আরে রে রে রে রে, ডাকাত এলো তেড়ে” – ধরনের ডাকাতির কথা বর্তমানে কম শোনা গেলেও এর মানে নয় যে ডাকাতেরা ডাকাতি ছেড়ে নাকে সরিষার তেল মেখে ঘুমোচ্ছে। বর্তমানের প্রযুক্তি নির্ভর যুগের আধুনিক ডাকাতেরা রাইফেল, ব্যাগের চেয়ে কম্পিউটার হ্যাকিং বেশি পছন্দ করে৷ তবে, ইতিহাস এমন কিছু বড় বড় ডাকাতির সাক্ষী হয়েছে যেখানে ছিলোনা কোন প্রযুক্তির ব্যবহার, ছিলো শুধু হতভম্ব করে দেওয়ার মতো পরিকল্পনা। এমন কিছু তাক লাগানো “বড় ডাকাতির ঘটনা ” নিয়ে আমাদের আজকের আর্টিকেল।
স্টিফেন ব্রেটউইজার:
কিছু সময়ের জন্য “সাদ্দামের স্কীম” ইতিহাসের অন্যতম বড় “ডাকাতি ” হিসেবে বিবেচিত হলেও স্টিফেন ব্রেটউইজার নামের এক আর্ট কালেক্টর কিছুদিনের মধ্যে “সেরা ডাকাতের” পদবীটি অর্জন করে নিয়েছে। ১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে সে বিভিন্ন মিউজিয়াম থেকে মূল্যবান চিত্রাঙ্কন এবং অন্যান্য শিল্পকর্মগুলো চুরি শুরু করে। ২০১১ সালের নভেম্বরে ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত সে সফলভাবে ১৭২ টি মিউজিয়াম থেকে ২৩৯ টি চিত্রকর্ম চুরি করে যার আনুমানিক মূল্য ১.২ বিলিয়ন ডলার।
সেন্ট্রাল ব্যাংক অফ ইরাকের ডাকাতি:
২০০৩ সালের ১৯ ই মার্চ জোট বাহিনী দ্বারা ইরাকে বোমা হামলার আগের দিন সাদ্দাম হুসেন তার ছেলে কূসায়কে একটি নোটের সাহায্যে ইরাকের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পাঠিয়েছিলেন, এই ভেবে যে তিনি এই ব্যাংকের মালিকানায় রয়েছেন। প্রক্রিয়াটি সহজ ছিল এবং ভীতি দেখানোর কারণে ব্যাংক কর্মীরা অনুরোধে সম্মতি জানালেন। ৫ ঘন্টা ধরে কূয়াস ১ বিলিয়ন ডলার উত্তোলন করেছিলো।
দার এস সালাম ব্যাংক ডাকাতি:
১৩ জুলাই, ২০০৭ সাল, বাগদাদের দার এস সালাম ব্যাংকের কর্মচারীরা সকালে ব্যাংকে এসে দেখে পুরো ব্যাংকটি ছিনতাই হয়ে গেছে। তারা অনুমান করেছিলো যে, ব্যাংকের তিন নিরাপত্তা কর্মী এই ছিনতাই করেছে এবং ছিনতাইকৃত অর্থের পরিমাণ ছিলো ২৮২ মিলিয়ন ডলারের বেশী। তদন্তের পর ব্যাংক কর্মকর্তারা এই বিষয়ে খুব একটা কথা বলতে আগ্রহী ছিলোনা। তবে তারা ধারণা করছিলো, সিকিউরিটি গার্ডদের সাথে নিশ্চয় স্থানীয় মিলিশিয়াদের যোগাযোগ ছিলো নয়তো এতগুলো টাকা নিয়ে চেকপোস্ট পার হওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হতোনা।
সেলিনি সল্ট সেলার ডাকাতি:
২০০৩ সালে বেলভেনুটো সেলিনিরস্বর্ণের টেবিলের ভাস্কর্যটি ভিয়েনার কুনস্টিস্টরিচ জাদুঘর থেকে চুরি করা হয়েছিল। আশ্চর্যজনক হলেও, ভাস্কর্যটি অস্ট্রিয়ার জুইটল শহর থেকে পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল এবং এর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল।
গ্রাফ হীরা ডাকাতি:
১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে দুজন লোক গ্রাহক সেজে
লন্ডনের নিউ বন্ড স্ট্রিট থেকে ৬৫ মিলিয়ন ডলারের মূল্যবান গ্রাফ হিরার গহনা চুরি করে। চোরেরা ছিলো পেশাদার মেকাপ আর্টিস্ট। চুরির সময় তারা নকল চুল, দাড়ি, এমনকি চেহারার রং পর্যন্ত মেকাপের মাধ্যমে বদলে নিয়েছিলো। তারা তাদের ছদ্মবেশ ধারণ করতে প্রায় ৪ ঘন্টা সময় নিয়েছিলো এবং সবাইকে বলেছিলো তারা একটি মিউজিক ভিডিওর শ্যুটিং করতে যাবে তাই এই বেশ। সে হীরে চোরেরা ধরা পড়লেও চুরি হয়ে যাওয়া গহনার উদ্ধার সম্ভব হয়নি।
ব্রিংক-ম্যাট ডাকাতি:
১৯৮৩ সালের ২৬ নভেম্বর লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে ছয় ডাকাত ব্রিংকের ম্যাট গুদাম ভেঙে ডাকাতি করেছিল। সে সময়ে ব্রিংক-ম্যাট ডাকাতি শতাব্দীর “সেরা ডাকাতি ” হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছিলো। নিরাপত্তারক্ষী অ্যান্টনি ব্ল্যাকের সাহায্যে ডাকাতে গুদামে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিল। ডাকাতরা ভেবেছিল তারা ৩ মিলিয়ন ডলার চুরি করতে পারবে। তারা গুদাম প্রবেশের পর তিন টন সোনা ও ২৬ মিলিয়ন ডলারের টাকা ও হীরা পেয়েছিলো। লকারের নাম্বার বলতে না চাইলে ডাকাতেরা সেখানে কর্মরত কর্মীদের গায়ে প্রেট্রোল ঢেলে তাদের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। চুরি হওয়া তিন টন সোনার বেশিরভাগই আর উদ্ধার করা যায়নি এবং ডাকাতদের মধ্যে চারজনকে প্রমাণের অভাবে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব হয়নি। বিবিসি এর রিপোর্ট অনুসারে, সে ডাকাতির পর লন্ডনে কাউকে গয়না পরা অবস্থায় দেখলে মনে করা হতো সে ব্রিংক-ম্যাট ডাকাতির গয়না পরে আছে।