ভ্রমণ পিপাসুরা কখনো নিজেদের এক জায়গায় আটকে রাখতে পারেন না। পৃথিবী দেখার নেশায় তারা দেশ-বিদেশ ঘুরতে থাকেন। আর ভ্রমণের মত রোমাঞ্চকর ব্যাপার কিন্তু পৃথিবীতে কমই আছে!
ছুটিতে নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য অধিকাংশ মানুষ এমন সব জায়গা বেছে নেন যেখানে পর্যটকরা প্রায়শ আসা যাওয়া করেন। কারণ সবার মাঝে একটা ধারণা তৈরী হয়ে গেছে- “যত বেশি পর্যটক, তত বেশি ভালো জায়গা”। এ ধারণাটি মোটেও সঠিক নয়। বরং পৃথিবীতে এমন কিছু মনোহর স্থান রয়েছে যা পর্যটকদের কাছে খুব বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। এরকম চমৎকার নিরিবিলি ১৫টি জায়গা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
বাংলাদেশ
বৈচিত্রপূর্ণ সংস্কৃতি ও সমৃদ্ধ ইতিহাসের সাথে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মত অনেক সম্পদ রয়েছে। যদিও আমাদের অর্থনীতিতে পর্যটন যথেষ্ট উন্নত কোন খাত নয়, তারপরও ঘুরে বেড়ানোর জন্য এখানে কিছু প্রাচীন রাজপ্রাসাদ,বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ কোস্ট এবং দীর্ঘতম সৈকতসহ অপূর্ব কিছু জায়গা রয়েছে।
জোসে ইগনাসিও, উরুগুয়ে
জোসে ইগনাসিওতে কেবলমাত্র ৩০০জন মানুষ বাস করে, তবে শীতকালে (অর্থাৎ আমেরিকার গ্রীষ্মের সময়) এ নিরিবিলি শহরটিতে ল্যাটিন আমেরিকান সুপারস্টারদের আনাগোনা বেড়ে যায়। তাই শহরটিতে বিলাসবহুল হোটেল ও চমৎকার রেস্তোরাঁর কোন কমতি নেই। যারা একইসাথে নির্জনতা ও বিলাসিতা পছন্দ করেন, তাদের জন্য জোসে ইগনাসিও হতে পারে উত্তম একটি স্থান!
কোহ রাং, কাম্বোডিয়া
সভ্যতা থেকে সাময়িক বিরতি নিতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই কোহ রাং দ্বীপ ঘুরে আসতে হবে। কোন গন্ডগোল,শব্দদূষণ,গাড়ি কিংবা ভীড় এখানে এসব কিছু নেই! এখানে শুধু আপনি পাবেন নীরবতা, কিছু শান্তিপূর্ণ মাছ ধরার গ্রাম ও পবিত্র প্রকৃতি। কোহ রাংকে এখনো “২০বছর আগের থাইল্যান্ড” হিসেবে গণ্য করা হয়।
সোফিয়া, বুলগেরিয়া
অন্যান্য ইউরোপীয় রাজধানীগুলোর সাথে তুলনা করলে, সোফিয়া সেখানকার সুলভ পর্যটন শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। বুলগেরিয়ার এ শহরটিতে ঐতিহাসিক স্থাপত্যের এক সমৃদ্ধ সম্ভার রয়েছে, যা যে কারো দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম। বিশেষজ্ঞদের মত সোফিয়া খুব শীঘ্রই পর্যটন শিল্পে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
অ্যাম্বারগ্রিজ কি, বেলিজ
অ্যাম্বারগ্রিজ কি দ্বীপের অনেক সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এ দ্বীপে তিমি শিকারী,জলদস্যু ও ইন্ডিয়ার মায়ানীবাসী বসবাস করেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রবালপ্রাচীর বেলিজ ব্যারিয়ার রীফের কাছাকাছি অবস্থিত এ দ্বীপটি বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ডুবুরিদের আকর্ষণ করে থাকে।
মায়ানমার
মায়ানমার পূর্ব এশিয়ার ছোট একটি দেশ। ২০১০ সালে এ দেশে পর্যটকের সংখ্যা ছিল কেবলমাত্র ৩০০,০০০ জন, কিন্তু ৩বছর পর এই সংখ্যা ২ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। মায়ানমারের পর্যটন খুব দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। তবে শান্তিময় ভ্রমনের সুযোগ কিন্তু আপনার জন্য এখনো আছে। চাইলে আপনি সেখানকার নির্জন ইনলে লেকে নৌকা আরোহন করতে পারেন কিংবা শ্বেডাগন পায়ায় প্রতিফলিত সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারেন।
রোটান, হণ্ডুরাস
যাত্রীবাহী জাহাজরা ২০০৫ সালের দিকে রোটানে ভ্রমণ শুরু করে। সত্যি বলতে হণ্ডুরাস খুব একটা নিরাপদ কোন স্থান নয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে ডুবুরিরা মেসোআমেরিকান ব্যারিয়ার রীফ দেখতে আসা শুরু করলে, রোটান জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। এখানে ভ্রমণে আসলে আপনি যেমন মাছ ধরার সুযোগ পাবেন, সেই সাথে ক্যায়োস কোচিনোস (Cayos Cochinos) দ্বীপপুঞ্জ অন্বেষণ করতে পারবেন।
অ্যাপুলিয়া, ইতালি
অ্যাপুলিয়াতে যদি আপনি ভ্রমণে যান তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে সেখানকার নীলসমুদ্র,লাল মাটি,সুবর্ণ সূর্যাস্ত ও অতিথিপরায়ন স্থানীয় মানুষদের জন্য। সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করা ছাড়াও এখানে আপনি চমৎকার কিছু জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন যেমন-বারী ক্যাসল,সান্তা ক্রস ব্যাসিলিকা কিংবা রিগন্যানো গার্গানিকো প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর।
জিম্বাবুয়ে
জিম্বাবুয়ের ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত ইতিমধ্যে সবার কাছে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। কিন্তু এটি যে হুয়েঞ্জ ন্যাশনাল পার্কের কাছে অবস্থিত, তা হয়তো অনেকে জানেন না। বিশাল এ পার্কের আয়তন ১৪,৬০০ বর্গ কিলোমিটার। পার্কটিতে রয়েছে বিভিন্ন লেক,বিরল উদ্ভিদ,আফ্রিকান বন্য প্রাণী ও পাখি। হুয়েঞ্জ ন্যাশনাল পার্ক তাদের হাতি নিয়ে অনেক গর্ববোধ করে, কারণ এখানে ৩০,০০০ চেয়ে বেশি হাতি রয়েছে!
