আধুনিক বিশ্বে নানা ধরণের উন্নতমানের হোটেল রয়েছে যেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সবই রয়েছে। কিন্তু এমন কিছু হোটেল আছে যা একেবারেই ব্যতিক্রম। এই হোটেলগুলোতে আবকাশযাপন করলে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয়। এমনি ১০টি উদ্ভট হোটেল নিয়ে আজকের ফিচার।
১। দ্যা স্যান্ড হোটেল:
২০০৮সালে এই বালু হোটেল নির্মাণ করা হয়। এটি বিশ্বের সর্বপ্রথম হোটেল যা সৈকতের বালু দ্বারা নির্মিত হয়। সমুদ্র থেকে ৪মিটার উঁচুতে হোটেলটি অবস্থিত।১০০০টন বালু ব্যবহার করা হয় হোটেলটি নির্মাণ করতে। মার্ক অ্যান্ডারসন এই হোটেলটির নকশাকর। আরও ৬জন সহযোগী নিয়ে প্রতিদিন ১৪ঘণ্টা করে কাজ মোট ৭দিন সময় লাগে হোটেলটি নির্মাণ করতে। এর অভ্যন্তরের সাজসজ্জা,বিছানা সব বালুর তৈরি। এখানে রাত প্রতি থাকার খরচ ১০ পাউন্ড।
২। সল্ট হোটেল:
বলিভিয়ায় অবস্থিত লবণ হোটেল লুলাসালাদা বিশ্বের সর্বপ্রথম ও বৃহত্তম লবণ হোটেল। এর বেশির ভাগ জিনিসই যেমন দেয়াল,চেয়ার,টেবিল,মেঝে,সিঁড়ি,সিলিং লবণ দ্বারা নির্মিত। বলিভিয়ার অভ্যন্তরে চলছানি গ্রামের পাহাড়ে অবস্থিত লবণ হ্রদে এই হোটেলটি গড়ে উঠেছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে ষ্টীম ও বৃহৎ নোনা জলের পুকুর। একদিনের জন্য এখানে রাত্রি যাপন করতে ১৫০ ডলার ব্যয় করতে হয়।
৩। ওলদসেলগারতেন রিসোর্টঃ
জার্মানির এক অসাধারণ জায়গা হল এটি। রাতে ঘরের বাইরে নিরাপদ জায়গায় রাত্রিযাপনের জন্য চমৎকার একটি জায়গা এটি। এটি জার্মানির ব্যাভেরিয়াতে অবস্থিত। উঁচু গাছের উপর নির্মাণ করা হয় এই তাবু। সুউচ্চ এই স্থান থেকে চারপাশের সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারবেন। তবে এখানে রাতে থাকতে হয়। মাটি থেকে ৩২৮০ ফুট উঁচুতে তাবু অবস্থিত। একে দুঃসাহসিক ভ্রমণ বলেও অনেকে মনে করেন। রাত্রিযাপনের জন্য বিশ্বের রোমান্টিক স্থানের মধ্যে এর অবস্থান ১০নম্বরে। এখানে প্রতি রাতে থাকতে ৩০০ ডলার ব্যয় করতে হয়।
৪। ম্যাজিক হোটেলঃ
বনে রহস্যময় পর্বত হিসেবে পরিচিত মন্টানার এই হোটেল। হোটেলটি চিলির ঘন বনে অবস্থিত । এর পাশেই রয়েছে চমৎকার জলপ্রপাত। এই হোটেলটির নির্মাণ অত্যন্ত চমৎকার,টেকসই এবং উন্নতমানের। হোটেলটি বাইরে থেকে দেখতে মনে হয় প্রাকৃতিক পাহাড়ের গায়ে দরজা,জানালা লাগান। এটি ইকো পর্যটকদের জন্য আদর্শ স্থান। এর একটি সিঙ্গেল রুমের ভাড়া ২১৫ ডলার। হোটেলটির পাশে ৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে জীববৈচিত্র্য ও প্রাণীকুল সংরক্ষণের জন্য একটি পার্ক রয়েছে।
৫। আইস হোটেলঃ
আইস হোটেল বিশ্বের প্রথম হোটেল যা কিনা তুষার এবং বরফের তৈরি।১৯৮৯সালে টর্ণ নদীর তীরে সুমেরু থেকে ২০০কিমি উত্তরে জুক্কাসজারভি নামক সুইডিশ গ্রামে হোটেলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে অতিথিদের জন্য হোটেলটির নির্মাণ কাজ করা হয় যেমন বরফ পলিশ করা হয়, সাজসজ্জা ঠিক করা হয় ইত্যাদি। এর মূল প্রচেষ্টা বিশ্বের অন্যতম একটি অভিজাত হোটেল হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ান।
হোটেলটির অভ্যন্তরে তুষার ও বরফের তৈরি ভাস্কর্য রয়েছে যা দেখলে মনে হয় আসলেই থাকার জন্য এটি সবচেয়ে সুন্দর জায়গা। এই হোটেলটির অন্যতম একটি বিশেষত্ব হচ্ছে এর নিজস্ব বরফের তৈরি গির্জাটিতে বিয়েও হয়। গরমের মাসগুলোতে সৌর প্যানেল দ্বারা ঠান্ডা রাখা হয়। কিন্তু ঠান্ডা তাপমাত্রার কারণে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য হোটেলটি উপযুক্ত নয়। এর খরচ প্রায় $১০০০ কাছাকাছি এবং প্রতি বছর প্রায় ৫০০০০ মানুষ হোটেলটিতে থাকতে আসেন।
