‘ আড্ডা’ এই শব্দটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। সব প্রাপ্ত বয়সের মানুষকে তাদের দিনের কিংবা রাতের একটা সময় আড্ডা দিতেই হয়। হোক না সেটা পরিবার কিংবা বন্ধুর সাথে। আর তারূণ্যর আড্ডা এখন শুধু চায়ের দোকানে চায়ের চুমুকেই সীমাবদ্ধ নাই, এটিকে আরো প্রাণবন্ত করে রাখে ছয় তারের সুরেলা ছন্দ। বলছিলাম ছয় তার বিশিষ্ট সুরেলা যন্ত্র গীটারের কথা। বর্তমানে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাঁধে বই-খাতার ব্যাগের সাথে আরো একটি ব্যাগ ঝুলতে দেখা যায়। এটি কোন বাজারের ব্যাগ নয় এটি গীটার রাখার ব্যাগ। শক্ষিার্থীরা এখন তাদের আড্ডায় এই গীটারের সুরেই জমিয়ে গান করে। যারা গীটার বাজাতে জাননে তারা বা শিখতে আগ্রহী তারা এই লেখায় পেয়ে যাবেন নানা ধরণরে গীটারের ধরণ ও রকম সম্পর্কিত অনেক কছিু। জানবো আজকের তরুণদের আড্ডার প্রাণ, এই গীটারের বিভিন্নতা নিয়ে জানা- অজানা ৮টি তথ্য।
১। ছয় তারের গীটার
আমরা সচরাচর ছয় তারের গীটার সম্পর্কে বেশী জানি। গীটার শুধু যে ছয় তারের হয় তা নয় আরো বেশী হতে পারে। এই ছয় তারের গীটারকে স্প্যানিশ গীটার বলা হয়। আমেরিকাতে ১৮৪০ সালে একটি জনপ্রিয় খেলা প্রচলিত ছিল। ছয় তারের গীটার বাজিয়ে মনের সুখে আবোল-তাবোল বলা। এই অদ্ভূত খেলাটির নাম ছিল ‘স্প্যানিশ ফ্যান্ডাংগো’। এই ভিন্নধর্মী খেলা ও ছয় তারের গীটারের কথা তৎকালীন সময়ের ম্যাগাজিনের সজ্জিত কাগজে প্রকাশিত হয়। ম্যাগাজিনের এই সজ্জিত কাগজ পাল্প পেপার নামেই বেশী পরিচিত ছিল। ম্যাগাজিনে স্প্যানীশ ফ্যান্ডাংগো খেলার শর্তও তুলে ধরা হয়। শর্তে উল্লখে ছিল যদি এই খেলা খেলতে হয় তাহলে অবশ্যই ছয় তারের গীটার লাগবে এবং গীটার বাজিয়েই আবোল-তাবোল বলতে হবে। এভাবেই ছয় তারের গীটার পরিচিত হয়ে উঠে ‘স্প্যানীশ গীটার’ নামে এবং বাড়তে থাকে সস্তা গীটারের দামও।
২। রেসোনেটর বা অনুনাদক গীটার
এটি উচ্চ শব্দ তৈরী করতে পারে এমনি একটি গীটার। ১৯২০ সালে রেসোনেটর প্রথম আবিস্কৃত হয়। এই গীটার আবিষ্কার হওয়ার পিছনে একটি কারণ ছিল। ঐ সময় গীটারের সুর উচ্চ শব্দে পরিণত করার জন্য কোন এমপ্লিফায়ার ছিলনা। এতে রেকর্ডিং এ গীটারের শব্দ শুনা যেতো না। তাই রেকর্ডিং এ গীটারের সুর রেকর্ড করার জন্য উচ্চ শব্দের রেসোনেটর গীটার তৈরী করা হয়। ‘ডুবরো’ তৎকালীন সময়ের রেসেনেটর গীটার, অন্যান্য গীটারের তুলনায় এর শব্দ অনেক বেশী। ‘ডুবরো’ একটি গীটার তৈরীর কোম্পানী। কোম্পানীর নামেই এই গীটারের নাম ‘ডুবরো’। ডুবরো গীটারকে একস্টিক লেপ স্টীল গীটারও বলা হয়।
৩। লেপ স্টীল গীটার
প্রত্যেকটা গীটারেরই ফ্ল্যাট এবং বার থাকে। লেপ স্টীল গীটারের ফ্ল্যাট মসৃণ এবং এর বার ধাতু দিয়ে তৈরী করা হয় যেমন- ইস্পাত। পবিত্রতার ঐতিহ্য রক্ষার্থে এখনো অনেক গীর্জায় লেফ স্টীল গীটার বাজানো হয়। কেননা তাদের বিশ্বাস ধাতু দিয়ে তৈরী যে কোন জিনিস পবিত্র।
৪। টেনোর গীটার
টেনোর গীটার নামটা শুনতেই মনে হচ্ছে গীটারটা ছোট হবে। অন্যান্য গীটারের সাথে তুলনা করলে টেনোর গীটার আসলেই ছোট। অন্যান্য গীটারের চেয়ে এর স্ট্রীং বা তারের সংখ্যাও কম। মাত্র ৪টি স্ট্রীং দিয়ে এই গীটার তৈরী করা হয়েছিল। তখন ‘বায়োলে’ নামের আরেকটি বাদ্যযন্ত্র ছিল। দেখতে এই যন্ত্রটি বেহালার মত হলেও বেহালার চেয়ে অনেক বড়। বায়োলের সাথে টেনোর গীটারের মিল হল বায়োলেও ৪টি স্ট্রীং দিয়ে তৈরী হয় এবং দুইটার সুর অনেকটা একইরকম।
