পৃথিবী,তিন অক্ষরের ছোট্ট একটা শব্দ।কিন্তু এর বিশালত্ব যে কতটুকু তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয়না।আমাদের এই গ্রহের প্রতিটি জায়গাতেই আছে প্রকৃতির নানা অপরূপ নিদর্শন।বাংলাদেশের মনকাড়া জায়গাগুলোর কথাতো কম-বেশি সবাই জানি,আজ নাহয় উত্তর আমেরিকার কিছু বিখ্যাত জায়গার কথা আপনাদের বলি।
রেডউড গাছে ঘেরা ক্যালিফোর্নিয়ার ন্যাশনাল পার্ক
কোনো এক শীতের সকালে আপনি হাঁটতে বেড়িয়েছেন।চারদিকে মিষ্টি কুয়াশা,পাশে শতবর্ষের পুরনো রেডউড গাছ আর পায়ের নিচে ভেলভেটের মত মস উদ্ভিদের স্পর্শ।
আহ! মনে হবে কি এখনি হয়তোবা কোনো ডাইনোসর এসে আপনার সামনে দিয়ে হেঁটে যাবে কিংবা সামনে এসে দাঁড়াবে অদ্ভুত কোনো জন্তু।অমুল্য এই অভিজ্ঞতা পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে ক্যালিফোর্নিয়ার ন্যাশনাল পার্কে।
ইয়োসেমিতা পার্কের হাজার বছরের দৈত্যাকার গ্রানাইটগুলো
আজকাল অনেকেই শখের বসে পাহাড়ে ট্র্যাকিং করতে যান।কিন্তু শক্ত গ্রানাইটের ট্র্যাকিং করার মত পাহাড় আমাদের দেশে তেমন নেই।তাই ৮৭ মিলিয়ন বছরের পুরনো গ্রানাইটের পাহাড়ে চড়তে হলে ক্যালিফোর্নিয়ার ইয়োসেমিতা পার্কই আপনার অবলম্বন।শুধু গ্রানাইটের পাহাড়ই কিন্তু এখানে একমাত্র আকর্ষণ না,এখানে আছে মিষ্টি ফুল ছাওয়া ভ্যালি আর মনকাড়া ইউওসেমিতা জলপ্রপাত।
অদ্ভুত আর্চে ভরা ইউটাহ ন্যাশনাল পার্ক
সিনেমা কিংবা ডিসকভারির কোনো প্রোগ্রামে নিরেট বেলেপাথরের কিছু ত্যাড়া-বাঁকা অদ্ভুত ধরনের বাকানো আর্চ দেখেছেন?এগুলোই হচ্ছে iউটাহ ন্যাশনাল পার্কের সেই বিখ্যাত আর্চগুলো।ল্যান্ডস্কেপ আর্চ,ডাবল আর্চ এবং ডেলিকেট আর্চ নামের বিখ্যাত ফটোগ্রাফিক আর্চ ছাড়াও সেখানে আরো প্রায় ২০০০ রকমের এমন আর্চ আছে।
মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে তোয়াক্কা না তালগাছের মত একপায়ে দাড়িয়ে থাকা এই আর্চগুলোকে দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমান হাজারো পর্যটক।
জমজ আগ্নেয়গিরির মাউই
হাওয়াই অনেকেরই প্রিয় ভ্রমনস্থান।হোকনা নিভে যাওয়া আগ্নেয়গিরি,সাগরের পানিতে পা ডুবিয়ে সবুজে ছাওয়া এমন জমজ আগ্নেয়গিরি আর কোথায় আছে?
৩০ মাইল লম্বা এই দ্বীপে আপনি লাভা-পাথরের ছড়াছড়িও দেখতে পাবেন সবখানে।এসবের মাঝে আগ্নেয়পরবতের পা ছুঁয়ে যাওয়া সমুদ্রের পাড়ে বসে ঠান্ডা জুস খেতে কার না মন আনচান করবে?
বরফের রাজ্য আলাস্কার গ্লেসিয়ার বে
গ্লোবাল ওয়ারমিং এর কারণে আমাদের পরিবেশ নানা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত।কিন্তু গরু মেরে জুতা দানের মত এই গ্লোবাল ওয়ারমিং এর ফলে ধীরে ধীরে বরফের আস্তর সরে গিয়ে উঁকি দিচ্ছে অনেক সুন্দর জায়গা।
তেমনি এক স্থান হল বন,উঁচু পাহাড়,বিশাল গ্লেসিয়ার এবং সামুদ্রিক দৃশ্যে ভরপুর আলাস্কার গ্লেসিয়ার বে।২৫০ বছর ধরে বরফ গলতে গলতে এই জায়গার আবিরভাব হয়েছে।অসাধারন এই বরফের রাজ্যে বেড়াতে গেলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও আপনাকে সঙ্গ দিবে পিঠে কুজওয়ালা তিমি আর সি-লায়ন।
ওয়েস্টার্ন মুভির সেট-মনুমেন্ট ভ্যালি
সেবা প্রকাশনীর ওয়েস্টার্ন বইগুলোর কথা মনে আছেতো?সেই যে আউটল আর নায়কের মারামারি হত উন্মুক্তে পাথুরে ছাওয়া এলাকাগুলোতে?তেমনই এলাকা হলো এই মনুমেনট ভ্যালি।
উষর প্রান্তরে রুক্ষ পাথরের মাঝে ঘোড়া দাপিয়ে বেড়ানো ওয়েস্টার্ন হিরোদের মত নিজেকে অনুভব করতে চাইলে বেড়িয়ে আসতে পারেন আরিজোনার মনুমেন্ট ভ্যালিতে।
নিউইয়র্কের বিখ্যাত নায়াগ্রা ফলস এবং তার প্রতিবেশীরা
নায়াগ্রা ফলসের কথা নতুন করে আর কি বলব,এর কথা শোনেননি এমন পাঠক মনে হয় নেই।প্রকৃতির এই অপূর্ব সৃষ্টি আমাদের প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করে চলেছে।কিন্তু এই ফলস ছাড়াও আরো আছে হরস-শু জলপ্রপাত সহ কয়েকটা ছোটোখাট জলপ্রপাত।কেবল কারে করে এসবের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় বুঝবেন এদের আসল সৌন্দর্যটুকু।
এইতো গেলো অল্পকিছু জনপ্রিয় ভ্রমনস্থানের কথা,এর বাইরেও কিন্তু আরো অনেক অসাধারণ জায়গা আছে উত্তর আমেরিকাতে।যদি কোনোদিন সময় পান তবে দেখে আসবেন সবগুলোই।পৃথিবীর নানা প্রান্তের নানারকম বৈশিষ্ট্যমন্ডিত এই জায়গাগুলো আপনাকে দিবে নতুন করে জীবনকে উপভোগের শক্তি।