৬। জিরাফ হোটেলঃ
প্রাকৃতিক পরিবেশে গৃহপালিত বন্য প্রাণীদের সঙ্গে থাকার মত শুধুমাত্র একটি হোটেল আছে যা কেনিয়ায় অবস্থিত। আর কোথাও আপনি এমন পাবেন না । কারণ এখানে আপনি যেখানে থাকছেন সেখানে একটি জিরাফও তার মত স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াবে। সকাল হতে না হতেই জিরাফগুলো হোটেলের কাছে চলে আসে। কেননা হোটেলে অবস্থানরত অতিথিরা সকালের নাস্তা করতে বসে আর জিরাফগুলো তখন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে খাবার এর জন্য। তারাও খুব উৎসাহিত হয়ে জিরাফগুলোকে খেতে দেয়। এছাড়াও জিরাফগুলোর জন্য হোটেলের দরজা-জানালায় খাবার দেওয়া থাকে। এই হোটেলে থাকলে প্রাণীদের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া উপলব্ধি করা যায়। আপনি তাদের সাথে চাইলে ছবিও তুলতে পারেন। রাতারাতি থাকার জন্য দাম ঋতু অনুযায়ী উঠানামা করে তবে অবশ্য এখানে থাকার জন্য আপনাকে অনেকটা উচ্চ মূল্যই গুনতে হবে। মূলত প্রাণী রক্ষার জন্য একটি ভিত্তি হিসেবে এই ব্যবস্থাটি নেয়া হয়েছে।
৭। কাক্সলাউত্তেনেন হোটেলঃ
কাক্সলাউত্তেনেন হোটেলটি ফিনল্যান্ডে অবস্থিত। রূপকথার কাচের তৈরি ইগলু এর ন্যায় এই হোটেলটিতে আপনি উষ্ণ শীত এর আনন্দ উপলব্ধি করতে পারবেন। এর কিছু কক্ষ আউটডোর সুইমিং পুল দিয়ে সজ্জিত করা ।আপনি রাতে আপনার বিছানা থেকেই তারকাখচিত ফিনল্যান্ডের পরিষ্কার আকাশ দেখতে পাবেন। এখানে একদিন থাকার জন্য প্রায় ২০০ ডলারের মত লাগে।
৮। সালা সিল্ভারমাইনঃ
আপনি চাইলে ঘুরে আসতে পারেন ভূগর্ভস্থ কোন হোটেলে। সুইডেনে আছে এমন একটি ভূগর্ভস্থ হোটেল যেটি স্টকহোম থেকে উত্তর-পশ্চিমে ১২০ কিমি দূরে অবস্থিত। ধারণা করা হয় এটি বিশ্বের সর্বনিম্ন-হোটেল। এর গভীরতা প্রায় ১৫৫মিটার। হোটেলটি নির্মাণ করার আগে এখানে একটি রূপার খনি ছিল। হোটেলের ব্যবস্থাপনা দ্বারা পরামর্শ দেওয়া হয় যে, এখানে আসার পূর্বে অধিক গরম কাপড় সাথে নিয়ে আসতে কারণ হোটেলের রুমের বাইরে তাপমাত্রা প্রায় ৩ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকে। আপনি সেখানে সেলফোন ব্যবহার করতে পারবেন না কিন্তু ওয়ারলেস ডিভাইসের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতে পারবেন সবার সাথে। সারাবছরই হোটেলটি চালু থাকে।
৯। গাছ হোটেলঃ
সুইডেনের হারাডা নামক এক গ্রামে গাছের উপর এই হোটেলটি অবস্থিত। স্ক্যান্ডিনেভিয়ার একদল দক্ষ স্থাপত্যবিদ একসাথে পাঁচটি আলাদা পরিকল্পনা করে এই গাছের হোটেল নির্মাণ করে। সুইডেন শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে লুলিয়া শহরের কাছে লুলে নদীর কাছে এই গাছের হোটেল অবস্থিত।মাটি থেকে ৪-৬ মিটার উচুতে হোটেলটি অবস্থিত। এই হোটেলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় কক্ষ হল ‘মিররকিউব’। এই কক্ষে রয়েছে একটি ডাবল বেড,বাথরুম,লাউঞ্জ এবং ছাদের বারান্দা। এই কক্ষে থাকতে হলে প্রতিদিন ৬৫০ ডলার লাগবে। অন্যান্য রুমের জন্য লাগবে একজনের জন্য ডলার ১৫০,দুই জনের জন্য ৫০০ ডলার।
১০। সাগরের নিচে রিসোর্টঃ
তাঞ্জানিয়ার উপকূলে ভারত মহাসাগরে এই ডুবো রিসোর্ট অবস্থিত। এই রিসোর্টটির নাম মানটা রিসোর্ট যা পানির নিচে অবস্থিত। উপকূল থেকে ২৫০ মিটার দূরে এই রিসোর্ট অবস্থিত। পানির তলদেশে ৪ মিটার নিচে রয়েছে ২টি শয়নকক্ষ। এছাড়াও রয়েছে একটি বিশ্রাম ডেক এবং ডাইনিং এর জন্য লাউঞ্জ। রুমের দেয়ালে এমন ধরনের দুটি জানালা আছে যা দিয়ে ৩৬০ডিগ্রী ভিউতে বাইরের দৃশ্য দেখা যায়। রাতে নিকটবর্তী সমুদ্রদৃশ্য দেখার জন্য ডুবো স্পতলাইট আছে। এখানে থাকতে প্রতিদিনের জন্য ১২০০ ডলার খরচ করতে হবে।