মফস্বলের মেয়ে আমি। শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে একটু বিপদে পরে গেছিলাম। বড় শহরের কায়দা কানুন, এত এত পড়ালেখা, বিশাল বিশাল বিল্ডিং আর রাস্তায় জঘন্য ট্রাফিক জ্যাম। মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো খুব। হোস্টেলে রুম পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলাম। রুমমেটের সাথে জমিয়ে আড্ডা দেবো, একসাথে পড়বো, খুব মজা করবো। কিন্তু সেই আশায় গুড়ে বালি!
আমার রুমমেট লিসা একেবারেই আমার উলটো। আমি পছন্দ করি গল্পের বই পড়তে, ও সারাক্ষণ মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত। বাইরে ঘুরোঘুরি, আড্ডা, জোরে জোরে গান শোনা, আর বাইরে থেকে এসেই ঘুমিয়ে পরা। এই ছিলো ওর জীবন। তাই ওর সাথে আমার খুব একটা বন্ধুত্ব হয়নি। ও আমাকে খুব একটা পছন্দ করতো না। আমিও ওর ধারেকাছে যেতাম না। একটা শীতল সম্পর্ক ছিলো আমাদের মধ্যে। অবশ্যি তাতে আমার সমস্যা হয়নি। আমি আশেপাশের রুমের সবার সাথে বন্ধুত্ব করে ফেলেছিলাম।
পরীক্ষার আগের রাত, আমি আমার পাশের রুমের বান্ধবীদের সাথে মিলে পড়ছি। আমার রুমে পড়তে পারিনা কারণ লিসা আলোতে ঘুমাতে পারেনা। লাইট জ্বালানো থাকলে ও খুব বিরক্ত হয়, রাগারাগি করে। আমি এত ঝামেলা পছন্দ করিনা বলেই পাশের রুমে পড়ি। ওদের আবার এত সমস্যা নেই।
রাত ২ টার দিকে আমি আমার রুমে গেলাম একটা বই আনতে। আমি ঘরে ঢোকার পর দেখি রুম অন্ধকার, সেটাই স্বাভাবিক। আমি ঘরে ঢুকতেই লিসা আওয়াজ পেয়ে একটু যেন নড়লো। ভাবলাম ও হয়তো গভীর ঘুমে নেই। তাই আমি একটু গলাখাকাড়ি দিয়ে সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম, “লিসা, লাইট জ্বালাই? একটা বই নিবো।” ও কোন জবাব দিলোনা। ওর নড়াচড়া ও বন্ধ হয়ে গেলো। আমি লিসাকে আর না ঘাটিয়ে আমার টেবিলের কাছে যেয়ে বইটা খুঁজতে লাগলাম। আমার সস্তা মোবাইলের ঝাপসা আলোয় বইটা নিয়ে চলে এলাম। তারপর সারারাত পাশের রুমেই কাটিয়েছি।
সকালবেলা পরীক্ষা দিতে যাবো, তৈরি হওয়ার জন্য ঘরে এলাম। ঘরে ঢুকে আমি যা দেখলাম, এই জীবনে আমি তা কখনো ভুলতে পারবোনা। এত নৃশংস, বিভৎস দৃশ্য আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি।
পুরো বিছানায় শুধু রক্ত আর রক্ত। বিছানা বেয়ে মেঝেতে গড়িয়ে পরেছে। রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে। লিসার পেটের নাড়িভুঁড়ি সব বের হয়ে আছে, ওর মাথাটা শরীর থেকে কে যেন প্রচন্ড আক্রোশে কেটে ফেলেছে। থরথরিয়ে কাঁপতে কাঁপতে আমি ঘরের চারদিকে দেখলাম। তখন একটা জিনিস আমার চোখে পরলো। বিছানার ওপর দেয়ালে লিসার রক্ত দিয়ে কিছু লেখা। লেখাটা পড়ার পর আমার আর কিছু মনে নেই। আমি অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম। জ্ঞান ফিরে আমি নিজেকে আবিষ্কার করি হাসপাতালে।
দেয়ালে কি লেখা ছিলো, জানেন? লেখা ছিলো, “তোমার ভাগ্য ভালো যে তুমি লাইট জ্বালাওনি!”
(বিদেশী গল্প অবলম্বনে)