গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের দেশের SSC HSC,HONOURS এর ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫০মিনিট ফেসবুক-মেসেন্জার ব্যবহার করে।অথচ এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে তারা অবগত নয়, যার ফলে তারা এই ফেসবুক-মেসেন্জার থেকে উপকৃত হওয়ার থেকে অপকৃতই বেশি হচ্ছে।তাই যদি আমরা এর সঠিক ব্যবহার জানি তাহলে এই ফেসবুক-মেসেন্জার ও হতে পারে আমাদের চলার পথের এক অন্যতম বন্ধু।
তাছাড়াও অত্যন্ত ব্যস্ত এ সময়টায় কারোসাথে সামনাসামনি কথা বলা কিংবা আড্ডা দেওয়াটা আর তেমন হয়ে ওঠে না আমাদের অনেকেরই। কিন্তু, প্রযুক্তির আর্শীবাদে কিংবাসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এখন সাত-সমুদ্র তেরো নদীর ওপারের প্রবাসী বন্ধুদের সাথেও মেসেঞ্জার কিংবা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কথা বলা কিংবা আড্ডা দেওয়া সম্ভব! পরিস্থিতি এখন অনেকটা এমন যেখানে, সামনাসামনি কথা বলার চেয়ে মেসেজেই কথা বলা হয় বেশি।
তাই ফেসবুক-মেসেন্জার এর কয়েকটি উপকারী দিক /কাজ নিচে তুলে ধরলাম;-
ইমোশন প্রকাশে ইমোজির কারসাজি:
তোমার থেকে বয়সে বড় কোনও সিনিয়র ভাইয়া কিংবা আপুকে সামনাসামনি কোনও কাজ করে দেওয়ার অনুরোধ করার সময় তোমার মুখভঙ্গি, কথা বলার ধরণেই প্রকাশ পায় যে তুমি তাকে অনুরোধ করছো! কিন্তু, এখনকার এ ব্যস্ত সময়টায় সামনাসামনির চেয়ে মেসেঞ্জার কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটিং বা মেসেজিং এর মাধ্যমেই কথা বলা হয় বেশি। তাই, মেসেজ কিংবা টেক্সট করার সময় ইমোজি কিংবা ইমোটিকনের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে তোমার কথা বলার ধরণ, মুখভঙ্গিমার যথার্থভাবে প্রকাশ করতে হবে!
এবার ঘরে বসেই হবে মডেল টেস্ট! পরীক্ষা শেষ হবার সাথে সাথেই চলে আসবে রেজাল্ট, মেরিট পজিশন। সাথে উত্তরপত্রতো থাকছেই!
নিজের ইনবক্সে সুরক্ষিত থাকুক গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো:
এতদিন অনেককেই তো মেসেজ করেছো কিন্তু কখনও নিজেকে মেসেজ করে দেখেছো? মেসেঞ্জার-এর এই আকর্ষণীয় ফিচারটা আমরা ক’জনই বা ব্যবহার করি কিংবা করেছি? মেসেঞ্জারের এই দারুণ ফিচারকে কাজে লাগিয়ে কিন্তু করে ফেলা যায় দারুণ সব কাজ! প্রেজেন্টেশনের আগের দিন প্রেজেন্টেশন ফাইলটা নিজেকে ইনবক্স করে রাখলে সময়মতো নিজের ইনবক্স থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবে! এছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফাইল কিংবা ডকুমেন্ট নিজেকে ইনবক্স করে রাখলে সময়মতো কাজে লাগাতে বেশ সুবিধা হয়!
মেসেঞ্জার প্ল্যান যখন অাইডিয়াল রিমাইন্ডার:
মেসেঞ্জার গ্রুপ বা থ্রেডে আড্ডা মারতে মারতে হুট করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেলো আগামী সপ্তাহে একটা ট্যুরে যাওয়া হবে সব বন্ধুরা মিলে! কিংবা, দশদিন বাদেই রয়েছে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং অথবা জরুরি কোনও গ্রুপ প্রজেক্টের সাবমিশন! মানব মস্তিষ্ক ক্ষেত্রবিশেষে অনেক জরুরি তথ্যকে তার ভেতর থেকে মুছে ফেলে! তাই, এর ওপর ভরসা না করে মেসেঞ্জারের অারও একটি দুর্দান্ত ফিচার প্ল্যান সেটিংকে কাজে লাগানো যেতে পারে! তাহলে, তুমি বা অপরপক্ষের কেউ কিংবা উভয়েই ভুলে গেলেও পরবর্তীতে অতি দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন মেসেঞ্জার নিজ দায়িত্বে তোমাদেরকে যথাসময়ে ইভেন্ট কিংবা টাস্কের কথা মনে করিয়ে দেবে!
