ঘুম বড় প্রশান্তির এক নাম। ঘুমহীন জীবন এককথায় অসম্ভব। ঘুমের সম্যায় আমরা কম বেশী অনেকেই আক্রান্ত। আপনি কি ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন? রাতে বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করেন? যতই চেষ্টা করুন না কেন কিছুতেই দু’চোখে ঘুম আসছে না?নিদ্রাহীন রাত কাটানো যন্ত্রনার সাথে কমবেশি সবাই পরিচিত।আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের গবেষকদের মতে, দৈনন্দিন জীবনের স্ট্রেসই নাকি রাতে ঘুম না আসার পিছনে প্রধান কারন।রাতে ঘুম না আসার যন্ত্রনায় বিছানায় এপাশ ও পাশ করা। না ঘুমাতে পেরে চোখের নিচে কালি পড়া। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া। নানারকম অশান্তি। বিষন্নতা। মনোযোগ কমে যাওয়া। আরো কত কি? দেখবেন অনেকেই ঘুমের ঔষুধ ছাড়া ঘুমাতে পারেন না। আপনার আশেপাশেই রয়েছে এমন অনেক মানুষ। কিন্তু এধরনের স্লিপিং পিল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আপনি চিরদিনের জন্য ঘুমের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান? ঘুমের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে ঘরে রাখেন এমন কিছু ইনডোর প্লান্ট যা আপনার ঘুমের সমস্যা দূর করবে এক লহমায়।
প্রজেক্ট গ্রিনের পর্ব-১ এবং পর্ব ২ পড়ুন।
(১) জুঁই
জুঁই ফুলের মৃদু সুগন্ধ মানুষের শরীর ও মনের উপর শান্ত, নিবিড় প্রভাব বিস্তার করে। উদ্বেগ কমিয়ে প্রশান্তির ঘুমের জন্য এই ফুল গাছের জুড়ি মেলা ভার। আপনার শোওয়ার ঘরে এই সুগন্ধী ফুলের গাছ রাখলে গভীর ঘুমে সাহায্য করে । ফলে পরদিন ঘুম থেকে উঠে আপনি আবিস্কার করবেন যে, আপনি বেশ ভোরেই উঠেছেন। মনমেজাজ ও ভালো। ফলে কাজের মান আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের দ্য হুইলিং জেসুইট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, জেসমিন ঘুমের প্রাকৃতিক ওষুধ। এটি ভালোভাবে ঘুমাতে সাহায্য, মেজাজ ভালো, নিদ্রাভঙ্গের কারণে বিরক্তিভাব দূর ও দুশ্চিন্তামুক্ত রাখে। ‘দ্য জার্নাল অব বায়োলজিক্যাল কেমিষ্ট্রি’র এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের যেকোনো ওষুধ কিংবা ভ্যালিয়াম যেভাবে কাজ করে জুঁই ফুলের সুগন্ধও এইকভাবে স্নায়ুতে এনে দেয় প্রশান্তি৷ যা মানুষের চোখে ঘুম নামিয়ে আনতে সাহায্য করে৷
(২) গার্ডেনিয়া
চিরহরিৎ সুবাসিত এই ফুল গাছটি বেডরুমে সাজানোর জন্য আদর্শ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক উৎকন্ঠা, উদ্বেগ দূর করতে এবং আরামদায়ক ঘুমের জন্য এই ফুল গাছটি খুবই কার্যকর। তবে এই যথেষ্ট আলো বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় এই গাছের টব রাখলে তা তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায়।
(৩) স্নেক প্লান্ট
ভয়ের কিছু নেই। এই গাছ বিষাক্ত নয়। কামড়ায়ও না। শোওয়ার ঘরে রাখলে মাথা ধরা, চোখের সমস্যা কমে, নিশ্বাসের সমস্যায় আরাম পাওয়া যায়।
ঘরে বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহে স্নেক প্ল্যান্ট উল্লেখযোগ্য একটি নাম। সৌন্দর্য, কম খরচ ও সহজে এই গাছ বড় হয় বলে আপনার শোবার ঘরের জন্য উপযুক্ত এই গাছ।এই গাছ রাতে অক্সিজেন ছড়ায় ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ফলে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নেয়। ঘরের ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন ও বেনজিন নামক টক্সিন শুষে নিয়ে বাতাসকে বিশুদ্ধ করে বলে রাতে ভালো ঘুম হয়।
(৪) গারভেরা ডেইজি
গোলাপী কমলা, হলুদ এবং সাদা এমনি বাহারি রঙের গারভেরা ডেইজি শোবার ঘরের কাছাকাছি রাখলে মন প্রফুল্ল থাকে। কাজে মন বসে। এই গাছ কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করায় ঘরের পরিবেশ রাখে দুষণ মুক্ত। যাদের এলার্জি সমস্যা আছে তাদের শোওয়ার ঘরে এই গাছ রাখলে ভালো ঘুম হয়।
(৫) বেলি:
