খালি পেটে যে নয়টি কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন..

১) প্রদাহ সারানোর ঔষধ (anti inflammatory drugs) সেবন করা:

অ্যাসপিরিন, প্যারাসিটামল সহ অন্যান্য প্রদাহ সারানোর ঔষধ, যেমন NSAIDs (non steroidal anti inflammatory drugs) খালি পেটে খাওয়া যাবে না। এতে ঔষধের কার্যকারিতা তো হ্রাস পাবেই, এমনকি পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণের মত জটিল স্বাস্থ্যসমস্যাও দেখা দিতে পারে।

করণীয়:
দুধ এ জাতীয় ঔষধের ক্ষতিকারক প্রভাব কমাতে সক্ষম। তাই এসব ঔষধ দুধের সাথে গিলে খেতে পারলে ভালো। নতুবা প্রচুর পরিমাণে পানি দিয়ে ঔষধ গিলে খেতে হবে।
●চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে।

২) কফি পান করা:

খালি পেটে কফি পান করলে এর প্রভাবে পাকস্থলীতে অ্যাসিড নিঃসরণ হতে থাকে, যার ফলে বুকজ্বলা এবং পরিপাকতন্ত্রের অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। সকালের নাশতা বাদ দিয়ে শুধু কফি পান করলে সেরোটোনিনের অভাবে সারাদিন জুড়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব অনুভূত হয়।

করণীয়: আপনার যদি সকালে ঘুম থেকে জেগে প্রথমেই কফি পান করার অভ্যাস থেকে থাকে, তবে দুধ বা ক্রিম দিয়ে কফি পান করুন। দুধে বিদ্যমান ফ্যাট কফির ক্ষতিকারক প্রভাব হ্রাস করবে।

৩) অ্যালকোহল গ্রহণ করা:

খালি পেটে অ্যালকোহল গ্রহণ করলে পরিপাকতন্ত্র থেকে এর শোষিত হওয়ার হার বৃদ্ধি পেয়ে শিরাপথে অ্যালকোহল গ্রহণ করলে তা শোষিত হওয়ার হারের সমান হয়ে যায়। অপরদিকে শরীর থেকে অ্যালকোহল বের হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াও ধীর হয়ে যায়। ফলে শরীরের ওপর দীর্ঘ সময় ধরে অ্যালকোহলের প্রভাব থেকে যায়। তাছাড়া এতে যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড ও বৃক্কের যে ক্ষতি হয়, তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

করণীয়: যদি পান করতেই হয়, ঠাণ্ডা ননকার্বোনেটেড পানীয়কে প্রাধান্য দিন, কারণ এগুলো ধীরগতিতে শোষিত হয়। পান করার আগে অন্তত একটি ছোট, মাখন দেওয়া স্যান্ডউইচ খেয়ে নিতে পারলে আরও ভাল।

৪) চুইংগাম চিবানো:

চুইংগাম চিবানোর ফলে পাকস্থলীতে যে অ্যাসিড নিঃসৃত হয়, পেট খালি থাকলে তা পাকস্থলীর ভেতরের দেয়ালকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অতিরিক্ত চুইংগাম চিবানোর অভ্যাসের ফলে পাকস্থলীতে প্রদাহও দেখা দিতে পারে। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, যাঁরা চুইংগাম চিবাতে পছন্দ করেন, তাঁরা ফল ও সবজির তুলনায় জাংক ফুড খেতে বেশি পছন্দ করেন।

করণীয়:
●যেসব চুইংগামে প্রাকৃতিক সুইটেনার (যেমন Xylitol, Sorbitol) ব্যবহার করা হয়, সেগুলো চিনি, অ্যাসপার্টেম, সাইক্লামেটযুক্ত চুইংগামের তুলনায় কম ক্ষতিকর হয়ে থাকে।
● ১০ মিনিটের বেশি চুইংগাম চিবানো উচিত নয়, এমনকি ভরা পেটেও নয়।

৫) ঘুমানো:

ক্ষুধা এবং গ্লুকোজের স্বল্পতা আমাদেরকে ঘুমিয়ে পড়তে বাধা দেয়, ঘুম পাতলা হয় এবং তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ঘুমের অভাব হলে ক্ষুধার উদ্রেককারী হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আর এ কারণেই কোন এক রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে পরদিন আমরা বেশি বেশি খাবার খাই।

করণীয়: ঘুমানোর আগে পেট ভর্তি করে খাওয়াও ঠিক নয়। এক্ষেত্রে ভাল সমাধান হচ্ছে ঘুমানোর আগে দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া। কারণ এতে থাকে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, যা ভাল ঘুম হতে সহায়ক।

