আমরা সমাজে বাস করি সাথে বাস করি বিভিন্ন রকম আইন নিয়ে।এই আইন বা নিয়ম কানুন কখনও আমাদের জন্য সুবিধা তৈরি করে আবার কখনও তা শুধু অসুবিধা নয় বিরাট ঝামেলায় ফেলে দেয়।যেমন উওর কোরিয়ার আইন কানুন অন্য সব দেশ থেকে আলাদা এবং এই আধুনিক যুগে এমন নিয়ম কানুন অদ্ভুত বটে!তেমনি অনেক দেশে মজার কিছু নিয়ম আছে যা জেনে বেশ মজা পাওয়া যায়।তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন দেশের অদ্ভুত এবং মজার কিছু নিয়ম কানুন।
প্রথমেই উওর কোরিয়া সর্ম্পকিত কিছু নিয়ম।তবে এত অদ্ভুত সব নিয়মের তৈরি কর্তা একজন তিনি হলেন কিম জং উন।তার এই অদ্ভুত নিয়মগুলোর জন্যই তিনি বেশি পরিচিত।
উত্তর কোরিয়ার অদ্ভুত নিয়ম:
- উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের নামে নাম রাখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ২০১১ সাল থেকেই এ নির্দেশ বহাল আছে। কোনো নবজাতকের নাম কিম জং উন রাখা যাবে না। এমন কি যাদের এই নাম আছে তাদের সংশোধন করতে হবে।
- কিম জং উনের দেশে রয়েছে ‘তিন পুরুষের শাস্তি’র বিধান। এই আইনে একজন ব্যক্তির অপরাধে গোটা পরিবারকে আটক করার বিধান আছে। দাদার কোনো অপরাধের শাস্তি নাতিকেও ভোগ করতে হতে পারে।
- সাধারণ নাগরিক নিজস্ব মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারে না,এতে তাদের নিষেজ্ঞা আছে। পাবলিক ল্যান্ডফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের সামান্য সুযোগ আছে।
- উত্তর কোরিয়ায় সাধারণ মানুষের জন্য ইন্টারনেট নিষিদ্ধ। অল্প কিছুসংখ্যক মানুষ স্বল্প সময়ের জন্য কিছু নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারে। সরকারি অনুমোদন আছে এমন এক হাজারটি সাইট শুধু তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্কে চলতে পারে।
- দেশটিতে প্রতিদিনকার পেশার বাইরে কারখানায় বা কোনো বিক্রয়কেন্দ্রে কাজ করার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের দিতে হয় ঘুষ। এত পরিশ্রম আর ঘুষ দেওয়ার পরও মাসে আয় ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ ডলারের বেশি ওঠে না।
- ২০১৪ সালে উত্তর কোরিয়ার সব সংবাদে দেখানো হয় তাদের দেশ ব্রাজিলকে ফাইনালে ৮-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়! ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে তারা খেলার সুযোগই পায়নি। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, তাদের মিডিয়া প্রচার করে তারা ২০১০ বিশ্বকাপে পর্তুগালকে ৭-০ গোলে হারিয়েছে! অথচ বাস্তবে ঘটেছিল উল্টো। পর্তুগাল তাদের হারিয়েছিল ৭-০ গোলে! এই পরাজয়ের কারণে, ওই দলের সব খেলোয়াড় ও কোচদেরও বন্দি করে লেবার ক্যাম্পে পাঠানো হয়।
- দেশের নাগরিকদের মধ্যে ‘বেসিক’, ‘কমপ্লেক্স’ ও ‘হোসটাইল’ এ তিনটি স্তর রয়েছে, যাদের দেশের রাজধানীতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
- সেখানকার নারীদের জন্য রাষ্ট্রের নির্ধারিত ১৪টি চুলের স্টাইল রয়েছে। পুরুষরা ৫ সেন্টিমিটারের বেশি ও ২ সেন্টিমিটারের কম চুল রাখতে পারে না।তাদের দেশে ২৮ ধরনের চুলের স্টাইল আছে এবং এই স্টাইলের বাইরে কোনো স্টাইল করতে পারবে না।
- নীলরঙা জিন্স উত্তর কোরিয়ায় নিষিদ্ধ। কারণ এই জিন্স মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে প্রতিনিধিত্ব করে!
