একবার ” প্ল্যানেটরি প্রটেকশন অফিসার ” বা “পৃথিবীর পাহারাদার ” নামের একটি অদ্ভূত পদ চালু করে নাসা। এ পদের কাজ ছিলো পৃথিবীসহ সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহকে এলিয়েনদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা। পাশাপাশি সৌরজগতে যাওয়া নভোচারীরা যাতে পৃথিবীর মাঝে কোন ধ্বংসাত্নক জীবানু না নিয়ে আসে, তা খেয়াল রাখার দায়িত্বও ছিলো প্ল্যানেটরি অফিসারের। এ পদের জন্য অসংখ্য আবেদনপত্র জমা পড়ে নাসার অফিসে। এবং তার মধ্য থেকে সবচেয়ে চমকে দেয়ার মতো আবেদনপত্রটি ছিলো জ্যাক ডেভিস নামের একটি ছেলের।যার বয়স ছিলো মাত্র নয় বছর।
গুটিগুটি হাতে পেন্সিল দিয়ে সে নাসাকে একটি চিঠি লিখে। চিঠিটা এমন –
” প্রিয় নাসা,
আমার নাম ডেভিস এবং আমি আপনাদের ” প্ল্যানেটরি প্রোটেকশন” পদে চাকরির জন্য আগ্রহী। আমার বয়স মাত্র নয় বছর হতে পারে, কিন্তু আমি এ পদটির জন্য একদম উপযুক্ত। এবং আমি স্পেস সম্পর্কিত সব মুভি দেখে ফেলেছি। আমি ভিডিওগেম খেলতেও পারদর্শী। আর আমার বোন আমাকে সব সময় এলিয়েন বলে ডাকে। তাছাড়া আমি এখন ছোট, সুতরাং আমি একজন এলিয়েনের মতো চিন্তা করা শিখতে পারবো। “
ছোট্ট ডেভিসের ঐ চিঠিটি সাঁড়া ফেলে দিয়েছিলো সেবার। এবং তার পেন্সিলে লিখা সেই চিঠিটির জবাবও দিয়েছিলো নাসা। তাকে বলা হয়েছিলো ভালো করে স্কুলে লেখাপড়া করতে এবং বড় হয়ে নাসায় কাজ করার জন্য শুভকামনা ও জানানো হয়েছিলো।।
ছোট্ট ডেভিসের মতো অনেকেরই স্বপ্ন নাসায় কাজ করা। তাদের জন্যই আজকের এ পোস্ট।
নাসায় চাকরির প্রধান শর্ত হলো তোমাকে অবশ্যই আমেরিকার নাগরিক হতে হবে। কারণ নাসা হলো আমেরিকার সরকারী প্রতিষ্ঠান। তবে বিশেষ চুক্তিতে আমেরিকার নাগরিকত্ব না থাকলেও নাসা থেকে বিভিন্ন চুক্তিতে কাজ করা সম্ভব। এছাড়াও নাসার “স্পেস আ্যাপস চ্যালেঞ্জ ” এ অংশগ্রহনের মাধ্যমেও চাকরি মিলতে পারে এ সংস্থায়। বাংলাদেশেও প্রতিবছর এ প্রতিযোগিতা হয়।
নাসায় চাকরি পাবার যোগ্যতা
নাসায় চাকরি পেতে হলে প্রথমত তোমাকে হতে হবে প্রচন্ড ধৈর্যশীল। আর থাকতে হবে প্রচুর মেধা। কেননা স্বপ্নের এ চাকরির জন্য প্রতিযোগিতায় দাঁড়িয়ে আছে কয়েক লক্ষ মেধাবী মানুষজন। এবং তারা প্রত্যেকেই যোগ্যতাসম্পন্ন। তাই প্রতিযোগীতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রমান করতে হবে নানান দিক থেকে। যেমন :
১.বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশলী ও গণিতে মাস্টার্স সমপর্যায়ের ডিগ্রি অর্জন করতে হবে।
২. বেসামরিক সরকারি প্রশাসনের উচ্চপদে ন্যূনতম এক বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
৩.ইন্টারভিউ বোর্ডে বসতে হবে বেশ কয়েকবার।
