আমাদের এই পৃথিবী নানা বৈশ্বিক সমস্যায় আক্রান্ত, যাদের অনেক গুলোই সমাধান করা যাচ্ছে না। কারণ দুটো। আমাদের ইচ্ছার অভাব অথবা প্রযুক্তিগত অক্ষমতা। তবুও মানুষ থেমে নেই। অসাধ্যকে সাধন করতে তারা ভেবে চলেছে নানা উপায়ের কথা। আজ থাকলো তারই কিছু গল্প।
১। পৃথিবীর উষ্ণতা কমাতে মাংস খাওয়া কমিয়ে দিন
ভেজিটারিয়ান বা নিরামিষ ভোজী হওয়া শরীরের জন্য ভালো তা কে না জানে! সব বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকেরাই সাধারণ ভাবে এ বক্তব্যের সাথে একমত। কিন্তু যদি এরকম বলা হয় যে, পৃথিবীর জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন কমাতেও তা কার্যকরী, বিশ্বাস হয়? প্রথম দৃষ্টিতে মাংস খাওয়া কমিয়ে দিলে বৈশ্বিক উষনতা কমে যাবে- এরকম বক্তব্য শুনে ভড়কে যাওয়া স্বাভাবিক। জুলাই, ২০১৪। প্রসিডিং অব ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স তাদের এক রিপোর্টে জানায়, ” পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী হচ্ছে পশুপালন ও উৎপাদন বৃদ্ধি। এটা বায়দূষণ ঘটায়, পানির উৎসগুলোকে নষ্ট করে এবং এ কাজের জন্য অনেক জমি অপচয় হয়। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, ১৮ ভাগ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য পশুপালন ও উৎপাদন যায়ী; দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়াচের মতে ৫১ ভাগ। শুধু তাই নয়, এর ফলে যে গ্রিন হাউজ গ্যাসের উদগীরণ হয় তা যানবাহনের তুলনায়ও বেশি। এ সমস্যা সমাধানের জন্য মাংস খাওয়া বাদ দেয়া যেতে পারে, কিন্তু সারা পৃথিবী কি একমত হবে?
২। মশা মারতে বিলবোর্ড
জিকা ভাইরাস প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯৪৭ সালে এবং তখন থেকে ২০১৬ পর্যন্ত এটা বেশ কয়েকবার মহামারী আকারে আঘাত হেনেছে। আফ্রিকা, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ অঞ্চল পেরিয়ে এটা আঘাত হেনেছে ব্রাজিলেও। এডিস ইজিপ্টি মশা এ ভাইরাসের বাহক যার দ্বারা সংক্রমিত হলে গর্ভবতী নারীরা ছোট মাথার সন্তান জন্ম দেন অথবা অন্যান্য মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা মোকাবেলা ক্রার জন্য দুটি ব্রাজিলিয়ান বিজ্ঞাপনী সংস্থা আজব ধরণের সমাধান বের করলো। তারা একটি বিলবোর্ড বানালো যা থেকে ল্যাক্টিক এসিড ও কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হত। এগুলো ৩ কিলোমিটার দূরে থাকা মশাদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম এবং কাছে আসা মাত্রই মশারা মারা যায়। বিলবোর্ডের গায়ে ল্যাক্টিক এসিড দিলে তা মানুষের দেহে ঘামের গন্ধের মত গন্ধ তৈরি করতো। অন্যদিকে কার্বন ডাই অক্সাইড হচ্ছে আমাদের নিঃশ্বাসের একটি উপাদান।
৩। রাস্তার নীল বাতি অপরাধ ও আত্মহত্যা কমায়
