নেকড়ে হাইব্রিড ভীত ও শান্ত স্বভাবের হলেও “সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)” এর তথ্য হতে জানা যায়, নেকড়ে হাইব্রিড দ্বারা ১৯৭৯-১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ১৪ জন লোক মারা যায়।
৮। আলাস্কান মালামিউটস
আলাস্কান মালামিউটস কুকুর সাধারণত ৪৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এরা খুবই চালাক, শক্তিশালী এবং পরিশ্রমী। আকারে কিছুটা ছোট হলেও এই কুকুর শহুরে বাসা-বাড়ির জন্য কম উপযোগী। তবে দক্ষ কুকুর পালকরা এদেরকে পুষতে পারেন। কারণ, এদের শক্তি ও পরিশ্রমকে যথাযথ মূল্যায়ন করা না হলেই এরা খুবই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
৯। গ্রেট ডেন
গ্রেট ডেন কুকুর প্রায় ৯০ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে, এটি একমাত্র কুকুর জাত যা চলার পথে সর্বসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। আকারে বড় হওয়ায় আপনি মনে করতে পারেন এটি তার অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেই প্রতিপক্ষকে ভীতি প্রদর্শন করতে সক্ষম। এমনকি যদি আপনি কুকুরপ্রেমী হোন তথাপিও হঠাৎ দেখলে চমকে উঠবেন!
যাইহোক, গ্রেট ডেনকে যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। অন্যথায়, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাবে এটি আপনার উপর চরম বিদ্রোহী উঠবে। এই জাতের কুকুরকে দীর্ঘক্ষণ হাঁটানো জরুরী।
১০। ডোবারম্যান পিনসার্চ
ডোবারম্যানের ওজন হয় ৩০-৪০ কেজি। কুকুরটি সতর্কতা, আনুগত্যতা এবং বুদ্ধিমত্তায় সেরা। কুকুরটিকে পাহারার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে দেখা যায়। এই কুকুর তার মালিকের কেউ সামান্য বিপদে পড়লেই আক্রমন করে বসে! এমনকি একে ঘুম থেকে জাগালেও আক্রমন করে বসতে পারে!
লিখেছেন ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম। শেরপুর, বগুড়া।