গবলিন ভ্যালি- অদ্ভুত পাথরের রহস্যময় উপত্যকা

নদী বা সমুদ্রের তীরে বসে বালি নিয়ে খেলা বালক বয়সে অনেকেই খেলেছি। বালি ও পানির তরল মিশ্রণ ফোঁটায় ফোঁটায় ফেলে গড়া হয় বিভিন্ন আকৃতি। নদীতীরে বালির বর্তুলাকার ফোঁটার ন্যায় অসংখ্য বেলেপাথর যখন অদ্ভুত ধরনের আকৃতি গঠন করে, তখন ব্যাপারটা কেমন হয়?
হ্যা, ঠিক এভাবেই অসংখ্য বেলেপাথরে প্রাকৃতিকভাবে গঠিত আজব আকৃতির পাথর নিয়েই ‘গবলিন ভ্যালি’ উপত্যকার সৃষ্টি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম পর্যটনসমৃদ্ধ প্রদেশ ‘উতাহ’ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ‘সান রাফায়েল সয়েল’ এর অন্তর্ভুক্ত।

আমেরিকায় ‘গবলিন’ বলতে এক ধরণের ভূত বা প্রেতাত্মা বুঝানো হয়। আমেরিকানদের বিশ্বাস, গবলিন হল খাটো ও কদাকার এক ধরনের অপদেবতা। ‘গবলিন ভ্যালি’- মানে তো বুঝতেই পারছেন ‘ভূতের ভ্যালি !’ এই গলিতে আসলে কদাকার ভূত থাকে কিনা তা নিয়ে বাজি ধরতে যাব না, তবে এ অদ্ভূত নামকরনের হয়তো কিছু কারন খুঁজে বের করা যেতে পারে।

– গবলিন ভ্যালিতে রয়েছে অসংখ্য বড় বড় পাথর। আর এ পাথরগুলোর আকৃতি অনেকটা গবলিনের মতই! সাধারনত পাঁচ থেকে সাত মিটার উঁচু এ পাথরগুলো এবড়োথেবড়ো হয়ে বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করেছে। অনেক পাথর আবার বিভিন্ন জীবন্ত প্রাণীর আকৃতির সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। কোন কোন পাথর দেখে মনে হবে একটি ক্ষিপ্ত ডাইনোসর হা করে আছে! আবার কোথাও দেখা যাবে যেন সমুদ্র উপকূলে নিশ্চুপ হয়ে বসে রয়েছে একটি বিরাট কচ্ছপ! এভাবে কুমির, খরগোশ ও আরো অনেক জীবন্ত প্রাণীর আকৃতির অসংখ্য পাথর দেখা যায় এখানে। তবে এ উপত্যকার অধিকাংশ পাথরই মাশরুম আকৃতির। আর এ কারনেই একে ‘মাশরুম উপত্যকা’ ও বলা হয়।

গবলিন ভ্যালির পাথরগুলোর আকৃতি দেখে মানবসৃষ্ট মূর্তির মতো মনে হলেও এগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্ট। এনট্রাডা বেলেপাথরের প্রাকৃতিক ক্ষয় থেকেই মূলত এ উপত্যকার সৃষ্টি। এই এনট্রাডাগুলো এক ধরণের ধ্বংসাবশেষ ধারন করে, যেগুলো আদিকালের কোন উচ্চভূমি থেকে ক্ষয়িত হয়ে এসেছিল। আর এই জোয়ারভাটার সমভূমিতে বেলেপাথর, পাললিক শিলা ও কর্দমের স্তর হিসেবে পুনর্গঠিত হয়েছিল। এই বেলেপাথরগুলো টেউয়ের সঙ্গে উপকূলের বালুয়াড়িতে এসে জমা হয় এবং ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে বিস্ময়কর ‘গবলিন ভ্যালি’ উপত্যকার সৃষ্টি করে।

আবিষ্কার:

এ ভূতুড়ে উপত্যকাটির আবিষ্কার নিয়ে বেশ কিছু কাহিনী প্রচলিত আছে। জানা যায়, রেড ইন্ডিয়ানদের মাধ্যমেই সর্বপ্রথম উপত্যকাটির খোঁজ পাওয়া যায়। ‘রেড ইনডিয়ান’ হল আমেরিকার একটি আদিম অধিবাসী। আর এ অধিবাসীদের কয়েকটি গোষ্ঠীর সংস্কৃতিতে গবলিন ভ্যালির উল্লেখ পাওয়া যায়।

রেড ইন্ডিয়ান ছাড়া এই উপত্যকাটির খোঁজ প্রথম বের করে স্থানীয় রাখালেরা। একদল রাখাল তাদের হারিয়ে যাওয়া পশু খুঁজতে বের হয়। আর পশু খুঁজতে খুঁজতেই এক পর্যায়ে এই আজব উপত্যকার সাক্ষাত মেলে।

blank

তবে ‘গবলিন ভ্যালি’ পরিচিতি পায় মূলত ১৯২০ সালের শেষের দিকে ‘হাইট ফেরি’ কোম্পানির মালিক ও পরিচালক আর্থার চ্যাফিনের মাধ্যমে। জানা যায়, চ্যাফিন তার কাজের সুবিধার জন্য গ্রীন রিভার ও কেইনভিলের মধ্যে একটি বিকল্প সড়কের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। আর তাই দুই সাথীর সঙ্গে বেরিয়ে পড়েন বিকল্প সড়কের খোঁজে। এই রাস্তা যে এলাকার উপর দিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন, তার মাত্র এক মাইল দূরেই ছিল ‘গবলিন ভ্যালি’। অদ্ভুত আকৃতির পাথরের এ বিশাল উপত্যকা দেখে তো চ্যাফিনের চোখ ছানাবড়া! সড়কের কাজ শেষে ফেরার পথে তারা পুনরায় গবলিন ভ্যালিতে গিয়ে পুরো এলাকাটি ঘুরে দেখে ও এ আজব উপত্যকার বেশ কিছু ছবি তুলে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে ছবিগুলো পত্রিকায় ছাপা হলে এটি সবার নজরে আসে। তখন যায়গাটি ছিল যথেষ্ট দূর্গম ও জনমানবহীন। তা সত্ত্বেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৌতূহলপ্রিয় মানুষের ভিড় জমতে থাকে। অবশেষে ১৯৫৪ সালে উপত্যকাটি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা হয়। পরবর্তীতে এটি উতাহ প্রদেশের অধীনে চলে যায় এবং সেখানকার সরকার এটি সংরক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করে। তারা এটিকে একটি ‘স্টেট পার্ক’ হিসেবে ঘোষণা করে। আর তখন থেকেই এটি ‘গবলিন ভ্যালি স্টেট পার্ক’ হিসেবে পরিচিত।

তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট