এই ঢাকার কাছেই এমন কিছু সুন্দর জায়গা আছে যেখানে আপনি একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন।আর এরকম একটি জায়গা হলো মহেরা জমিদার বাড়ি।টাঙ্গাইলে বেড়ানোর মতন সব জায়গার মধ্যে মহেরা জমিদার বাড়িটিই সবচেয়ে সুন্দর। ঢাকার অদূরে টাঙ্গাইলে অবস্থিত এই মহেরা জমিদার বাড়ি।
জায়গাটা পিকনিকের জন্য একটা আদর্শ স্থান। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এমনিতেও বেড়াতে যেতে পারেন। ছোট বড় সবারই ভাল লাগবে। আর বেড়াতে গেলে যেকোন সময়েই যেতে পারেন পিকনিক সিজনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।
মহেরা জমিদারবাড়ি সভ্যতা আর ঐতিহ্যের এক অমূল্য নিদর্শন।অনিন্দ্যসুন্দর কারুকার্য আর বিশাল মহলগুলো আজো দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। এক দিকে এর স্থাপত্যশৈলী আর অন্যপাশে এর রয়েছে করুন একটি ইতিহাস। এই দুইয়ে মিলে মনের মধ্যে একটি বিশেষ স্থান পায় আমাদের মনে।
১৮৯০ শতকের দিকে কালিচরন সাহা এবং আনন্দ সাহা নামের ২ভাই কলকাতায় ডাল ও লবণ ব্যাবসা করে প্রচুর টাকা আয় করে চলে আসেন মহেরা গ্রামে। এই গ্রামে তারা সুবিশাল জমির উপর তৈরি করেন এই বিশাল বাড়িটি। তখন তারা গ্রামবাসীদের উপর টাকা দাদন খাটাতেন এবং জনগনের জীবন যাত্রার উন্নতি ঘটান। তখনও জমিদার প্রথা চালু ছিল না। ব্রিটিশরা যখন জমিদার প্রথা চালু করেন তখন কালীচরণ সাহা ও আনন্দ সাহার ছেলেরা করটিয়ার ২৪ পরগনার জমিদারদের কাছে থেকে একটি অংশ বিপুল অর্থের বিনিময়ে কিনে নেয় এবং এখান থেকে শুরু হয় জমিদারীর উত্থান। এই জমিদারেরা তখন এলাকার স্কুল,রাস্তাঘাত,পানির ব্যাবস্থা সহ বিভিন্ন জনকল্যানমূলক কাজ করে জনগনের মনে ভালবাসা এবং সম্মানের স্থান লাভ করেন।বৃটিশ শাসনের শেষের দিকে জমিদার শাসন বাতিল হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর জমিদারদের অধিকাংশই ভারতে চলে যান।
১৮৯০ দশকের পূর্বে স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে জমিদার বাড়ীটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।।১ হাজার ১৭৪ শতাংশ জমির ওপর এই জমিদার বাড়ি অবস্থিত। এটি তিনটি স্থাপনা নিয়ে তৈরি। তিনটি স্থাপনার প্রতিটাতে অসাধারণ কারুকার্য করা। ৩টি সুবিশাল অট্টালিকা এবং কাছারি ঘর যেগুলো মহারাজা লজ, আনন্দ লজ, চৌধুরী লজ এবং কালীচরণ লজ নামে পরিচিত।
প্রাসাদ কমপ্লেক্সে প্রবেশ করার জন্য কালিচরন লজ আর চৌধুরী লজের সামনে রয়েছে দুটি সিংহ দরজা। এর মধ্যে চৌধুরী লজের সিংহ দরজার সমানে বিশাখা সাগরের পারে উঁচু ছয়টি স্তম্ভ সারি থাকায় ধারনা করা যায় এটাই জমিদার বাড়ির মূল প্রবেশ পথ ছিলো।
এক নং গেইট দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথমে চোখে পড়বে কালিচরন লজের সামনের চোখ ধাধানো নকশার এক তলা ভবন । ভবনের সাথে কালিচরন লজ এমন জ্যামিতিক বিন্যাসে তৈরি করা হয়েছে, দূর থেকে দেখলে একে কালিচরন লজের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে হয় ।ভবনের সামনের দিকের উন্মুক্ত কক্ষে দুই সারি অনুচ্চ স্তম্ভের উপরে নির্মিত ত্রিফয়েল আর্চের সারি এবং দেয়ালে তিনটি বড় কুলঙ্গি।। এই ভবনের সামনে বড় একটা ঘাসে ছাওয়া লন আর একপাশে গোমস্তা ভবন’ নামের এক তলা স্থাপনা।
কালিচরন লজের পশ্চিম পাশের দ্বিতল ভবনের নাম চৌধুরী লজ ।চুন সুরকি আর ইটের সমন্বয়ে তৈরি ভবনটির কার্নিশ, প্যানেলের কারুকাজ চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। এর দোতলায় উঠার সিঁড়ির রেলিং আর বারান্দায় আছে কারুকাজ করা রেলিং।এর সামনের বাগানে বাঘ, হরিণ আর বিভিন্ন পশু-পাখির মূর্তি রয়েছে। সেই আমলে জমিদাররা পশু-পাখি পুষতেন। সেই স্মৃতিতেই বুঝি মূর্তিগুলো বানানো।
চৌধুরি লজের পেছনে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গার পরে একতলা আরেকটি ভবন, যা বর্তমানে অথিতি ভবন নামে পরিচিত ।অলংকরণের দিক থেকে আনন্দ লজটিকে সবচেয়ে সুন্দর মনে হয়। প্রাসাদের সম্মুখভাগে দোতলা পর্যন্ত লম্বা ছয়টি স্তম্ভ , সামনের দিকে দুপাশে কারুকাজ করা দুটি ভ্যানিসিয় ঝুল বারান্দা , ছাদের রেলিং এবং কার্নিশে ফুলের মালা আর জ্যামিতিক অলংকরণ।দু’পাশের বারান্দার উপরে প্যাঁচানো ধাঁচের লেগো দেখে মনে হয় এটি মহেরা জমিদারির সিল!
