সিসিলিয়া ব্লীসডেইল নিজের মেয়ের বিয়েতে পরার জন্য ২০১৫ সালে কেনেন এই রহস্যময় জামা, যা পুরো পৃথিবীর মানুষকে দুই ভাগ করে দেয়। কোন কিছু না ভেবে, কোন পরিকল্পনা ছাড়াই তিনি তুলেছিলেন এই ছবি – রহস্যময় নীল-কালো অথবা সাদা-সোনালী জামা। ইন্টারনেটের জগতে ঝড় তোলে এই রহস্যময় জামা। কেউ একমত হতে পারছিলো না জামাটির রং এর ব্যাপারে। কেউ দেখে নীল-কালো, কেউ দেখে সাদা-সোনালী, আবার কয়েকজন দেখে বাদামীর আভা। একী জিনিস একেকজন একেক রং দেখেছে, কীভাবে এটি সম্ভব! এই উত্তর খুঁজতে গিয়ে সাধারন মানুষের সামনে উঠে আসে এক অজানা দিক। আমরা খোলা চোখে যা দেখি, আমাদের চারপাশের সব মানুষ কি একইভাবে একই রং দেখে? এর উত্তর হলো, না।
রহস্যময় জামাঃ ঘটনার সূত্রপাত
সিসিলিয়া ব্লীসডেইল নিজের মেয়ের বিয়েতে পরার জন্য জামাটির ছবি তোলেন ২০১৫ সালের শুরুতেই। মেয়ের বিয়েতে পরার জন্য তিনি প্রাথমিকভাবে দোকানের তিনটি জামা বেছে নেন। আর তিনটি ছবি তুলে মেয়েকে পাঠান। শপিং শেষ করে বাড়ি ফেরার পথেতিনি মেয়েকে এস.এম.এস পাঠান – “আমি তৃতীয় জামাটা কিনেছি”। মেয়ে ফিরতি এস.এম.এস এ পাঠায় – “ওহ! সেই সাদা-সোনালী জামাটা?”। মেয়ের কথা শুনে তো তিনি পুরো অবাক! নীল-কালো জামাকে মেয়ে সাদা-সোনালী কেন বলছে?
এরপরই শুরু হয় এক মজার তর্ক। একই ছবি দেখে, একেকজন মানুষ একেক রং বলতে থাকে। একমত হতে না পেরে, সিসিলিয়ার মেয়ে ছবিটি ফেইসবুকে পোস্ট করে। পরবর্তী এক সপ্তাহ স্থানীয় মানুষ এটা নিয়ে তর্ক করতেই থাকে। একদল বলে সাদা জামা, সোনালী লেইস; আরেকদল বলে নীল জামা, কালো লেইস। বিয়ের আসরে সিসিলিয়া জামাটি পরে আসে এবং সব অতিথিরা দেখে যে সেটা একটি নীল জামা, সাথে কালো লেইস। কিন্তু তারপরও ছবিটি নিয়ে তর্ক চলতেই থাকে। কারন ছবিটিতে কেউ দেখে নীল-কালো, কেউ দেখে সাদা-সোনালী। #TheDress হ্যাশট্যাগ দিয়ে ইন্টারনেট জগত হয়ে উঠে সরগরম। বৈজ্ঞানিক ব্যাখাঃ চারপাশের তুমুল তর্ক দেখে এম.আই.টি (Massachusetts Institute of Technology, MIT) এর বিজ্ঞানীরা এর উপরে গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নেন। আর সেই গবেষণায় পাওয়া ব্যাখ্যা প্রকাশ করা হয় Current Biology জার্নালে।
- প্রথমেই ১৪০০ মানুষকে বেছে নেওয়া হয় জরিপে অংশ নেওয়ার জন্য। এর মধ্যে ৩০০ মানুষ আগে কখনো এই ছবিটি দেখেনি।
- জরিপের মতামত অনুযায়ী এবং জামাটির রং কেমন দেখছে সেই ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা তিন দল মানুষ খুঁজে পান – নীল-কালো, সাদা-সোনালী। আর ছোট একটি দল বলছে নীল-বাদামী।
- ৫৭% মানুষ দেখে নীল-কালো। ৩০% সাদা-সোনালী। বাকী ১৩% আরো কিছু টাইপ।
- বিজ্ঞানীদের মতে যারা প্রাকৃতিক আলো এবং দিনের আলোতে বেশী সময় থাকে তারা সাদা-সোনালী জামা দেখতে পায়। বয়স্ক ব্যাক্তি এবং নারীদের সংখ্যা এই দলে বেশী।
- আর যারা কৃত্রিম আলোতে বেশী থাকে তারা দেখছে নীল-কালো। অপেক্ষাকৃত তরুণরা এই দলে বেশী।
আলো বস্তু থেকে প্রতিফলিত হয়ে বিভিন্ন ওয়েভলেনথ এর মাধ্যমে মানুষের চোখের রেটিনাতে প্রবেশ করে। সেই আলো আলোক সংবেদনশীল কোণ সেল গুলোকে সক্রিয় করে। তারপর মস্তিষ্ক বের করে যে সে কোন রং দেখতে পাচ্ছে। বিজ্ঞানিদের মতে, একজন ব্যাক্তির মস্তিষ্ক এবং দৃষ্টিশক্তিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলো সে কীভাবে দেখছে; ছোট, নীলচে ওয়েভলেনথ নাকি অপেক্ষাকৃত বড়, লালচে ওয়েভলেনথ। আর এর উপর নির্ভর করবে এই জামাটির ছবি সেই ব্যাক্তি কোন রংয়ে দেখতে পাবে। এই পুরো প্রক্রিয়া সব মানুষের জন্য একদম একই নয়। তাই এক ছবি একেকজন একেক রং দেখতে পায়। বাম অথবা ডান দিকের মস্তিষ্কের কোন প্রভাব এখানে নেই।
উপরের ছবিটি জামাটির আসল ছবি। আপনি কোন রং দেখতে পাচ্ছেন?