৬) কঠোর শরীরচর্চা করা:

খালি পেটে শরীরচর্চা করলে বেশি ক্যালরি খরচ হয়- এরকম একটি মতামত প্রচলিত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এতে চর্বি তো ঝরেই না, বরং পেশীর ক্ষয় হতে পারে। তাছাড়া এসময় শরীরে শক্তির জোগান কম থাকায় কঠিন কোন শরীরচর্চা করাও সম্ভব হয় না।

করণীয়: কঠিন কোন শরীরচর্চার বদলে অ্যারোবিক শরীরচর্চা করা যেতে পারে। হজমে সমস্যা থাকলে শরীরচর্চার আগে স্ন্যাকস খেয়ে নেওয়া ভালো। কারণ, শরীরচর্চার ফলে পাকস্থলীতে অ্যাসিড নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়, যা খালি পেটের জন্যে ক্ষতিকারক।

৭) বাজার করা:

আমরা জানি, ক্ষুধার্ত অবস্থায় কেনাকাটা করতে গেলে আমরা প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাবার কিনে ফেলি। এমনকি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ক্ষুধার্ত অবস্থায় নিজের ভেতর থেকে আসা “আমি খাবার চাই” এই অনুভূতিটি একসময় “আমি চাই”-এ রূপান্তরিত হয়। ফলে ক্ষুধার্ত ব্যক্তি তখন অতিরিক্ত জিনিসপত্র কেনার মাধ্যমে সেই “চাহিদা” পূরণ করে।

করণীয়:
● কেনাকাটা করতে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির একটি তালিকা করে নেওয়া এবং সেই তালিকার বাইরে কোনকিছু ক্রয় না করা।
● নগদ টাকায় বাজার করা: গবেষণায় দেখা গেছে যে, ক্রেডিট কার্ডের বদলে নগদ টাকায় কেনাকাটা করলে মানুষ টাকা কম খরচ করে।

৮) সাইট্রাস জ্যুস পান করা:

সাইট্রাস ফলে বিদ্যমান অ্যাসিড এবং কঠিন আঁশ খালি পাকস্থলীতে জ্বালাপোড়ার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।

করণীয়: তাজা সাইট্রাস ফল থেকে বের করে আনা জ্যুস শরীরের জন্যে উপকারী। তবে এক্ষেত্রে জ্যুসটিকে পানির সাথে মিশিয়ে পাতলা করে নিতে হবে। যাঁদের পাকস্থলীতে অ্যাসিড বেশি নিঃসৃত হয়, তাঁদের জন্যে জ্যুস ও পানির অনুপাত হওয়া উচিত ১:১, এবং বাকিদের ক্ষেত্রে ২:১।

৯) তর্ক করা:

গবেষকরা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, ক্ষুধা আমাদেরকে অস্থির করে তোলে। কারণ আত্মনিয়ন্ত্রণ করতে শক্তির প্রয়োজন হয়, খালি পেটে যার পর্যাপ্ত জোগান সম্ভব হয় না।

করণীয়: কোন আলোচনায় যাওয়ার আগে যদি কিছু খেয়ে নেওয়ার মত সময় না পাওয়া যায়, তবে অন্ততপক্ষে উষ্ণ কিছু (যেমন- চা) পান করা উচিত। এতে আলোচনাটি আরও বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে

খালি পেটে কী কী করা উচিত নয়, তা তো জানা হলো। এবার আসুন জেনে নিই কোন কাজগুলো খালি পেটে ভালোভাবে করা সম্ভব।

সমস্যা সমাধান করা: ক্ষুধার্ত অবস্থায় আমাদের মনঃসংযোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গবেষকদের মতে এটি আমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া একটি বৈশিষ্ট্য, যেখানে আদি যুগে আমাদের পূর্বপুরুষগণকে ক্ষুধা মেটানোর উদ্দেশ্যেই খাদ্য সংগ্রহের জন্যে সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যয় করতে হতো।
ক্ষুধার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হরমোন ghrelin মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করার মাধ্যমে আরও বিভিন্ন রকম কাজ করতে সাহায্য করে থাকে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ: গবেষণায় দেখা গেছে যে, ক্ষুধা আপনাকে সফল, কোন কোন ক্ষেত্রে আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। সুতরাং আপনি লাল পোশাকটি নেবেন, নাকি নীল পোশাক- এ জাতীয় সিদ্ধান্তগুলো ক্ষুধার্ত অবস্থায় নেওয়া সমীচিন মনে হতে পারে। তবে অর্থ, স্বাস্থ্য বা সম্পর্ক বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এ নীতি অনুসরণ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

Source: Internet