- উত্তর কোরিয়ায় লেবার ক্যাম্প আছে ১৬টি। যেখানে দুই লাখ বন্দি করুণ জীবনযাপন করে, যা সবচেয়ে বাজে দুঃস্বপ্নের চেয়েও বেশি নির্মম। লেবার ক্যাম্পের বন্দিরা খাবার পায় না, কাজ করতে হয় ২৪ ঘণ্টা।
এবার আশা যাক জাপানের বিভিন্ন নিয়ম নিয়ে।এই দেশটি নিয়ে পৃথিবীজুড়ে মানুষের বিস্ময়ের সীমা নেই।তারা যথেষ্ট ঐতিয্যবাহী।জাপানের আরেক নাম “নীহোন” বা প্রথম সূর্যদয়।জাপানিরা তাদের দেশকে এই নামে ডাকতে বেশি পছন্দ করে।
মজার দেশ জাপান:
- জাপানের রাস্তায় কোন ডাস্টবিন থাকে না! তারা সব রকম বর্জ্য নির্দিষ্ট ভাবে রিসাইকেল করে।আর যেগুলো রিসাইকেল করা সম্ভব না সে গুলো তারা সুশৃঙ্খল ভাবে ধংস করে দেয়।
- শৈশবে নৈতিক শিক্ষাদানের অভ্যাসটির দারুণ সুফল পেয়েছে জাপান। বড় হয়ে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে জাপানি তরুণরা, মানবিক মূল্যবোধ তাদের অসাধারণ, শিক্ষার হার প্রায় শতভাগ, তাই অপরাধের প্রসারও অসম্ভব কম। জাপানের রাজধানী টোকিও পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ একটি শহর, ছয় বছরের একটি শিশুও এই শহরে কোন রকম বিপদ আপদের আশঙ্কা ছাড়াই ইচ্ছামতো সারা শহর ঘুরে বেড়াতে পারে নিরাপদে!
- “ওভারটাইম” শব্দটি না থাকলেও জাপানি ভাষায় এরচেয়ে অনেক গুরুতর একটি শব্দ আছে- “কারোশী” যার অর্থ “অতিরিক্ত কাজের চাপে মৃত্যু!’’ ব্যাপারটি শুনতে আজব মনে হলেও জাপানের প্রেক্ষাপটে এটি খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। সেখানে প্রতিবছর গড়ে ১০,০০০ মানুষ মারা যায় শুধুমাত্র অতিরিক্ত কাজের চাপে, ডায়াগনোসিসে তাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়- “কারোশী”!এটি ঠেকাতে অবশ্য জাপানিদের অভিনব একটি পন্থা রয়েছে।কেননা সেখানে কাজ ফাঁকি দিয়ে ঘুমাবে এমন মানুষ বলতে গেলে নেই, বরং স্বেচ্ছায় ভয়াবহ খাটুনি করতে গিয়ে মারা পড়ার ঝুঁকি ঢের বেশি, তাই কাজের ফাঁকে একটু ঘুমিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটি বলতে গেলে অলিখিত একটি প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে সে দেশে!
