মৃত্যু মানব জীবনের চিরন্তন সত্য। জন্মানোর পর মুহূর্ত হতেই শুরু হতে থাকে মৃত্যুর কাউন্টডাউন। একে আগ্রাহ্য করার সাধ্য কারও নেই। মৃত্যু বিষয়টিকে নিয়ে যদিও মজা চলে না তারপরও কিছু কিছু মৃত্যু আছে যার কথা শুনলে আপনি কিছু ক্ষণের জ*ন্য হলেও থমকে যাবেন । ভাবতে বসবেন এই ভেবে, এমন মৃত্য সত্যিই কি হতে পারে! ভাবতে ভাবতে হঠাৎ নিজের অজান্তেই হয়তো সেসব মৃত্যুর কথা শুনে হাসিতে লুটিয়েও পড়তে পারেন আপনি।ভাবছেন, কারও মৃত্যু নিয়ে ছেলেখেলা করছি! কিন্তু ঘটনাগুলোই এমনই যে যা জেনে আপনারও এমন প্রতিক্রিয়া হতেই পারে। আজ আপনাদের এমন সব মানুষের অদ্ভুত সব মৃত্যুর সত্যি ঘটনা জানাবো যা অকল্পনীয় তো বটেই অদ্ভুতুড়েও বলতে পারেন।
১. মারিয়া পান্তাজোপোউলাস : ফটোশুটের সময় পা পিছলে মৃত্যু
উত্তর আমেরিকার ঘটনা। মারিয়া পান্তাজোপোউলাস। ছিলেন একজন মডেল। বিয়ের পর স্বামীর সাথে ওয়েডিং ফটোশুট করছিলেন। হঠাৎই পা পিছলে কিউবেক নদীতে পড়ে যান। ওয়েডিং ড্রেস ভারি থাকায় তিনি সাঁতরে তীড়ে আসতে পারেননি। পানিতে ডুবে গিয়ে মারা যান মারিয়া পান্তাজোপোউলাস।
২. স্টিভ ইরউইন : কাঁটার আঘাতে মৃত্যু
জিওগ্রাফিক চ্যানেলগুলো যারা দেখেন তারা ক্রোকোডাইল হান্টার হিসেবে স্টিভ ইরউইনকে অবশ্যই চিনবেন। ২০০৬ সালের ঘটনা এটি। একটি ডকুমেন্টরী তৈরির জন্য স্টিভ ইরউইন অস্ট্রেলিয়া যান। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের গ্রেট ব্যারিয়ার রীফে “ওসান’স ডেডলিয়েস্ট” নামের ডকুমেন্টরীটি তৈরির সময় সমুদ্রের নীচে এক নিরীহ স্টিনগ্রে বার্ব এর লেজের কাঁটার আঘাত পান এবং তৎক্ষনাতই তার মৃত্যু ঘটে। কাঁটা তার হৃদযন্ত্র ফুঁটো করে দিয়েছিল। ভয়ঙ্কর কুমিরদের সাথে নিজের শিশু সন্তানকে নিয়ে খেলা করা এই ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত নিরীহ এক জলচর প্রাণীর আঘাতে মারা যাবেন কেউ কি ভাবতে পেরেছিলেন!
৩. থাইল্যান্ডের রানি সুনন্দা : পানিতে ডুবে মৃত্যু
সাল ১৮৮০। সদ্য ঊনিশে পা রাখা থাইল্যান্ডের রানি সুনন্দা সপরিবারে আনন্দ উদযাপনের জন্য গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদে যাচ্ছিলেন। কুমারিরাটানা নদীবক্ষে ভেসে চলেছিল রাজকীয় বজরা। রাজ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে সেই নৌকাতে আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। মাঝ নদীতে নৌকা ডুবে যায়। অন্যেরা বেঁচে গেলেও সবার চোখের সামনে পানিতে তলিয়ে যান রানি সুনন্দা। এত দেহরক্ষী ঐ নৌকায় থাকতে কেন বাঁচানো যায়নি রানিকে! রাজ পরিবারের অদ্ভুত নিয়মই তার কারণ। রানিকে স্পর্শ করার অনুমতি ছিল না দেহরক্ষীদের। এই রাজকীয় নিয়ম পালন করতে গিয়ে তারা রানিকে উদ্ধার করতে পারেননি।
৪. মেয়র মনিকা মেয়ার : নালায় পড়ে মৃত্যু
মনিকা মেয়ার ছিলের আমেরিকার বেটারটনের মেয়র। ১৯৮০ সালের ২০ মার্চ শহরের নিকাশি ব্যবস্থা পরিদর্শনে বেরোন মনিকা। একটি উন্মুক্ত সয়ারেজের নালার পাশ দিয়ে হাঁটতে শুরু করেন। হঠাৎই হয়তো অন্য মনস্ক হয়ে পা পিছলে ১৫ ফুট গভীর নালার মধ্যে পড়ে গিয়ে মারা যান।
৫. ফ্যাগিলু: নিজের শেষকৃত্য দেখে মৃত্যুবরণ
