ফটোগ্রাফি দিবসে জানুন ফটোগ্রাফি সম্পর্কিত ১৫ টি তথ্য

August-19th-Is-World-Photography-Day-Wishes-Pictureবিশ্বের ১১১টি বেশি দেশে আজ অর্থাৎ ১৯ আগষ্ট পালিত হচ্ছে বিশ্ব ফটো দিবস। ফটোগ্রাফি বলতে শুধুমাত্র ” চিজ—— ক্লিক ক্লিক” না। যদিও এই চিজ, স্মাইল বলে বলে ইদানিং অনেকেই নিজেকে ফটোগ্রাফার পরিচয় দেয়। কিন্ত জানে না ক্যামেরা নিয়ে পেশাদারিত্ব দেখাতে গেলে জানতে হয় অনেক কিছু।

বর্তমান প্রজন্ম তাদের দাদা-দাদীর সাদা-কালো ছবির খুশি কি তা অনুভব করতে পারবে না। ঐ একটি ছবি তুলতে তাদের হয়তো যেতে হয়েছিল অনেক দূরের এক হাটের দোকানে। ভালো ছবি তোলার জন্য মুখে হাসি ধরে রাখতে হয়েছিল হয়তো ১০ থেকে ১৫ মিনিট। হাতে পাওয়ার থেকে যেটাকে যত্ন করা হয়েছিল নিজেদের থেকে বেশি। তাই তো দাদা-দাদীকে বা নানা-নানীর জীব্দশায় কাছে থাকতে না পারলেও তাদের সেই ছবিতে দেখার সুযোগ আমাদের হয়েছে।

এই সাদা-কালো ছবির এক কপি নিয়ে সারেং হয়তো রেংগুন গিয়েছিল, সারেং বউয়ের কাছেও হয়তো ছিল একটা কপি। যা দেখে দেখে তারা পার করেছিল কয়েক বছরের আর ভুলে ছিল দূরে থাকার কষ্ট।

এখন ছবি তোলার বিষয়টি খুবই সহজ। ফিল্মের রোল শেষ হবার ভয় নেই। একটি ক্লিক ভালো না আসলে সাথে সাথে ডিলিট। তাছাড়া সাথে আছে শ্যামলা বর্ণকে ফর্সা বানানোর নানা ধরণের এ্যাপস।

ক্যামেরা আর ছবি এখন শুধু প্রিয় মুহুর্তকে ধরে রাখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটিকে নেতিবাচক ভাবে ব্যবহার করে অনেক অঘটন ঘটানো হচ্ছে। কারো মাথা কেটে অন্য কারো মাথা লাগিয়ে “সম্পর্ক ভাঙ্গার ” মত মারাত্মক কাজও করা যায়। সেই সাথে মোবাইল ক্যামেরার সাহায্যে পথে ঘাটে ঘটা নানা রকমের অনিয়ম-দুর্নিতি এবং মানুষের অসহায়ত্বের নানা রুপের ছবি ধারণ করে ইতিবাচক পরিবর্তন আনাও সম্ভব হচ্ছে।

মূল এডোব ফটোশপ প্রোগ্রাম সৃষ্টি করে দুই ভাই থমাস এবং জন নল। যা পরবর্তীতে পূর্ণ ছবির এডিটিং সফটওয়ার হিসেবে সামনে আসে। এটি রিলিজ হয় ১৯৯০ সালে, যেটাকে আধুনিক আশ্চর্য্য হিসাবে প্রশংসা করা হয়।

বর্তমানে ম্যাগাজিন, প্রিন্ট মিডিয়া, ফটোগ্রাফাররা, ওয়েভ ডিজাইনাররা বানিজ্যিক ছবি তৈরীতে এই সফটওয়ার ব্যবহার করে থাকেন।

যারা ফটোগ্রাফার হতে চায় এবং যারা নতুন কিছু নিত্য জানতে আগ্রহী তাদের জন্য আজ ফটো দিবসে ফটোগ্রাফি আর ক্যামেরা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপহার দিলাম। জানুন আর প্রিয় বাংলাদেশ ও প্রিয় মানুষের সুন্দর সুন্দর ছবি তুলুন।

০১) ফটোগ্রাফি বিবর্তনের ইতিহাসে প্রথমেই যার অবদান স্বীকার করতে হবে তিনি গ্রীক দার্শনিক এরিষ্টটল। অপ্টিক্স গবেষণার ক্ষেত্রে তার ডকুমেন্টেশন এবং ডার্ক চেম্বার থিওরী নেতৃত্ব দিয়েছে।

০২) ইষ্টম্যান কোডাকের প্রকৌশলী স্টিভ সেসনের হাত ধরে প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা নির্মিত হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। যার ওজন ছিল আট পাউণ্ড এবং মেগাপিক্সল ছিল ০.০১, সাদা-কালো রেকর্ড। প্রথম ছবি তৈরী করতে সময় লেগেছিল ২৩ সেকেন্ড।

০৩) ১৮২৭ সালে জোসেফ নিসেফর নিপসে প্রথম ক্যামেরা অবস্কোরা(অপটিকাল ডিভাইস )প্রক্রিয়া ব্যবহার করে রাসায়নিক যৌগ সম্বনয়ে সানপ্রিন্ট তৈরী করে এবং ফটোগ্রাফিক ইমেজ তৈরী করেন। এর আগে মানুষ এটি আঁকার ক্ষেত্রে কিংবা কিছু দেখার জন্য ব্যবহার করতো।