রাস্তার ল্যাম্পোস্টে নীল আলোর ব্যবহারটা অদ্ভূত হতে পারে, কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে নীল আলো অপরাধ ও আত্মহত্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে। ২০০০ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে রাস্তায় নীল বাতি লাগানো হয় সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য। দেখা যায়, যে যে স্থানে নীল বাতি লাগানো হয়েছে সেখানে অপরাধের মাত্রা অনেক কমে গিয়েছে। এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ২০০৬ সালে জাপানের নারা শহরের পুলিশ একই কাজ করলো এবং চমকপ্রদ ফলাফল পেল, অপরাধ অন্য সময়ের তুলনায় কমে গিয়েছিল ৯ ভাগ! শুধু তাই নয়, আত্মহত্যার প্রবণতা কমানোতেও এই নীল বাতির ভূমিকা আছে! জাপানের Keihin Electric Express Railway Company স্টেশনে নীল বাতি লাগায় এই আশায় যেন লোক জন চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ না দেয় এবং সত্যিই আর কেউ তা করে নি। Keio University-র অধ্যাপক সুনিও সুজুকির মতে নীল আলো মানুষের মনে প্রশান্তি এনে দেয়, তবে তিনিও এটাও বলে বাতির রঙ দিয়েই যে সব সমাধান করা যাবে সেটা ভাবাও ঠিক নয়।
৪। সূর্যের তাপ থেকে বাঁচতে পৃথিবীকে সরিয়ে নেয়া যাক
পৃথিবীর জলবায়ুর উষনতা কমাতে এটাই হয়তো সবচেয়ে অদ্ভুত ধারণা, যার প্রবর্তক নাসার একদল বিজ্ঞানী। যাদের বক্তব্য ছিল, গ্রহাণূ বা ধূমকেতুর সাহায্যে আমাদের পৃথিবীর কক্ষপথ পরিবর্তন করে একে সূর্য থেকে দূরে, অপেক্ষাকৃত শীতল স্থানে নিয়ে যাওয়া। NASA’s Ames Research Center এর তিন বিজ্ঞানী Greg Laughlin, Don Korycansky এবং Fred Adams ঠিক একই রকম প্রস্তাব দেন, যেমনটা দিয়েছিলেন অন্য আরেক দল বিজ্ঞানী, যারা বলেছিলেন কিভাবে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা গ্রহাণূ বা ধূমকেতুর গতিপথ পরিবর্তন করা যাবে। প্রথম তিন বিজ্ঞানীদের মত অনুসারে, গ্রহাণূ বা ধূমকেতুকে নিয়নত্রণ করে পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং এরা এদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কিছুটা পৃথিবীকে দিবে। এ পরিকল্পনা সফল হলে, আমাদের পৃথিবীর কক্ষপথের গতি বৃদ্ধি পাবে ও পৃথিবী সূর্যের থেকে দূরে সরে যাবে। ফলে বৈশ্বিক উষনতাও কমে যাবে। কিন্তু বাস্তবে এরকম কিছু হওয়া অসম্ভব কিংবা হলেও তা পৃথিবীর জন্য অনেক ধ্বংস যজ্ঞের কারণ হতে পারে।
৫। ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়তে পোকা-মাকড় খান
আদিম কাল থেকেই মানুষ পোকা মাকড় খীয়েছে, তাই এটা নতুন কিছু নয়। শুঁয়োপোকা, ঘাস ফড়িং এবং কৃমি- প্রাচীন দুই মহান সভ্যতা গ্রিস ও রোমান-দুই জায়গাতেই ছিল সুস্বাদু খাবার। ২০১৩ সালে Food and Agriculture Organization একটি ২০০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট প্রকাশ করে যাতে বলা হয়, ভজনযোগ্য পোকা-মাকড় বিশ্ব ব্যপী ক্ষুধা, খাদ্য সংকট কমাতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া পোকা বা কীটপতং পালনে পরিবেশের ক্ষতি কম হয় এবং এরা পুষ্টির উৎস। কিন্তু ঠিক এখনোই মানুষ হয়তো এতে অভ্যস্ত হবে না।
লেখকঃ জুলকারনাইন মেহেদী, প্রধান সম্পাদক, বাংলাহাব.নেট