জমিদার বাড়ির সর্ব পশ্চিমের ভবনের নাম মহারাজ লজ । এই লজ হচ্ছে সর্ববৃহৎ স্থাপনা যা জমিদার গজেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরীর। ১২টি কক্ষ নিয়ে ভবনটি স্থাপিত।এসব স্থাপনা ছাড়াও এই জমিদারি কমপ্লেক্সের পেছনের দিকে রানী মহল, কর্মচারীদের থাকার জন্য নায়েব ভবন ও কাচারি ভবন নামে দুটি একতলা ভবন আছে । জমিদার বাড়ির সমস্ত এলাকা সুউচ্চ প্রাচির দ্বারা সুরক্ষিত।
এছাড়াও রয়েছে মেহমান খানা, আত্মীয় স্বজন কর্মচারীদের জন্য থাকার বাড়ি, পুকুর,মন্দির, ফুলের বাগান আরও অনেক কিছু যার সৌন্দর্যে আপনি অবাক হতে বাধ্য। জমিদার বাড়ির সামনেই রয়েছে ‘বিশাখা সাগর’ নামে বিশাল এক দীঘি। ভবনের পিছনে রয়েছে পাসরা এবং রানী পুকুর।
মহেরা জমিদার বাড়ি যাদুঘরটি জমিদার বসবাস কালে এটি তাদের মন্দির ছিলো এখন যাদুঘর বানানো হয়েছে। এই যাদুঘরে স্বাধীনতার পদক, এবং কিছু পুরাতন অস্ত্র, ব্রিটিশ বাহিনীর পোশাক, বর্তমান র্যাব ও মেট্রপলিটন বাহিনীর পোশাক, কিছু ধাতব মুদ্রা ও একটি কলের গান সাজানো রয়েছে।এই যাদুঘরের একটি ভালো দিক হলো অন্যান্য যাদুঘরে ছবি তোলার অনুমতি না থাকলেও এখানে ছবি তোলার অনুমতি আছে।
১৯৭১ সালের ১৪ ই মে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকবাহিনী মহেরা জমিদার বাড়ীতে হামলা করে ।জমিদার কূলবধু যোগমায়া রায় চৌধুরীসহ পাঁচজন গ্রামবাসীকে চৌধুরী লজের মন্দিরের পেছনে একত্রে দাঁড় করিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে তারা।এরপরই জমিদার পরিবার দেশত্যাগ করেন।
তবে এখন আধুনিক এবং সুন্দর রঙ করায় আরো ফুটে উঠে বাড়ি ৩ টা, পেছনের দিকে সুন্দর করে বসার ব্যবস্থা রয়েছে, পার্কের মত অনেকটা, গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা,,অনায়াসে সারাটা দিন এখানে কাটাতে পারবেন।।
১৯৭২ এ জমিদার বাড়ীটি পুলিশ ট্রেনিং স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় এবং ১৯৯০ সালে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলকে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে উন্নীত করা হয়।বাড়ির আশেপাশে এবং ভেতরেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রয়েছে ।
রুম ভাড়া নিলে আন্তর্জাতিক মানের সুইমিং পুল ব্যাবহার করতে পারবেন । পিকনিকে যেতে পারেন ।
মহেরা জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের একমাত্র জমিদার বাড়ি যেখানে আপনি রাত্রি যাপন করতে পারবেন । । রাত্রি যাপনের জন্য ৩০০০,৫০০০, ৮০০০ মূল্যমানের রুম আছে । যোগাযোগ ০১৯৩৩৯৯৬৬৯৯
কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা মহাখালী বা কল্যাণপুর থেকে টাঙাইলের বাসে উঠে নাটিয়াপাড়ার পূর্বের স্টেশন পুলিশ রোডে নেমে সি এন জি তে মহেড়া জমিদার বাড়িতে যেতে পারবেন ।ঢাকার মহাখালী থেকে নিরালা বাস পাবেন যার টিকিট এর মুল্য ১৬০ টাকা। ,কল্যাণপুর থেকে এসি সকাল সন্ধ্যা / সোনিয়া বাসে ২৫০ টাকা ।
এই ছাড়াও আরও কিছু বাস পাবেন যেগুলা লোকাল। সেগুলোতে বাস ভাড়া একটু কমে পাবেন।বাস নিয়ে দুবাইল নেমে জান।সেখানে সিএনজি পাবেন ৭৫ টাকাতে চলে যান জমিদার বাড়িতে।
প্রবেশ মুল্যঃ বাড়িতে প্রবেশ এর টিকিট এর মুল্য ৫০ টাকা করে।
কি খাবেনঃ ভাত, ডাল,মুরগি এর প্যাকেজ ৮০ টাকা যেখানে ভাত এবং ডাল আপনার জন্য।