সূর্যমুখীর শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গগ। গত শতাব্দীর সবচেয়ে রহস্যময় আর বেদনাদায়ক শিল্পীদের একজন ভিনসেন্ট ভ্যান গগ। আজ থেকে ঠিক ১২৮ বছর আগে, এই ২৩ ডিসেম্বর নিজের কান নিজে কেটে গ্যাব্রিয়েল বারলেটকে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। কেন এমন অদ্ভুত উপহার? কতটা সাহসী হলে মানুষ নিজের হাতে নিজের কান কাটতে পারে? এটা কি সাহস নাকি পাগলামি? আসুন ডাচ শিল্পীর ভুবন থেকে উত্তর জানার চেষ্টা করি।
কখনো আদিগন্তবিস্তৃত ফসলি জমি, গ্রামের পরিশ্রমী মানুষ, কখনো তারা ভরা রাতের আকাশ, কখনো বা নিজের মুখচ্ছবি। তাঁর সাড়ে আট শর বেশি চিত্রকর্ম (আরও ১ হাজার ৩০০-এর বেশি ছবি তিনি এঁকেছেন কাগজে) এখনো সারা দুনিয়ার শিল্পপ্রেমীদের আগ্রহের বিষয়। কাগজের উপর সৃষ্টি করা জাদুর জগত, তাই প্রতিটি ছবির একাগ্র দর্শক কোটি কোটি। এমন অসাধারণ মেধাবী ভিনসেন্ট কেন নিজের হাতে নিজের কান কেটেছিলেন? এটা নিয়ে আছে নানা মতবাদ, নানা গুজব, নানা গল্প। কিন্তু ধারনা করা হয় যে একই সময়ে ঘটা বেশ কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা শিল্পীকে এরকম অমানবিক কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলো।
ঘটনা ১
নিজের ভাই এবং অন্যতম বিশ্বস্ত সঙ্গী থিওর বিয়ের কথা শুনে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন ভ্যান গগ। থিওর প্রতি তাঁর আস্থা এবং নির্ভরতা ছিলো অনেক বেশী গভীর। তার বিয়ের খবর নিয়ে আসা চিঠিটি শিল্পীর মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
ঘটনা ২
পল গগ্যাঁ আর ভ্যান গগ বন্ধু ছিল, কিন্তু তাদের বন্ধুত্ব ছিল অস্বচ্ছন্দ, অস্বস্তিকর এবং চিত্রশিল্পী হিসেবে তারা ছিল পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। ১৮৮৮ সালে দুজন শিল্পী নয় সপ্তাহ একসঙ্গে ছবি আঁকার উদ্দেশ্যে ফ্রান্সের দক্ষিণের শহর আর্লেতে চলে আসে। কিন্তু তাঁদের এই সৎ ইচ্ছার কোন শুভ সমাপ্তি হয় নি। শীতের এক রাতে দুজনের মধ্যে চরম কথা কাটাকাটি হয়। ভিনসেন্ট ক্ষুর নিয়ে তেড়ে যায় পল গগ্যাঁকে মারতে। কিন্তু এই চেষ্টা সফল হয় নি। পরদিন, ২৩ ডিসেম্বর ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ নিজের কান কেটে ফেলে।
রক্তে ভেসে গেলেও কাটা কানের টুকরো কাগজে মুড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়েন ভিনসেন্ট ভ্যান গগ। এরপর তিনি ঠিক কোথায় গিয়েছিলেন সেটা এখনও অস্পষ্ট। তবে কাটা কান তিনি উপহার দেন গ্যাব্রিয়েল বারলেট নামের এক তরুণীকে। গ্যাব্রিয়েল বারলেট ছিলেন একজন কৃষক কন্যা। কিন্তু পারিবারিক দুরবস্থার কারনে তিনি যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। গ্যাব্রিয়েল বারলেটকে কাটা কান উপহার দিয়ে সেখান থেকে ভিনসেন্ট পালিয়ে আসেন।
পর দিন ভিনসেন্ট ভ্যান গগ এর বাড়িতে ফিরে আসেন গগ্যাঁ। কিন্তু এসে দেখেন সেখানে অপেক্ষা করছে পুলিশ। রক্তে ভেজা বিছানায় পড়ে আছেন ভিনসেন্ট। ভাই থিও নিজের প্রেমিকার সঙ্গে বড়দিন কাটাবেন ভেবেও দাদার কথা শুনে ছুটে আসেন হাসপাতালে। কাটা কানের চিকিৎসা শেষে জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি।
২৭ জুলাই, ১৮৯০ সালে নিজের বুকে গুলি করেন ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ। নিজেকে গুলি করে, হেঁটেই নিজের বাড়ি ফিরে আসেন। ২৯ জুলাই প্রথম প্রহরে তিনি মারা যান। তার বলা শেষ কথা ছিলো, “বেদনা সবসময়ই থাকবে” “The sadness will last forever”।