৪. পৃথিবী রক্ষা, নিরাপত্তা , কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করার মানসিকতা এবং প্রয়োজনীয় কূটনীতি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে।
৫.টিম সমন্বয়, ভাষা দক্ষতা ও বাজেট সমন্বয়ের ব্যাপারে দক্ষতা থাকতে হবে।
৬. বিমান চালনবিদ্যা, স্পেস স্টেশন, সোলার সিস্টেম, তথ্য প্রযুক্তি, পৃথিবী ও মঙ্গলগ্রহে থাকার বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ধারনা থাকতে হবে।
৭. শারীরিকভাবে থাকতে হবে ফিট। চোখের দৃষ্টিশক্তি ও রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকার পাশাপাশি উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি – ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে হবে।
যেভাবে আবেদন করতে হবে :
” ইউ এস এ জবস ” এ একাউন্ট খুলে নিতে হবে প্রথমে । তারপর সেখান থেকে জীবনবৃত্তান্ত লিখার নিয়ম জেনে নিতে হবে। কারন সব ধরনের জীবনবৃত্তান্ত নাসা গ্রহন করে না।তারপর একটি একাউন্ট খুলে জীবনবৃত্তান্তটি জমা দিতে হবে। জীবন বৃত্তান্ত জমা দেয়ার পর তোমাকে জানিয়ে দেয়া হবে এটি নাসার জন্য উপযুক্ত কিনা। তারপর nasa.usajobs.gov এ লিঙ্কে গিয়ে উপযুক্ত চাকরির খোঁজ নেয়া যাবে। তাছাড়াও নাসায় কাজ করার জন্য প্রতিনিয়ত চোখ রাখতে হবে www.nasa.gov এ ওয়েবসাইটটিতে। এখানে নাসায় কাজ করা সম্পর্কিত সুস্পষ্ট তথ্য দেয়া হয় প্রতিনিয়ত।
প্রতিযোগিতামূলক যোগ্যতার পরীক্ষা ও ইন্টারভিউতে উত্তীর্ন হবার পর যা হয়
নাসার সব পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে গেলেই কিন্তু চাকরিটা নিশ্চিত হয়ে যাবে না। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর তোমাকে করতে হবে টানা দু’বছর কঠোর পরিশ্রম। চার বছরের কলেজ ডিগ্রি অর্জন করার জন্য যতটা না পরিশ্রম করতে হয়, এ দু’বছর তার থেকেও অনেক বেশী হাঁড় ভাঙ্গা খাঁটুনী খাঁটতে হবে তোমাকে। প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫ মিটার সাঁতার কাটতে হবে। ফ্লাইট সুট ও টেনিস খেলার জুতা পড়ে পানিতে লাফালাফি করতে হবে। জেট বিমান থেকে প্রতিদিন ৪০ বার উঠানামা করতে হবে। জিরো গ্রাভিটির মতো পরিবেশে প্রতিদিন চলবে নানান মহড়া। তাছাড়া প্রশিক্ষন দলের সবাইকে যে কোন পরিস্থিতি সামলানোর জন্য পরীক্ষাতেও অবতীর্ণ হতে হবে। নভোচারীদের শিখতে হবে রুশ ভাষা।
তবে দু’বছরের এ প্রশিক্ষণই কিন্তু শেষ না সবকিছুর। ছোট বড় আরও নানান বিষয়ের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে নভোচারীদের। আর কোন কাজ করতে যদি ছয় মাসের মতো সময় লাগে, তাহলে আরও দুই থেকে তিন বছরের অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ নিতে হবে! এবং সব বাঁধা আর কঠোর পরিস্থিতি মোকাবেলা করে যদি তুমি টিকে থাকতে পারো,তবেই হতে পারবে নাসার কর্মী।