৫। আর্চ টপ গীটার
আর্চ টপ গীটার এর বডি এবং বার দেখতে সেলো এর মত। সেলো হল একটি বাদ্যযন্ত্র যার বডি অনেকটা বাঁকা। সেলো যন্ত্র তৈরীর ধারণা থেকেই আর্চটপ গীটার তৈরী করা হয়। এই গীটারের কম্পন অন্য গীটারের কম্পন তৈরী হওয়া থেকে ভিন্ন। তাই অন্যান্য গীটারের শব্দের থেকে আর্চ টপ গীটারের শব্দ একটু ভিন্ন হয়, অনেকটা ম্যান্ডোলিন যন্ত্রের মত। এবার কয়েকটি ইলেক্ট্রিক গীটার সম্পর্কে জানবোঃ
৬। সলিড বডি ইলেক্ট্রিক গীটার
সলিড বডি অর্থাৎ শক্ত বডি। সলিড বডি ইলেক্ট্রিক গীটার কাঠের শক্ত তক্তা দিয়ে তৈরী করা হয়। এই গীটারের বডি এবং বার শক্ত তক্তা দিয়ে তৈরী হলেও এর সুর অনেক সুন্দর এবং পরিষ্কার হয়। কিন্তু গীটারের সুর তুলতে সামান্য ব্যাতিক্রম হলে তিক্ত এবং কর্কশ শব্দ তৈরী হয়। সলিড বডি ইলেক্ট্রিক গীটারে কোন রেসোনেটিং চেম্বার নেই অর্থাৎ এই গীটারের শব্দ বেশী বড় করা যায় না। স্ট্যাটোকাস্টারস এবং লেস্ পলস্ এই দুটি নাম হল দুটি ভিন্ন ধরনের সলিড বডি ইলেক্ট্রিক গীটারের।
৭। হোলো বডি ইলেক্ট্রিক গীটার
ইদুঁর গর্ত করে থাকার জন্য, তাহলে গীটারে গর্ত করা হয় কী ইঁদুরের জন্য? না গীটারে গর্ত থাকে রেসোনেটিংয়ের কাজ করার জন্য অর্থাৎ গীটারের বডিতে গর্ত করা হয় যাতে এর শব্দ বেশী শুনা যায়। যে ইলেক্ট্রিক গীটারের বডিতে গর্ত করা থাকে ঐ গীটারের নাম হোলো বডি ইলেক্ট্রিক গীটার। এই ধরনের গীটারের সুর উচ্চ শব্দে বের হয় যারা জাজ্ মিউজিক করতে পছন্দ করেন এবং জাজ্ মিউজিকে গান করতে পছন্দ করেন তারাই হোলো বডি গীটার ব্যবহার করে থাকে। জাজ্ মিউজিক হল সেই মিউজিক যেখানে গলার স্বরের থেকে বাদ্যযন্ত্রের শব্দ বেশী গুরুত্ব দেওয়া হয়।
৮। সংক্ষেেপ আরো কয়েকটি গীটার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। উপরে উল্লেখিত বিভিন্ন গীটার সম্পর্কে আলোচনা করে বুঝা যায় গীটার প্রধানত তিন ধরনের হয়ে থাকে। ক্লাসিকাল গীটার- এই গীটারের স্ট্রীংগুলো নাইলন দিয়ে তৈরী করা হয়। বর্তমানে ক্লাসিকাল গানের রেকর্ডিং এ ক্লাসিকাল গীটারই ব্যবহার করা হয়।
একস্টিক গীটার– যার স্ট্রীংগুলো স্টীল দিয়ে তৈরী করা হয়। কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্ষিার্থীদের হাতে একস্টিক গীটার বেশী দেখা যায়। তাছাড়া একস্টিক গীটার সহজে বহনযোগ্য।
ইলেক্ট্রিক গীটার– এই গীটারে উল্লখেযোগ্য বৈশিষ্ট হলো এটি বাজানোর সময় ম্যাগনেটিং পিক ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও আছে বেইজ গীটার, আল্টো গীটার, রেসোনেটর গীটার। আর গীটারের স্ট্রীং এর দিক দিয়ে চিন্তা করলে ১২ স্ট্রীং, ১০স্ট্রীং, ৮স্ট্রীং, ৬স্ট্রীং এবং সর্বশেষ ৪ স্ট্রিং এরও গীটার আছে।
শির্ক্ষাথীদের যৌবন উদ্দিপ্ত জীবনে তাদের সুরময় চিন্তার জগতে বর্হিঃপ্রকাশ হয় এই গীটারের মাধ্যমে। তারুণ্য সৃষ্টরি প্রতীক, সুর সৃষ্টরি অনন্য এক রুপ। তারে তারে বজেে উঠুক সাম্যরে গান, জীবনরে গান, ভালবাসার গান।