আমেরিকার সবচেয়ে বিখ্যাত বাড়ি হোয়াইট হাউস। ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্টের দফতর। যেখানে দিনের আলোয় চলে রোজকার কাজ আর রাত নামলেই থমকে দাঁড়ায় অজানা ইতিহাস। ঘুরে বেড়ায় অশরীরী আত্মা।প্রথমদিকে সুরম্য এই ভবনটির নাম হোয়াইট হাউজ ছিল না। প্রথমদিকে ভবনটির রং ছিল ধূসর রংয়ের। ব্রিটিশ সৈন্যদের দেওয়া আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর ভবনটি পুন:নির্মাণ করা হয়। তখন ধূসর রংয়ের পরিবর্তে ধবধবে সাদা রংয়ে রাঙানো হয় ভবনটিকে। ইতিহাসে এই সাদা ভবনটি বহু ঘটনার জন্ম দিয়েছিল। যদিও কয়েকজন মানুষ বুঝতে পেরেছিলো যে , হোয়াইট হাউজ হয়তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে ভুতুড়ে জায়গাগুলোর মধ্যে একটি। অনেক সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী সদস্যরা অদ্ভুত ঘটনা বা ভয়ঙ্কর দৃশ্যের গল্পগুলি বর্ণনা করেছেন।
রোজ গার্ডেনঃ
রোজ গার্ডেন মূলত প্রেসিডেন্টের প্রেস কনফারেন্স হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। গার্ডেনটি মূলত ১৮০০ এর দশকের প্রথম দিকে ফার্স্ট লেডি ডেলি ম্যাডিসনের দ্বারা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।এক শতাব্দী পরে যখন ফার্স্ট লেডি ইলেন উইলসন গার্ডেনটি উৎখাতের নির্দেশ দেন তখন বাগানের শ্রমিকরা রিপোর্ট করেছিল যে ম্যাডিসনের আত্মা নাকি গার্ডেনে ঘুরে বেড়ায় এবং তাদের বাগানকে উৎখাতের কাজে বাধা সৃষ্টি করতো। সেই সময় থেকে, হোয়াইট হাউসের ভেতরের লোকজন একটি অদ্ভুত এবং অস্পষ্ট গন্ধের সন্ধান পেয়েছিল।
১৯৫০ সালে হোয়াইট হাউসের বেজমেন্ট পুনর্নির্মাণ করা হয়। অনেকের মতে, এখানে অতৃপ্ত অশরীরী আত্মা ঘুরে বেড়ায়। মাঝে মাঝে এখানে বিশাল আকৃতির বিড়াল দেখা যায়। অনেকে আবার ছোট বিড়াল ছানা দেখতে পান।
হলুদ ওভাল রুমঃ
আব্রাহাম লিংকনের প্রশাসনের সময়, এই রুমে তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ছিল এবং তার হোয়াইট হাউসের প্রিয় কক্ষগুলোর মধ্যে একটি। বেশিরভাগ হোয়াইট হাউস কর্মীরা এই রুমের জানালাগুলির দিকে তাকিয়ে আব্রাহাম লিংকনকে দেখেছেন। ফার্স্ট লেডি গ্রেস কুলিজও তাকে এখানে দেখেছেন বলে দাবি করেছিলেন। লিংকন ছাড়াও, ডেভিড বার্নসের কণ্ঠ এই রুম থেকে শুনতে পাওয়া গিয়েছিলো বলে দাবি করা হয়।
হোয়াইট হাউজের চিলেকোঠাঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের স্বল্পতম সময়ের প্রেসিডেন্ট ছিলেন উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন। কারণ হিসেবে জানা যায়, তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই নিউমোনিয়াতে ভুগে মারা যান।লোকে মুখে শোনা যায় যে, এখন পর্যন্ত হ্যারিসনের ভূতের অস্তিত্ব মেলে ওভাল হাউসের উপরের চিলেকোঠায়।যদিও পরবর্তী সময়ের কয়েকজন প্রেসিডেন্ট , মাঝে মাঝেই চিলেকোঠা থেকেই অদ্ভুত রকমের শব্দ শুনতে পেতেন বলে জানিয়েছিলেন।
হোয়াইট হাউজের প্রবেশের উত্তরদ্বারঃ
হোয়াইট হাউজে প্রবেশের উত্তরদ্বারে মাঝে মাঝে পাহারারত অবস্থায় এমন সব দারোয়ানদের দেখা যায় যারা নাকি বেঁচে নেই।সম্ভবত সবচেয়ে অদ্ভুত একজন হলো অ্যানি স্যুরাট, যাকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যকবার দেখা গিয়েছে। ১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট লিংকনকে হত্যার অভিযোগে অ্যানির মায়ের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তাই স্যুরাটের প্রেতাত্মাকে উত্তরদ্বারে দেখা যায় তার মায়ের মুক্তি প্রার্থনারত অবস্থায়।এখনো জুলাইয়ের ৭ তারিখ মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে এমন ঘটনা ঘটে।
রোজ রুমঃ
একবার নেদারল্যান্ডসের রানী উইলহেলমিনা এক রাতের জন্য রোজ রুমে ছিলেন। তিনি দেখেন বড় হলরুমে লিংকন দাঁড়িয়ে আছেন এবং মাঝে মাঝে তার দরজায় কড়া নাড়ছেন। অনেকেই বিশ্বাস করেন হোয়াইট হাউস এখনো প্রেসিডেন্ট লিংকনের দখলে।সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি গ্রেস কুলিজও একবার ওভাল অফিসের জানালায় নাকি লিংকনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন।
ইস্ট রুমঃ
প্রথম মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে হোয়াইট হাউসে বসবাস করেছিলেন জন অ্যাডামস। সে সময়ের ফার্স্ট লেডি অ্যাবেগেইল অ্যাডামস জামাকাপড় ধোওয়ার পর ইস্ট রুমে এসে সেগুলোকে শুকোতেন। ফার্স্ট লেডির মৃত্যুর পরও তাকে ওইভাবে কাপড় শুকোতে দেখেছেন অনেকে।মাঝে মাঝে ভেজা কাপড়ের গন্ধ এবং সাবানের সুবাস ভেসে আসে বলে ওখানকার পরিচারিকাদের অভিমত। হোয়াইট হাউসের বহু ভূতের মধ্যে অ্যাবেগেইল অ্যাডামসের ভূতই নাকি সবচেয়ে পুরনো বলে মনে করা হয়।
লিঙ্কনের বেডরুমঃ
সকলের ভাষ্যমতে সবচেয়ে বেশিবার দেখা গেছে আব্রাহাম লিঙ্কনের অশরীরি আত্মাকে। তাই এই প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টের বেডরুমে তাকে দেখতে পাও্যা যাবে, সেটাই স্বাভাবিক।স্যার উইনস্টন চার্চিল লিঙ্কনের শোবার ঘরে ঘুমোতে ঘোর আপত্তি জানিয়েছিলেন। তার মতে তিনি গোসল শেষ করে বাথরুম থেকে শোবার ঘরে ফিরে দেখেন ফায়ারপ্লেসের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং আব্রাহাম লিঙ্কন! শুধু উইনস্টন নন, প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্ট, ফার্স্ট লেডি জ্যাকলিন কেনেডি, লেডিবার্ড জনসন সহ আরো অনেকেই লিঙ্কনকে ফায়ারপ্লেসের পাশে দেখছেন!
তথ্য সুত্রঃ haunted-areas-of-the-whitehouse