বেলি ফুলের সুবাস সকলের মনকে মোহিত।এই গাছের এমনি ঔষধি ক্ষমতা রয়েছে যা ঘুমের ওষুধের চেয়ে ড়ের বেশি কাজ করে। ঘুমের ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে কিন্ত বেলি ফুল গাছের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। হাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওলগা জেরগেভা ও অধ্যাপক হেলমুট হাস এবং বোখুমের রুঢ় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এক গবেষণা থেকে দেখা যায়, ঘুমের ওষুধের যে উপাদানটি মানুষকে প্রশান্তি এনে দেয় বেলি ফুলের সুগন্ধের মধ্যেও একই ধরণের উপাদান রয়েছে৷
(৬) অ্যালয় ভেরা:
বহু দিন ধরেই এই গাছ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই গাছ রাতে অক্সিজেন নির্গত করে। যা উৎকণ্ঠা, স্ট্রেস কমিয়ে ভাল ঘুমোতে সাহায্য করে। প্রশান্তিময় ঘুম আনয়নে এই গাছ ম্যাজিকের মত কাজ করে। বেড রুমের জানালার কাছে এই গাছ রাখলে আলো বাতাস পেয়ে যেমনি এই গাছ দ্রুত বেড়ে উঠবে, ঠিক তেমনি পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে রক্ষা দেবে আপনাকে এবং সর্বোপরি আপনার, আপনার পরিবারের এবং বন্ধুদের জন্য নিয়ে আসবে উদ্গেহীন ঘুম।
(৭) ইংলিশ আইভি:
বায়ু পরিশোধক হিসেবে ইংলিশ আইভি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি রাত্রে নিশ্চিন্তে ঘুমোনোর অন্যতম প্রভাবক হিসেবেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। কম সূর্যের আলোতে জন্মানো এই গাছের পাতা হাঁপানি বা এলার্জি উপশমে যথেষ্ট কার্যকর। নাসার রিপোর্ট অনুযায়ী এই গাছ সবচেয়ে বেশি বাতাসের জীবাণুমুক্ত করতে পারে। তাই অ্যাস্থমা বা অ্যালার্জির সমস্যায় ঘুমোতে অসুবিধা হলে অবশ্যই এই গাছ রাখুন শোওয়ার ঘরে।
(৮) ল্যাভেন্ডার
এই সুগন্ধী গাছের রয়েছে প্রচুর গুণ।
প্রসাধনী সামগ্রী যেমন- সাবান, পারফিউম ও শ্যাম্পুতে ল্যাভেন্ডারের ফ্লেভার হিসেবে ব্যভহারের পাশাপাশি শোওয়ার ঘরে এই গাছ ঘুমোতে সাহায্য করে। এটি খুব ভালো ক্লিনজিং এজেন্ট হিসেবে পরিচিত। ল্যাভেন্ডার গাছ ইনসমোনিয়া ও মানসিক অস্থিরতা, স্ট্রেস কমাতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। গবেষকদের মতে, ল্যাভেন্ডারের গন্ধ শ্বাসনালীতে প্রবেশ করলে তা প্রাকৃতিক নিরাময়ক হিসেবে কাজ করে।
বাসা বাড়িতে এইধরনের গাছ লাগানো পূর্বে যেসব বিষয় ভেবে রাখা দরকার:
- বাড়িতে যদি ছোট বাচ্চা তাকে এবং চতুস্পদ জন্তু থাকে, সেক্ষেত্রে কিছু কিছু হাউজ প্লান্ট যেমন: সেন্ক স্নেক প্লান্ট, ইংলিশ আইভি এইধরনের গাছ রাখা উপযক্ত নয়। এধরনের আরো কিছু গাছ রয়েছে যা ঘরে রাখার আগে জেনে করে নেয়া ভালো ।
- প্রতি সপ্তাহে পর্যবেক্ষণ করে দেখুন যে হাউজ প্লান্টগুলো বায়ু পরিশোধক হিসেবে ঠিকমতো কাজ করছে কিনা। গাছ গুলো সঠিকভাবে পরিচর্যার মাধ্যমে যেমন: গাছে পানি দেয়া, পাতা পরিস্কার করা, মরা, পচাঁ পাতা পেলে দেয়া, সেদিকে নজর রাখার জন্য সপ্তাহে একদিন কিছু সময় বরাদ্দ রাখুন।
- ঘরের আকৃতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমানের ঘুম সহায়ক গাছ না রাখলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে না। নাসার গবেষণা অনুযায়ী প্রতিটি ১৮০০ স্কয়ার ফুটের একটি বাড়িতে ১৫-১৮ টি বায়ু পরিশোধক গাছ রাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এর কম রাখলে ঘরে পরিবেশ সবসময় দূষণমুক্ত নাও থাকতে পারে। ফলে ঘুমের জন্য সেসব গাছ আপনার ঘুমের জন্য যথাযথ ভূমিকা নাও রাখতে পারে।
আমরা বাড়িতে অনেকেই গাছ রাখি সুন্দর করে সাজানোর জন্য। তবে জানেন কি ইনডোর প্ল্যান্টের আসল গুরুত্ব কোথায়? কেনই বা সব গাছ ঘরে রাখা যায় না? বাড়িতে গাছ রাখার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্বাস্থ্য ভাল থাকা। ঠিক তেমনি পরিপূর্ণ ঘুম না হলে ভাবুন তো পরের দিনটা আপনার কেমন যাবে? পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ১০০% বিশুদ্ধ আর্যর্বেদিক একমাত্র উপায় হচ্ছে এমন সব গাছ ঘরে রাখেন যা আপনার প্রাত্যহিক জীবনের উৎকন্ঠা, উদ্বেগ দূর করবে। আপনাকে দেবে প্রশান্তির ঘুম । কাজেই আর দেরী কিসের ? শুরু করে দিন গাছ লাগানোর প্রজেক্ট। লাগান এসব হাউজ প্লান্ট যা আপনার জীবনকে করো তুলবে সুন্দর ও সাচ্ছন্দ্যময়।