তৈরি করে ফেলুন চাকরির জন্য দুর্দান্ত একটি কাভার লেটার!

একটি চাকরিতে আবেদনের জন্য সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি কভার লেটারও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।সিভি যেভাবে আপনাকে উপস্থাপন করে ঠিক তেমনি ভাবে সিভির সাথে একটি কভার লেটার করতে পারে আপনাকে আরো পারফেক্ট। একটি কোম্পানি আপনাকে জানতে পারবে সিভির মাধ্যমে তবে কভার লেটার থেকে নিজেকে আরও সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করার বিশেষ কৌশল আছে। অনেক সময় কোম্পানি গুলো শুধু সিভি পাঠাতে বলে। তবে মনে রাখবেন, অনেকের থেকে নিজেকে খানিকটা আলাদা করে উপস্থাপন করতে সিভির সাথে কভার লেটারের গুরুত্ব আরও বেশি।এর ফলে কোম্পানির এইচআর ম্যানেজারের কাছে হতে পারেন আপনি একটু আলাদা এবং স্মার্ট।

কভার লেটার কি?? 

প্রশ্ন আসতে পারে কভার লেটার কি? উত্তর হল , আপনার পুরো সিভির একটা সংক্ষিপ্তরূপ কিংবা আপনি কোন পদে আবেদন করছেন এবং এইচআর ম্যানেজারকে আপনার সিভিটি দেখতে বাধ্য বা আকৃষ্ট করার জন্য আধুনিক যুগের অন্যতম হাতিয়ার হলো ‘কভার লেটার’।

 

 কভার লেটার লেখার আগে করণীয় ঃ

একটি কোম্পানিতে আপনি এপ্লাই করতে যাচ্ছেন। এর জন্য সুন্দর একটি সিভি তৈরি করে নিলেন। এবার আপনার কাজ হবে ঠাণ্ডা মাথায় একটি কভার লেটার লেখা। কভার লেটার লেখার আগে আপনার প্রথম কাজ হবে যে কোম্পানিতে আপনি আবেদন করতে চাচ্ছেন সে কোম্পানি সম্পর্কে ভাল ভাবে জেনে নেয়া। ঐ কোম্পানির কাজ, কর্মকর্তার-কর্মচারীবৃন্দের কর্মকাণ্ড, চাকরি প্রত্যাশী ও প্রতিযোগিদের ধরন ইত্যাদি সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন। এর প্রতিটি তথ্য হয়তো আপনি কভার লেটার এ লিখতে পারবেন না। কিন্তু যদি ঐ কোম্পানির কাজ ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে আপনার সম্যক জ্ঞান থাকে, তবে তা আপনার জন্য একটি উন্নত মানের কভার লেটার লেখা সহজ হবে।কাকে কভার লেটার পাঠাবেন তাও জেনে নেয়া যেতে পারে। তবে, এইচআর ম্যানেজারের কাছে সাধারনত সিভি পাঠানো হয়ে থাকে। তবুও কনফিউশন থাকলে কোম্পানিতে ফোন দিয়ে শুনে নিতে পারেন।

 

কভার লেটারে যেসব বিষয় থাকবে ঃ

  • শুরুতেই তারিখ, কার নিকট লিখছেন ,কোম্পানির নাম ,ঠিকানা ইত্যাদি কভার লেটার এর বাম পাশে ধারাবাহিক ভাবে লিখবেন।
  • কোন পজিশন এর জন্য আপনি এপ্লাই করেছেন সেটি সাবজেক্ট এ উল্লেখ করবেন।
  •  আপনি আপনার কভার লেটার লেখার উদ্দেশ্য টি সুন্দর করে তুলে ধরুন। চাকরির সোর্স আপনি কোন পত্রিকা বা অনলাইন পোর্টাল থেকে পেয়েছেন তাও উল্লেখ করুন।
  • এরপর আপনি যে পদের জন্য আবেদন করেছেন সে পদের জন্য আপনি আপনাকে কতটুকু যোগ্য মনে করেন এবং কি কি বিষয়ে আপানার দক্ষতা রয়েছে তা লিখুন।
  •  আপনি যে কোম্পানিতে চাকরী করতে চাচ্ছেন সে কোম্পানিতে যদি চাকরী টি হয়ে যায় তাহলে আপনি কোম্পানিকে কিভাবে সেবা প্রদান করতে পারবেন সেটা উল্লেখ করুন। আপনি যে কোম্পানির জন্য নিবেদিত প্রাণ হতে পারেন টা আপনার লেখাতে তুলে ধরুন। যাতে বুঝতে পারা যায় যে, আপনি সত্যি চাকরী টি করতে আগ্রহী এবং আপনাকে দিয়েই কাজটি হবেই হবে।
  •  আপনার কভার লেটারটি সংক্ষিপ্ত ও যথাযথ রাখতে পারেন। একটি সুন্দর ও সাবলীল বাক্য দিয়ে শুরু করুন এবং যেন সাথে সাথেই আপনি পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন।  প্রয়োজনীয় নয় এমন ব্যক্তিগত তথ্য না দেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।