বুশান, দক্ষিণ কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বুশান কিন্তু ভ্রমণের জন্য অনেক উপযুক্ত একটি জায়গা। অনেকগুলো সমুদ্র সৈকত থাকার কারণে বুশানকে ‘কোরিয়ার গ্রীষ্ম রাজধানী’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। তাছাড়া শহরটি শিল্প জাদুঘর,পাখির খোলা আশ্রয়স্থল ও একটি মাছ বাজারের জন্য বিখ্যাত।
ম্যানিলা,ফিলিপাইন
ফিলিপাইনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হচ্ছে ম্যানিলা। সস্তা ও সুস্বাদু খাবারের জন্য ম্যানিলা বিখ্যাত। ম্যানিলায় তিন রাতের ডিনারে আপনার খরচ হবে ১৮ ডলার,অথচ একই খাবারের জন্য অন্য জায়গায় আপনাকে গুনতে হবে প্রায় ৯৫ ডলার। শহরটিতে প্রাচীন গির্জা,সুন্দর প্রাসাদ,মঠ ও জাদুঘরসহ পর্যটকদের আকর্ষণ কাড়ার জন্য অনেক কিছু রয়েছে।
ফু কোক, ভিয়েতনাম
ফু কোকের সৌন্দর্য এক কথায় বর্ণনা করা সহজ নয়। দ্বীপটির তুষার সাদা বালির সৈকত,স্ফটিকের মতো বিশুদ্ধ পানি এবং পান্না সবুজ জঙ্গল আপনাকে মুগ্ধ করবে। এখানে ডাইভিং ও নৌকা চালানোর পাশাপাশি বিভিন্ন খামার পরিদর্শনের সুযোগ পাবেন। প্রকৃতির সাথে ঐক্য গড়ে তুলতে চাইলে ফু কোকে ভ্রমণ হবে সঠিক সিদ্বান্ত।
ইয়র্ক, গ্রেট ব্রিটেন
ইংল্যান্ডের সবচেয়ে প্রাচীন ও সুন্দর শহরগুলোর তালিকায় ইয়র্ক রয়েছে। চায়ের ঘর,পানশালা,কফি হাউস,গির্জা,পুরোনো বিল্ডিং-কি নেই এই শহরে! ইয়র্কের একটি প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে চমৎকার এক ক্যাথেড্রাল যা প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো। আগামী কয়েক বছরে ইয়র্কে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ভ্রমণে শান্তি ভোগ করতে চাইলে দ্রুত সেখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
কেপ, কাম্বোডিয়া
১৯০৮ সালের শুরুর দিকে কাম্বোডিয়ার কেপ শহরটি ফরাসি অভিজাত বাসিন্দাদের প্রিয় গন্তব্য ছিল। সুন্দর সুন্দর রেস্তেরাঁ আর বিলাসবহুল বাসভবনের জন্য কেপ ছিল অনেক বিখ্যাত। গৃহযুদ্ধের পর ঔপনিবেশিক অঞ্চলটি ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়। তবে বর্তমানে এ শহর মন শিথিল করার জন্য দুর্দান্ত এক জায়গা!
সালিনাস গ্র্যান্ডেস, আর্জেন্টিনা
এই লবণ মরুভূমি আসলে একটি বড় লবণ বিল বা জলাভূমি যা ২৫০ কি.মি. দীর্ঘ এবং ১০০ কি.মি. চওড়া। বৃষ্টি হলে এটি একটি বিশালাকার আয়নায় পরিণত হয়। যদিও সালিনাস গ্র্যান্ডেসের মধ্য দিয়ে অনেকগুলি রেলপথ এবং সড়ক চলে গেছে, তবে এটি এখনো চলাচলযোগ্য বলে বিবেচিত হয় না। তাই পর্যটকদের কাছে জায়গাটি খুব একটা জনপ্রিয় নয়।