- জাপান পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে কাজে এক মিনিট দেরি করে আসাকেও বিরাট অপরাধ হিসেবে দেখা হয়! সবকিছু অসম্ভব নিখুঁতভাবে সময় মেনে চলে, এতটাই নিখুঁত যে পাবলিক ট্রেনগুলোর গড়ে ১৮ সেকেন্ডের বেশি দেরি করার কোন নজির নেই।
এবার আশা যাক বিভিন্ন দেশের কিছু অদ্ভুত ও মাথা ঘোরানো বিষয়বস্তু নিয়ে।যেগুলো বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে নিয়ম তৈরি হয়েছে।
১. চীনে ‘টাইমট্র্যাভেল’
২০১৫ সালে চীনের সরকার ‘টাইম ট্র্যাভেল’ বিষয়ক যাবতীয় সিনেমা আর টেলিভিশন শো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সময় সংক্রান্ত কোনো যন্ত্র দিয়ে অতীতে ফিরে যাওয়ার কল্পবাহিনীতে ক্ষতি দেখতে পায় চীনের কর্তৃপক্ষ। তাদের ধারণা, এতে ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হতে পারে। এ ছাড়া সিনেমায় দেখানো অতীতে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমে যে ইতিহাস প্রদর্শিত হবে তার কারণে আসল ইতিহাসের প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসতে পারে মানুষের। তাই এ ধরনের সিনেমা ও টিভি অনুষ্ঠান প্রচার নিষিদ্ধ দেশটিতে।
২. তুর্কেমেনিস্তানে ঠোঁট মেলানো
দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট সাপারমুরাত নিয়াজভ ২০০৫ সালে ঠোঁট মেলানোর কাজটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এটা নাকি খাঁটি সংস্কৃতির পরিপন্থী।
এই নিষেধাজ্ঞা কেবল রাষ্ট্র বা টেলিভিশনের আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্যেই নয়, অপেরা বা ব্যালে ইত্যাদি ক্ষেত্রেও বলবৎ ছিল।
৩. সিঙ্গাপুরে ‘চিউইং গাম‘
লায়ন সিটি চিউইং গাম আমদানি ও বিক্রি বন্ধ করে দেয়। ফলে স্থানীয়দের কাছে এটা এক বিরল বস্তু হয়ে ওঠে। তবে চিকিৎসার কাছে রোগীরা থেরাপি নিতে গাম কিনতে পারতেন ফার্মেসি কিংবা ডেন্টিস্টদের কাছ থেকে।
৪. ভারতে অ্যালকোহলের বিজ্ঞাপন
১৯৯০ এর সময় থেকে ভারতে মদ ও সিগারেটের বিজ্ঞাপনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অথচ সেখানে যত্রতত্র মদ বিক্রি ও খাওয়ার জন্যে বার ও রেস্টুরেন্ট আছে। তবে সংশ্লিষ্ট অনেক প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার করে অন্যান্য জিনিস বিক্রির চেষ্টা করে।
৫. ব্রিটেনে পার্লামেন্ট ভবনে রং করা
পার্লামেন্ট ভবনে মৃত্যুবরণ করা অবৈধ ব্রিটেনে। এই অদ্ভুত নিয়মটা চালু রয়েছে সেখানে। আবার সেখানে ভবনের দেয়ালে রং করাও অবৈধ।
৬. দক্ষিণ কোরিয়া অনলাইন গেমিং
আসলে ভিডিও গেমসের আসক্তি থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতেই এই নিয়ম চালু করা হয়েছে। সেখানে অনলাইন গেমিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিয়মটি ‘সিন্ডেরেলা ল’ নামে সুপরিচিত। এর মাধ্যমে ১৬ বছরের কম বয়সীরা গেমিং ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারেন না।
৭. পাকিস্তানে ফেসবুক
২০১০ সালে পাকিস্তানে ফেসবুক ব্লক করে দেওয়া হয়। সেখানে ফেসবুকের মাধ্যমে হযরত মোহাম্মাদ (সা.) এর ছবি আঁকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে জনগণের তীব্র প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতেই ব্লক করা হয় ফেসবুক। আরো বন্ধ করা হয় ইউটিউব, উইকিপিডিয়া আর ফ্লিকার।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
ছবিঃ ১ঃ http://www.cnitlaw.com/category/civil-law
২ঃ http://blog.forbestravelguide.com/4-china-hikes-with-astounding-views
৩ঃ http://indiatoday.intoday.in/story/kim-jong-un-north-korea-missiles-japan-economic-reforms-pyongyang-un-sanctions/1/1048473.html