অর্থাৎ এই প্রক্রিয়ায় সূর্যের রশ্নি একটি অন্ধকার বক্সের এক পাশের পিনহোল দিয়ে প্রবেশ করে এবং অপর পাশে একটি পর্দায় একটি চিত্র প্রতিফলিত হয়। যার সাহায্যে শিল্পিরা চিত্রের জন্য তা কাগজের উপর অনুসরন করতে পারতো।১ই প্রক্রিয়ায় ৮ঘন্টার সূর্য আলো প্রয়োজন হতো।

০৪) “aerial photography” অর্থাৎ সরাসরি উপর থেকে স্থল ফটোগ্রাফ বা আলোকচিত্র নেওয়া। সহজ ভাষায় বৈমানিক আলোকচিত্র বলা যায়। ফরাসী ফটোগ্রাফার গাস্ফার ফেলিক্স এই ধরণের আলোকচিত্র নিয়ে ছিলেন ১৮৫৮ সালে। তিনি একজন বেলুনারাহী ছিলেন এবং বেলুনে চড়ে তিনি এই ধরণের ছবি নিয়েছিলেন।

০৫) পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ক্যামেরার একটি ছিল “1923 Leica O-Series” যা WestLicht নিলামে বিক্রি হয়েছিল ২.৭৯ মিলিয়ন।

০৬) ১৯০৭ সালে লুমিয়ে ব্রাদাস অটোক্রম প্লেট উন্নতকরণের মধ্য দিয়ে প্রথম টেকসই রং প্রক্রিয়া প্রবর্তন করেন।

০৭) স্কটিশ পর্দাথবিদ জেমস ম্যাক্সোয়েল প্রথম রঙ্গিন ছবি তোলেন। তিনি লাল, নীল , হলুদ ফিল্টার ব্যবহার করে টারটন রিবনের তিনটি ছবি তৈরী করেন এবং পরে তিনটি ইমেজের সংমিশ্রণে চুড়ান্ত চিত্র পাওয়া যায়।

০৮) আলোকচিত্রকে জনসাধারণের কাছে আনেন জর্জ ইষ্টম্যান।১৮৮৮,৪ঠা সেপ্টেম্বর তিনি রোল ফিল্মের প্যাটেন্ট(আবিস্কৃত কোন কিছু প্রস্তুত করার সনদ) গ্রহন করেন। তিনি ৭৭ বছর বয়সে ১৯৩২ সালে আত্মহত্যা করেন। তার চিঠিতে লিখা ছিল ““My work is done. Why wait?”।

০৯) আলোকচিত্রের জন্য যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় তাকে বলা হয়” photographic fixatives”। যা এতো বিপদজনক এবং বিষাক্ত যে মুখে গেলে মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।

১০) অগাষ্ট ২০১৩ হিসাব অনুযায়ী গড়ে ফেইসবুক ব্যবহারকারী ৩৫০ মিলিয়ন ছবি আপলোড করে থাকে। ফেইসবুকে মোট এই যাবত ২৪০ বিলিয়ন ছবি আপলোড হয়েছে।

১১) পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখের ছবি তোলা হয় দক্ষিণ সুদানে “একটি শিশু আর একটি শকুন”র ছবি। যেখানে দুর্ভিক্ষের বিষয়টি ফুটে উঠে।যা পুলিৎজার পুরষ্কার জিতেছে। যা দেখলে আপনি আমি ভাষা হারিয়ে ফেলবো। তা তুলেছেন ফটোগ্রাফার কেভিন কার্টার । এই শট নেওয়ার তিন মাস পর তিনি আত্মহত্যা করেন।

১২) গিনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের বৃহত্তম ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা(এই পেশায় নতুন)অর্জন করেন নেদারল্যন্ডের Vereniging Wikimedia Nederland। তিনি উইকি লাভস মনুমেন্টস প্রতিযোগিতায় ১লা জুলাই ২০১১ থেকে ৩১ সেপ্টেম্বর ২০১১ পর্যন্ত ১৬৮,২০৮টি এট্রি জমা দেন।

১৩) ৪৪২৫ টি এন্টিক ক্যমেরা সংগ্রহে রেখে বিশ্বের বৃহত্তম ক্যামেরা সংগ্রাহকের তালিকা স্থান করে নিয়েছেন মুম্বাইয়ের দিলিস পারেখ।

১৪) রিফেলক্স ক্যমেরা প্রথম জনপ্রিয় হয় ১৯২০-১৯৩০ সালে। প্রথম বানিজ্যিক ডিজিটাল ডি এস এল আর ক্যমেরা (DSLRঃডিজিটাল সিঙ্গেল লেন্স রিফেলক্স) চালু করে কোডাক ১৯৯১ সালে।

১৫) ২০০০ সাল পরবর্তী , প্রযুক্তির উন্নতি এবং উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ায় ডিজিটাল ক্যামেরার জনপ্রিয়তার এক ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে বলা যায়।

ছবি তুলুন, দেশের অনাবিল সৌন্দর্য্ তুলে ধরুন। ছবি হোক পরিবর্তনের সাক্ষী। ছবি দুঃখী, অসহায় মানুষের কথা বলুক। ছবি বলুক না বলা হাজারো কথা।

লেখিকা সম্পর্কেঃ এ্যানি মাসুদ। ভাল লাগে লেখালেখি, বই পড়া,কবিতা লেখা। এছাড়া নতুন এবং সিম্পল রান্না শিখতে এবং খাওয়াতে পছন্দ করি। ইউ এস এ বাংলা পত্রিকা “ঠিকানা”য় মুক্তাঙ্গনে নিয়মিত লিখা হয়। তাছাড়া অনলাইনে লেখালেখির সাথে জড়িত বছর খানেক ধরে। পরিবারকে সময় দিতে ভালোবাসি। কাজ করি কিন্তু চাকরি করি না।