২০১১ সালের রাশিয়াতে ঘটেছিল ঘটনাটি। রাশিয়ার কাজানে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখের বাস ফ্যাগিলু নামের এই মহিলার। একদিন বাড়িতে হঠাৎ বুকে ব্যাথা উঠেছিল তাঁর। এর পর অনেকক্ষণ চেতনা ছিল না তাঁর। একান্ন বছরের স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যান স্বামী। ভর্তি করা হয় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। চিকিৎসকরা বেশ কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষন করে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করে দেন। শুরু হয় শেষকৃত্যের আয়োজন। কফিনে দেহ নিয়ে পরিজনরা পৌঁছান সিমেট্রিতে। মাটি খোঁড়া হয়। চলে অন্তিম প্রার্থনা। শেষকৃত্যের সময়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ কফিনবন্দি ওই মহিলার চেতনা ফেরে। তাকান চোখ মেলে। নিজের চোখে দেখতে পান তাঁরই শেষকৃত্যের আয়োজন চলছে। পুরো বিষয়টিতে এতটাই অবাক হন মহিলা যে এবার সত্যিই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়!
৬. বাসিল ব্রাউন: ভিটামিন এ-র ওভারডোজে মৃত্যু
বাসিল ব্রাউন চিরকালই স্বাস্থ্য সচেতন ছিলেন। সবসময় চেষ্টায় থাকতেন কিভাবে নিজের শরীরকে ফিট রাখা যায়। তখন তার বয়স আটচল্লিশ। একবার চটজলদি অত্যধিক ফিট হওয়ার জন্য একসাথে ১ গ্যালন গাজরের রস খেয়ে ফেলেন। ফলে ভিটামিন এ-র ওভারডোজ-এ মৃত্যু হয় তাঁর।
৭. ব্রিটিশ অভিনেতা গ্যারেথ জোনস : অভিনয় করতে করতে মৃত্যু
সময়টা ১৯৫৮। স্টুডিও’য় ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা গ্যারেথ জোন্সের একটি দৃশ্যের শট নেওয়ার তোড়জোর চলছে। চিত্রনাট্য অনুযায়ী গ্যারেথ জোনস হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার দৃশ্যেই অভিনয় করছিলেন। অভিনয়ের সময়ে সত্যিই তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয় এবং মারা যান তিনি। কি অদ্ভুত এই মৃত্যু, তাই না!
৮. ফ্র্যন্সিস বেকন : ঠাণ্ডায় জমে মৃত্যু
ষোড়শ শতাব্দীর গুরূত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন ফ্রান্সিস বেকন। তিনি একই সাথে ছিলেন লেখক, ফিলসোফার এবং বিজ্ঞানী । ১৬২৫ সালের এক বিকেলে তিনি মাংস প্রিজার্ভ করার জন্য একটা পরীক্ষা চালাতে মুরগী বেছে নেন। সেই বিকেলে তুষারপাতের ঝড়ে তিনি দেখতে চাইছিলেন যে মাংস ফ্রোজেন হয় কিনা। এই উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি মুরগী নিয়ে বরফের মধ্যে ঠাঁই অনেকক্ষন দাড়িয়ে তাকেন। বরেফের উপর দাঁড়িয়ে থাকার দরূন নিজেই ফ্রজেন হয়ে যান এবং সেখানেই মৃত্যু ঘটে তার।
৯. অ্যালান স্ট্যাসি : পাখির কারণে মৃত্যু
অ্যালান স্ট্যাসি ছিলেন ফরমুলা ওয়ান রেসিং ড্রাইভার। ১৯৬০ সালে তিনি অদ্ভুত এক ঘটনার স্বীকার হন। রেস চলাকালীন সময়ে আকস্মিক একটি উড়ন্ত পাখি তার মুখের সাথে বাড়ি খায়। হঠাৎ এমন ঘটনায় তিনি গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। গাড়িটি ক্র্যাশ করে । তত্ক্ষণাৎ মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
১০. সেরউড এন্ডারসন : টুথপিক গিলে ফেলে মৃত্যু
সেরউড এন্ডারসন ছিলেন সেসময়ের একজন নামকরা লেখক। অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলেও এটি কিন্তু সত্যি ঘটনা। ১৯৪১ সালে এক পার্টিতে লেখক সেরউড এন্ডারসন ডিনার খাবার পর টুথপিক দিয়ে দাঁত পরিস্কার করছিলেন। দুর্ঘটনাবশত: এইসময় তিনি একটি টুথপিক গিলে ফেলেন। তাকে তখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে তিনি মারা যান।