লোকেশন নিয়ে কনফিউশন আর নয়:
আমরা সবসময় সকল ক্ষেত্রে দেরি করতে ভীষণ পছন্দ করি! আর সেটা যদি বন্ধুদের সাথে দেখার করার বিষয় তাহলে তো আর কথাই নেই! এমন একজন সেখানে নিশ্চিতভাবে থাকবেই যে কি না ঘুম থেকে না ওঠা সত্ত্বেও বলবে যে সে গন্তব্য থেকে মাত্র পাঁচ মিনিট দুরত্বে অবস্থান করছে! মেসেঞ্জার এর লোকেশন অপশন চালু করে খুব সহজেই জেনে নেওয়া যাবে সবার প্রকৃত অবস্থান! তাই, আর বাসা থেকে বের না হয়েও মিথ্যে বলার কোনও সুযোগ নেই!
ভার্চুয়াল আলাপচারিতার আদবকেতা:
এখনকার এই সময়টা ভীষণভাবে প্রযুক্তিনির্ভর! সামনাসামনি কথা বলার চেয়ে চ্যাটিং, টেক্সটিং কিংবা মেসেজিং এর মাধ্যমেই এখন বেশি কথা বলা হয়ে থাকে! তাই, এক্ষেত্রে মেনে চলতে হবে কিছু আদবকেতা! থ্রেডে কিংবা গ্রুপে নতুন কেউ এলে তাকে স্বাগত জানাতে কার্পণ্য করাটা অনুচিত! আর, একেবারে নতুন কারও সাথে প্রথমবারের মতো চ্যাট করার ক্ষেত্রে তাকে যথাযথ সম্মানপ্রদর্শনের পাশাপাশি নিজের পুরো পরিচয় দিয়ে কাজের কথা বলতে হবে! ভার্চুয়াল আলাপচারিতার শুরুর ক্ষেত্রে স্বাগত জানানোটা যেমন জরুরি, তেমনি কথা শেষ করার সময়টাও বেশ জরুরি। এক্ষেত্রে, মেসেজটা পড়ার পরপরই যেন অপরপক্ষ বুঝতে পারেন যে আলাপচারিতার সমাপ্তি ঘটেছে!
পোলেই ঘটুক বিতর্কের অবসান:
সামনে আসন্ন কোনও বন্ধুর জন্মদিন উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে! তাকে কি উপহার দেওয়া হবে সেটা নিয়ে গ্রুপে তুমুল বিতর্ক চলছে! বই নাকি চকোলেট; সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না কেউই! হঠাৎ বিতর্কের এক পর্যায়ে পুরো আলাপচারিতা ঘুরে গেলো সম্পূর্ন অপ্রাসঙ্গিক দিকে! একটা দারুণ কৌশলে সমাধান মিলবে সহজেই! মেসেঞ্জারের আরও একটি দারুণ ফিচার ‘পোল’ অপশন ব্যবহার করে সিদ্ধান্তে আসা যাবে সহজেই!
ব্লগটা পড়তে পড়তে চল খেলে আসি সংখ্যা নিয়ে কিছু ব্রেইন টিজার গেইম!
শুদ্ধ ভাষার চর্চা হোক মেসেজের সাহায্যেই:
মেসেঞ্জার থ্রেড কিংবা গ্রুপগুলোকে কিন্তু অনেক ভালো ভালো কাজে ব্যবহার যায়! শুদ্ধ ভাষার অনুশীলন হতে পারে তার একটি! আমরা অনেকেই মেসেজ করার সময় ইংরেজি অক্ষরে বাংলা কিংবা বাংলা অক্ষরে ইংরেজি লিখি! পূর্ণ শব্দ লেখাটাকেও প্রায় সময় এড়িয়ে যাই। যেটার কুপ্রভাব ক্ষেত্রবিশেষে পরীক্ষার খাতাতেও পড়ে! মেসেঞ্জার থ্রেডটাকে এক্ষেত্রে দারুণ ভাবে কাজে লাগানো সম্ভব! করণীয় বলতে নতুন একটা গ্রুপ খুলে সেখানে একইভাবে টেক্সটিং কিংবা চ্যাটিংই করতে হবে শুধু ভাষাটা হতে হবে শুদ্ধ বাংলা কিংবা ইংরেজি অর্থাৎ যে ভাষা তুমি শিখতে আগ্রহী! অল্প সময়ের ব্যবধানে লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে!
টাইপিং মিসটেক নিয়ে বিড়ম্বনা আর নয়:
মেসেজ লিখতে গিয়ে তাড়াহুড়ো কিংবা অসাবধানতায় অনেকসময় ছোটখাটো ভুল করে ফেলি আমরা! মেসেজ পাঠানোর পর সেটা যখন নজরে আসে তখন কিন্তু বেশ বিব্রতকর একটা অবস্থায় পড়ে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে সে অনিচ্ছাকৃত ভুলটা সংশোধন করে দেওয়া বেশ জরুরি! ভুলটাকে সনাক্ত করার পর অন্তত ‘*’ চিহ্ন ব্যবহার করে সেটা সংশোধন করে পুনরায় পাঠানো উচিত!
নিয়মিত ব্যবহার করা এই মেসেঞ্জারের এত দুর্দান্ত ফিচারগুলোর যথার্থ ব্যবহারে জীবন হয়ে উঠুক আরও সহজ আর স্মার্ট!