যে পাঁচটি কারণে আপনার আরো বেশি করে বই পড়া উচিত…

বিশ্বের সকল শখের মধ্যে বই পড়াই হয়তো সর্বশ্রেষ্ঠ শখ। এটি প্রতিদিনকার ব্যস্ততা থেকে আপনার মনকে শান্ত ও শিথিল করে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। তাছাড়া বইয়ের কখনও ব্যাটারি ফুরিয়ে যায় না, ফলে আপনি সবসময়, সবখানে এটি ব্যবহার করতে পারেন।

বই পড়া কোন সময় নষ্টকারী অভ্যাস নয়, বরং এ অভ্যাসের অনেক উপকারী দিকও রয়েছে। মস্তিষ্কের চর্চার জন্যে বই হতে পারে চমৎকার একটি মাধ্যম। এই অভ্যাস স্মৃতিভ্রষ্টতা সহ বার্ধক্যজনিত অন্যান্য মানসিক রোগের ঝুঁকি কমায়।

চলুন জেনে নিই বই পড়ার অভ্যাস আমাদের মস্তিষ্কের ওপর আর কী কী উপকারী প্রভাব ফেলে –

(১) মস্তিষ্ককে কর্মতৎপর রাখে:

এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে এমন কাজ, যেমন বই পড়া বৃদ্ধ বয়সে মস্তিষ্কের চিন্তা শক্তি কমে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে এবং মধ্যবয়সীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

নিউরোলজি জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বই পড়ার কঠিন অভ্যাস স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়ার সমস্যা অনেকটাই রোধ করে। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে গবেষণায় যে দলটি বই পড়ার সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের মানসিক সক্ষমতা ৩২ শতাংশ ধীরে হ্রাস পেয়েছে অপরদিকে যারা অনিয়মিতভাবে মস্তিষ্ক উদ্দীপ্তকারী কাজ করেছে, তাদের মধ্যে মানসিক সক্ষমতা ৪৮ শতাংশ দ্রুত হারে হ্রাস পেয়েছে।

এই ফলাফল থেকেই বোঝা যাচ্ছে, মস্তিষ্ককে ব্যস্ত ও কর্মক্ষম রাখতে বই পড়ার ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ!

(২) মনঃসংযোগ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়:

আজকের এই আধুনিক যুগে জীবনযাত্রা অনেক বেশি ব্যস্ততা ও কোলাহলপূর্ণ। এমনকি কর্মস্থলের দায়িত্ব পালন শেষ হলেও গ্যাজেটের পর্দা থেকে মানুষের চোখ আর সরে না। সারাক্ষণ ই-মেইল, টুইটার, স্ন্যাপচ্যাট, ফেইসবুক আর ইউটিউবে ঘুরে বেড়াতেই ব্যস্ত। মানুষ এখন নিজের সাথে গোটা একটা বিনোদন কেন্দ্র নিয়েই ঘুরছে যেন। আর মস্তিষ্কের জন্যে এর অর্থ একটাই – কাজ, কাজ আর কাজ।

মানুষের মন যদি সারাক্ষণই এমন বিক্ষিপ্ততার মধ্যে থাকে, তাহলে মস্তিষ্ককে খুব অল্প সময়ের জন্যে বিশ্রাম দেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই মস্তিষ্কের শিথিলায়নের জন্যে একটা ভালো উপায় দরকার। আর সেই উপায়টি হচ্ছে বই পড়া। দৈনন্দিন জীবনের সব দুশ্চিন্তা আর মানসিক চাপ কাটিয়ে উঠতে বই দারুণ কাজে দেয়। বিজ্ঞানের দাবী, বই পড়া ৬৮ শতাংশ মানসিক চাপ কমায়। অর্থাৎ চাপ কমানোর অন্যান্য পন্থা যেমন- পার্কে হাঁটা বা গান শোনার তুলনায় বই পড়া অধিক কার্যকরী।