১১. জিম ক্রেইটন : নিজের বেসবলের ব্যাটে মৃত্যু
জিম ক্রেইটন ছিলেন আমেরিকার একজন জনপ্রিয় বেসবল প্লেয়ার। ১৮৬২ সালের ১৪ অক্টোবরে বেসবল প্লেয়ার হিসেবে একটি খেলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। ম্যাচ চলাকালীন সময়ে অকস্মাৎ নিজের ব্যাটের আঘাতে আহত হন। টানা বেশ কয়েকদিন হাসপাতালে চিকিত্সাধীন থেকে তার মৃত্যু হয়। চিকিত্সকদের ভাষ্যমতে পেটে গুরুতর আঘাতের কারণে জিম মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
১২. কার্ট গোডেল : না খেয়ে মৃত্যুবরণ
অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয় ম্যাথমেটিসিয়ান ছিলেন কার্ট গোডেল। হঠাৎই একটি অদ্ভুত ভয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি এবং পরবর্তীতে সেটাই তার মৃত্যুর কারন হয়। ১৯৭৮সালে কার্ট গোডেলের স্ত্রী অসুস্থতার জন্য কিছুদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেই সময়ে কার্ট গোডেলের কাছে হঠাৎ করে সব খাবার বিষাক্ত মনে হওয়া শুরু হলো। তিনি সব ধরণের খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিলেন। ফলে তিনি ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
১৩. অস্ট্রিয়ার হ্যানস স্টেনিনগার : পায়ে দাড়ি জড়িয়ে মৃত্যু
পাক্কা ১.৫০ মিটার লম্বা দাড়ির জন্য বিখ্যাত ছিলেন হ্যান্স স্টেইনিনগার। ওই দাড়ির জন্যই তার খ্যাতি এবং মৃত্যুও! দিনটি ছিল ১৫৬৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। ঐদিন হ্যান্সের শহরে আগুন লাগে। আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তিনি দৌড়াতে থাকেন। এ সময় দাড়িতে পা জড়িয়ে পড়ে যান হান্স। আগুনে পুড়ে মারা না গেলেও চুলের উপর পা লেগে মাটিতে বেকায়দায় পড়ার ফলে ঘাড় ভেঙে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। তার এই মৃত্যুকে স্মরণ করে দিনটিকে বিশ্ব দাড়ি দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
১৪. ফ্রাঞ্জ রিচেল্ট : প্যারাস্যুট কাজ না করায় মাটিতে পড়ে মৃত্যু
ফ্রান্স রিচেল্ট ছিলেন একজন বিজ্ঞানী। ওড়ার জন্য একধরনের ওভারকোট তৈরি করেছিলেন যা আধুনিক প্যারাসুটের মতো কাজ করবে বলে তার বিশ্বাস ছিল। তার এই আবিষ্কার পরীক্ষার জন্য তিনি সেই সময়কার সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা আইফেল টাওয়ারের ফার্স্ট ডেক (৬০ মিটার) থেকে লাফ দেন। তিনি ভেবেছিলেন তার ওভারকোটটি খুলে যাবে এবং তিনি নিরাপদে মাটিতে নেমে আসবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ প্যারাসুটটা কাজ না করায় তিনি মাটিতে পড়ে মারা যান।
১৫. ডেভিড গ্রুন্ডম্যান : ক্যাকটাস ভেঙ্গে পড়ে মৃত্যু
বৃদ্ধ বয়সে অনেকেই অবসর কাটানোর নানারকম পন্থা বেছে নেন। কিন্তু ডেভিড গ্রুন্ডম্যানের মত এমন অদ্ভুত পন্থা কেউ কখনো ! কিছু দূরত্ব থেকে ক্যাকটাসকে গুলিবিদ্ধ করাই ছিল ডেভিড গ্রুন্ডম্যানের অবসর কাটানোর উপায়। এই করতে গিয়েই ২৬ ফুট লম্বা একটা আস্ত ক্যাকটাস তাঁর উপরে ভেঙে পড়ে যায় । ক্যাকটাস চাপা পড়ে সেখানেই ডেভিড মারা যান।