আজ আপনাদের বলবো হিটলারের গল্প। যে হিটলার চলে এসেছিলো নিউইয়র্ক সিটিতে, যোগদান করেছিলো যুক্তরাষ্ট্রীয় নৌবাহিনীতে। বিয়ে করে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করে মারা গিয়েছিলো আশির দশকে। আজ বলবো উইলিয়াম প্যাট্রিক হিটলারের কথা, যে ছিলো আ্যডলফ হিটলারের ভাইপো।
উইলিয়াম “উইলি” হিটলার ১৯১১ সালের ১২ই মার্চ আ্যডলফ হিটলারের সৎ ভাই আ্যলইস হিটলারের ঔরসে জন্মগ্রহণ করেন লিভারপুল শহরে। আ্যলইস হিটলার পরিবার নিয়ে জার্মান থেকে চলে আসেন আয়ারলেন্ডে, সেখানে বিয়ে করেন ব্রিজেট কে, তারপর তারা চলে আসেন ইংল্যান্ডে। যার কারণে উইলি মৃত্যু বরণ করে একজন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে।
১৯২৯ সালে উইলির বয়স যখন ১৮ বছর সে যায় জার্মানিতে, তার চাচা আ্যডলফের সাথে দেখা করতে। তখন হিটলার একটু একটু জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ১৯২৯-১৯৩১, উইলি তার কাকাকে খুব কাছ থেকে দেখেছে, জেনেছে। এই ১৯৩১ সালেই হিটলার খ্যাতির (!) শীর্ষে উঠে আসে। এবং এই ১৯৩১ সালেই কাকা-ভাইপোর সম্পর্কে মোড় আসে।
উইলি লিখতে শুরু করে আ্যডলফ হিটলারকে নিয়ে। লেখাগুলো ব্রিটিশ প্রেস প্রকাশ করা শুরু করে। এতে ভাইপোর উপর রেগে যান আ্যডলফ। উইলিকে ডেকে নিয়ে যান বার্লিনে। কিন্তু লেখা বন্ধ করতে অস্বীকার করেন উইলি। ফিরে আসেন ইংল্যান্ডে।
সন ১৯৩২, গোটা বিশ্ব হিটলাকরকে সমীহ করছে, ঠিক তখনই ব্রিটিশ প্রেস আ্যডলফ হিটলারকে নিয়ে কোন লেখা প্রকাশ করবে না বলে জানিয়ে দেয়। উইলির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে! উইলি যা খ্যাতি পেয়েছিলো, তা বাতাসে উবে গেলো এক নিমিষে। আ্যডলফের চোখে ভালো সাজার জন্য চাকরীচ্যুত করা হলো উইলিকে। কেউ আর উইলিকে চাকরী দিতে চাইতো না। গরীব, বেকার, অভাবে বিপর্যস্ত উইলি সিদ্ধান্ত নেয় জার্মানে ফিরে যাওয়ার। উইলি জার্মানে গিয়ে সাহায্য চায় আ্যডলফ হিটলারের। ভাইপো ফিরে যায় তার কাকার কাছে। উইলি ভেবেছিলো, আ্যডলফ জার্মানিতে তার চাকরীর ব্যবস্থা করে দিবে!
সেই আশায় গুড়ে বালি! আ্যডলফ সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন, নিজের পরিবার বা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য তিনি জার্মানির চ্যান্সেলর হননি। নিজের প্রভাব খাটিয়ে তার ভাইপোকে চাকরী দেয়াটা হবে জার্মানের অন্য একজন নাগরিকের ভাগ্য থেকে তার প্রাপ্য চাকরী ছিনিয়ে নেয়া। ব্যর্থ মনোরথ নিয়ে আবার ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন উইলি।
ব্রিটেন আর জার্মানির বিবাদ বাড়তে থাকে। কেউ উইলিকে তার হিটলার পদবীর জন্য চাকরী দিতে চাইতো না। শেষ পর্যন্ত মন গলে আ্যডলফ হিটলারের। ভাইপোকে সে ডেকে পাঠায় জার্মানিতে। বিশাল অংকের বেতনের চাকরী অফার করে তাকে। কিন্তু আ্যডলফ শর্ত দেয় যে, উইলিকে ত্যাগ করতে হবে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব। উইলি অস্বীকার করে তা মানতে। উইলি তার কাকাকে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করে। তাদের পরিবারের এক গুজব ছিলো যে, হিটলার ছিলো একজন ইহুদী ব্যবসায়ীর জন্মের ছেলে। এই কথা বলেই সে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করছিলো হিটলারকে। কিন্তু হিটলার পাত্তাই দেয়নি তার এইসব কথায়!
শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এলেন উইলির বাবা আ্যলইস। তিনি তার ছেলেকে জোর করে ব্রিটেনে পাঠিয়ে দিলেন তার ছেলেকে। কিন্তু হাজার হলেও উইলি হিটলারের রক্ত। তাই তিনি জার্মানিতে উইলিকে নিয়ে এসে বলেন যে, মাসে মাসে টাকা দিবেন উইলিকে যে পর্যন্ত না উইলি চাকরি পায়। অবশেষে জার্মানের একটা ব্যংকে পেটে ভাতে বেতনে চাকরি পায় উইলি। কিন্তু সেটাও ছেড়ে দেয় কারণ ইংল্যান্ডে উইলি তার মা কে টাকা পাঠাতে পারতো না। কেননা, জার্মানের বাইরে টাকা পাঠানোর অনুমতি ছিলো না। চাকরি ছাড়ার পরেই পুলিশ উইলিকে গ্রেফতার করে গাড়ি চুরি করার অপরাধে। হিটলার তাকে ছাড়িয়ে আনার কোন চেষ্টা করেনি। উল্টো অপদার্থ বলে চারটে কথা শুনিয়ে দেয়। এই রাগ থেকেই পরবর্তীতে উইলি “Look” ম্যাগাজিনে আর্টিকেল লিখে “Why I Hate my Uncle”।
১৯৩৯ উইলি আবার ব্রিটেনে ফিরে আসে। কিন্তু ব্রিটেন হিটলারের ভাইপোকে দেশে রাখতে চায়নি। তাই উইলি চলে আসে আ্যমেরিকায়।
যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে ইউরোপের ঝামেলায় নাক গলাতে চায়নি। কিন্তু আমেরিকা যুদ্ধে নামে ১৯৪১ সালে, পার্ল হার্বার ঘটনার পরে। তখনও বেকার, উইলি প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট এর কাছে চিঠি লিখেন আর্মিতে যোগদানের অনুমতির জন্য। সবকিছু দেখে তাকে অনুমতি দেয়া হয় আর্মিতে যোগ দেয়ার। ভাগ্য ফিরে যায় উইলির। একজন একনিষ্ঠ যোদ্ধার মতো কাজ করে রিটায়ার করেন তিনি। কিন্তু উইলি তার পদবী আর সাথে রাখেনি। উইলি নিজের নাম পালটে রাখে স্টুয়ার্ট হওস্টন।
উইলি বিয়ে করেছিলো, চার সন্তানের জনক ও হয়েছিলো। শেষ জীবনটা খুব সুখে কেটেছিলো উইলির। হিটলারে নামের কালো ছায়া কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলো সে। ১৯৮৭ সালের ১৪ জুলাই নিউইয়র্ক এর লং আইল্যান্ডে নিজ বাড়িতে মারা যায় উইলি। কিন্তু কখনো যদি নিউইয়র্কের হলি সেপালচার সিমিট্রিতে উইলির সমাধি দেখতে যান, স্টুয়ার্ট হওস্টন নামে খুঁজবেন কিন্তু!