বিশ্বাস হচ্ছে না? নিজেই যাচাই করে দেখুন। আপনার কর্মস্থলে যাবার পথে প্রতিদিন ২০ মিনিট করে বই পড়ুন আর দেখুন, কীভাবে এই অভ্যাস আপনার ব্যস্ত জীবনের মানসিক চাপগুলোকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

blank

(৩) : সহমর্মীতা জাগিয়ে তোলে

বিভিন্ন মানুষের চাহিদা বা বিশ্বাসের ভিন্নতা বুঝতে এবং মেনে নিতে পারার ক্ষমতা বই পড়ার মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। উদাহরণস্বরূপ, সায়েন্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক গবেষণায় সাহিত্যিক ফিকশন পড়তে দেওয়া হয় এবং মস্তিষ্কের আবেগ ও চিন্তাশীলতার ওপর বই পড়া কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা পরীক্ষা করা হয়। গবেষণাটিতে দেখা যায় মানুষের অনুভূতি বিশ্লেষণ করে মানুষ কী ভাবছে তা বোঝার ক্ষেত্রে ফিকশন বেশ সহায়ক হয়। তার মানে একজন বইপ্রেমিক মানুষ বেশি এম্প্যাথেটিক বা সহমর্মী হন, কারণ তিনি জানেন, মানুষের সাথে কীভাবে সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়। এটা একটা বিশেষ দক্ষতা, যা কঠিন পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধান খুঁজতে সাহায্য করতে পারে।

(৪) ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে:

অনেকে ঘুমানোর আগে স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট থেকে পড়তে পছন্দ করেন। তবে এটা করা উচিত নয়। কারণ আলো নিঃসরণকারী এসব ডিভাইস ঘুমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
স্লিপ সায়েন্টিস্ট অ্যান ম্যারি চ্যাং, যিনি ঘুমের ওপর আলো নিঃসরণকারী ই-বুক রিডার ও আইপ্যাডের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন, জানান যে, এসব বৈদ্যুতিক ডিভাইস থেকে নিঃসৃত স্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্যের নীল আলো শরীরের স্বাভাবিক circadian rhythmকে বাধা দান করে। সুতরাং ট্যাবলেট বা স্মার্টফোনে পড়ার অভ্যাস স্লিপ ডেফিসিয়েন্সি বৃদ্ধি করবে এবং বিছানায় যত বেশি সময়ই ঘুমিয়ে কাটান না কেন, পরদিন সকালে আপনি ক্লান্ত বোধ করবেন। অপরদিকে ঘুমানোর আগে কাগজে ছাপানো বই পড়লে আপনার ঘুমে তো ব্যাঘাত ঘটবেই না, বরং এটি সারাদিনের মানসিক চাপ দূর করে আপনাকে দ্রুত ঘুমিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

blank

(৫) Alzheimer’s disease সহ অন্যান্য মানসিক সমস্যাকে প্রতিহত করে:

বিজ্ঞান বলছে, প্রচুর বই পড়ার অভ্যাস Alzheimer’s disease জনিত স্মৃতিভ্রংশ সহ বহু মানসিক সমস্যাকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে
সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গে এক দল বিজ্ঞানী গবেষণা করে দেখেছেন যে, গভীর নিমগ্নতার সাথে বই পড়ার সঙ্গে incident dementia’র ঝুঁকি হ্রাস পাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। বই পড়া একটি মস্তিষ্ক উদ্দীপ্তকারী অভ্যাস যা মানসিক কর্মক্ষমতাকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।

বই পড়ার এতসব উপকারিতা জানার পর নিশ্চয়ই আপনিও চাইছেন বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে? তাহলে জেনে নিন বই পড়াকে অভ্যাসে পরিণত করার কিছু কৌশল। এরপর যে কৌশলগুলো সম্ভব, সেগুলোকে কাজে পরিণত করুন:
● নিজের সাথে সবসময় বই রাখুন। যেখানেই যাবেন, সাথে করে বই নিয়ে যান। একটু অবসর পেলেই কয়েক পাতা পড়ে ফেলুন।
● টেলিভিশন ও ইন্টারনেটে সময় কম দিয়ে সেই সময়টা বই পড়ার কাজে ব্যবহার করুন।
● যে ধরণের বই পড়তে আপনি আনন্দ ও আগ্রহ বোধ করছেন, সেটিই পড়ুন। আপনার মনোযোগ ধরে রাখতে পারছে, এমন বই পড়লে আপনি বই পড়ায় আনন্দ খুঁজে পাবেন এবং নিজেই এটিকে অভ্যাসে পরিণত করতে আরও সচেষ্ট হবেন।
● কোনো নতুন অভ্যাস তৈরি করতে হলে সেই কাজটি নিয়মিতভাবে করে যেতে হবে। সুতরাং রাতে খাবার পর বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক ঘণ্টা সময় বই পড়ার জন্যে বরাদ্দ রাখতে পারেন।

Source: goalcast.com