 

আকর্ষনীয় কভার লেটার লিখার কিছু প্রয়োজনীয় টিপসঃ
  • মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে এমন কিছু শব্দ বা বাক্য দিয়ে শুরু করুন।
  •  যতটুকু সম্ভব পেশাদারী মনভাব বজায় রাখুন যেন কভার লেটার পড়েই বোঝা যায় আপনি একটু হলেও সিরিয়াস।
  •  কর্ম ক্রিয়াপদ ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার কভার লেটারটি আরো প্রানবন্ত করুন।যেন পড়লেই বোঝা যায় যে আপনি কিছুটা ক্রিয়েটিভ পারসন।
  • যতোটা সম্ভব আপনি আপনার চাকরির পদ অনুযায়ী কভার লেটার পরিবর্তন করুন। একই কভার লেটার বা একই ধরনের কভার লেটার বিভিন্ন কোম্পানি না পাঠানোই ভাল।প্রতিটি কোম্পানির জন্য কভার লেটারে পরিবর্তন আনুন।
  • বানানের প্রতি অবশ্যই আপনাকে খেয়াল রাখা জরুরী। কেনোনা আপনার সিভি বা কভার লেটার মূলত আপনাকেই উপস্থাপন করছে। আর সেই আপনার মূল্যবান সিভি বা কভার লেটারে যদি বানান ভুল ধরা পরে তবে নিমিষেই বুঝে নেয়া যায় আপনি কতোটা দায়ীত্বহীনতার কাজ করেছেন। তাই, অবশ্যই বানানের প্রতি খেয়াল রাখুন। গার্ডিয়ান জবসের এক জরিপে দেখা গেছে, ৮৩% আবেদনকারীর আবেদন বাতিল হয়ে যায় শুধু বানান ভুল থাকার কারণে।
  •  সঠিক ,সুন্দর, সহজ ও সরল বাক্য ব্যবহার করুন।
  •  কভার লেটার বেশি বড় করবেন না।অর্থাৎ A4 সাইজের একপাতায় শেষ করবেন।  সেক্ষেত্রে নিজেকে প্রেজেন্ট করতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণ শব্দের মাধ্যমেই।
  • নিজের গুনগান গাইতে যাবেন না কিংবা করুণা ভিক্ষা চেয়ে তাকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করবেন না। তাহলে কোম্পানি আপনার যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহে পড়ে যাবে। কাজটি পারার ব্যাপারে কনফিডেন্স দেখাবেন।

 

যেসব মারাত্মক ভুলগুলো এড়িয়ে চলতে হবেঃ 

  • ফর্ম লেটার পাঠানো।
  • কভার লেটারে স্বাক্ষর করতে ভুলে যাওয়া।
  • ব্যক্তিগত তথ্য যা চাকরিটির সাথে সম্পৃক্ত  নয় তা অন্তর্ভুক্ত করা।
  • নিজের দুর্বলতাগুলো প্রকাশ করা।
  • কাগজে বা খামে খাদ্যের দাগ লেগে থাকা।
  • জীবনবৃত্তান্ত সংযুক্ত করতে ভুলে যাওয়া।
  • নামের বানানে ভুল করা।

 

যে কাজ গুলো না করলেই নয়ঃ 

  • পুরো কভার লেটারটি অন্তত দুবার চেক করুন।
  • সঠিক ব্যাক্তিকে সম্বোধন করা হয়েছে কিনা তা পুনরায় চেক করুন।
  • লেটারটি কি এক পেইজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পেরেছেন নাকি পারেননি তা চেক করুন।
  • চাকরীদাতার চাহিদা মতো সব কিছু ঠিক আছে কিনা তা চেক করুন। কোন কিছু সংযুক্ত করতে চাইলে তাও করুন।
  • কভার লেটারের অতিরিক্ত একটি কপি অন্তত আপনার কাছে রাখুন। পরে কাজে আসবে।
  • কালো অথবা নীল কালিতে স্বাক্ষর করেছেন কিনা তা চেক করুন।

 

মনে রাখবেন আপনি হয়তো আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরীর দরজায় যেতে পারবেননা তবে ঠিকই আপনার সিভি কোম্পানির দরজায় চলে যাবে। তাই সিভি তৈরি এবং কভার লেটার তৈরির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকুন।

বাংলা হাবে প্রকাশিত  সিভি সম্পর্কিত লেখাটি পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-

 

চাকরী সংক্রান্ত যে লেখাগুলো আপনার কাজে লাগতে পারেঃ

 

ধন্যবাদ।