আগ্রা ভ্রমণ কাহিনী

বাবার হইলো আবার জ্বর, সারিল ঔষধে

ভাবছেন পদ্য লিখছি, নাকি সত্যজিৎ রায়ের রয়েল বেঙ্গল রহস্যের মতো কোনো গুপ্তধনের হদিস আছে এতে? মোটেই না! কবিতাটা আমার মায়ের শেখানো একটা লাইন যা মোঘল সাম্রাজ্যের রাজাদের তালিকা নির্দেশ করে(বাবর-হুমায়ুন-আকবর-জাহাঙ্গীর -শাহ জাহান-আওরঙ্গজেব)। ভোপাল থেকে আগ্রা যাওয়ার পথে সচখন্ড এক্সপ্রেসে চেপে এই লাইনটাই আমার প্রথম মাথায় এলো। তাই আগ্রা ভ্রমণের আগে চলুন ঘুরে আসা যাক মুঘল রাজাদের আমল থেকে।

মুঘল বা মোগল সাম্রাজ্য ছিল ভারত উপমহাদেশের একটি সাম্রাজ্য। উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলজুড়ে মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। মুঘল সাম্রাজ্য মূলতঃ পারস্য ও মধ্য এশিয়ার ভাষা, শিল্প ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত ছিল। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহীম লোদির বিরুদ্ধে বাবরের জয়ের মাধ্যমে মুঘল সাম্রাজ্যের সূচনা হয়। মুঘল সম্রাটরা ছিলেন মধ্য এশিয়ার তুর্কি-মঙ্গোল বংশোদ্ভূত। তারা চাগতাই খান ও তৈমুরের মাধ্যমে চেঙ্গিস খানের বংশধর।

চিত্রঃ শিল্পীর তুলিতে সম্রাট বাবর

 

সম্রাট বাবর

জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর সাধারণত বাবর, বাবুর নামেই বেশি পরিচিত (ফেব্রুয়ারি ১৪, ১৪৮৩ – ডিসেম্বর ২৬, ১৫৩০) মধ্য এশিয়ার মুসলমান সম্রাট ছিলেন। তিনি ভারত উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট। তিনি তৈমুর লঙ্গ-এর সরাসরি বংশধর ছিলেন এবং মাতার দিক থেকে চেঙ্গিস খানের বংশধর ছিলেন। তিনি মির্জা ওমর শেখ এর পুত্র, এবংতৈমুরী শাসক উলুগ বেগ এর পৌত্র ছিলেন। তিনি পানিপথের প্রথম যুদ্ধে দিল্লীর লোদি রাজবংশের সুলতান ইবরাহিম লোদিকে পরাজিত করে এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র হুমায়ুন সিংহাসনে আরোহণ করেন।

সম্রাট হুমায়ুন

blank
চিত্রঃ শিল্পীর তুলিতে সম্রাট হুমায়ূন

নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ুন (মার্চ ৬, ১৫০৮ – ফেব্রুয়ারি ২২, ১৫৫৬) মুঘল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় সম্রাট, যিনি ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দ এবং ১৫৫৫ খ্রস্টাব্দ থেকে ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দুই দফায় আধুনিক আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ভারতের উত্তরাঞ্চ রাজত্ব করেছেন।তিনি এই সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের পুত্র ছিলেন। তিনি তার পিতা বাবরের মতই তার রাজত্ব হারিয়েছিলেন, কিন্তু পারস্য সাম্রাজ্যের সহায়তায় পরিনামসরুপ আরও বড় রাজ্য পেয়েছিলেন।

হুমায়ূন (শাসনকাল : ১৫৩০-১৫৫৬) ভারতবর্ষের দ্বিতীয় মোঘল সম্রাট। প্রথম মোঘল সম্রাট জহিরউদ্দিন মোহাম্মদ বাবরের চার ছেলে ছিল_ হুমায়ূন, কামরান, হিন্দাল ও আসকরি (বাবরের মোট সন্তান ছিল ১৮; অন্যরা শৈশবে ইন্তেকাল করেন)। বাবরের প্রথম ছেলে হুমায়ুন ১৫০৮ সালের ৬ মার্চ কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার মৃত্যুর তিনদিন পর হুমায়ূন ১৫৩০ সালের ২৯ ডিসেম্বর দিল্লীতে সিংহাসনে আরোহণ করেন। মারা যান ১৫৫৬ সালে। মাঝে ১৬ বছর ছিলেন সিংহাসনচ্যুত। ১৫৩৯সালের ২৬ জুন চৌসায় এবং পরের বছর কৌনজে শেরশাহের কাছে হেরে সিংহাসন হারান। সিংহাসনচ্যুত অবস্থাতেই ১৫৪২ সালে আকবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৫৫৫ সালের ২২ জুন সেরহিন্দের যুদ্ধে জয়ের মাধ্যমে তিনি পুনরায় সিংহাসন লাভ করেন। পরের বছরই তথা ১৫৫৬ সালের ২৪ জানুয়ারি মাগরিবের নামাজ আদায় করার জন্য লাইব্রেরি থেকে দ্রুত নামতে গিয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন। এ সময় তার অধিকৃত এলাকা ছিল সীমিত। তবে তিনি যদি অংশ বিশেষ হলেও সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে না পারতেন, তবে মোঘল ইতিহাস সৃষ্টি হতো কিনা তা নিয়ে যথেস্ট সংশয় আছে। হুমায়ূন ছিলেন মার্জিত আচরণের অধিকারী। দয়ালু হিসেবেও তার সুনাম ছিল। তার চরিত্রের একমাত্র ত্রুটি ছিল তিনি ছিলেন আফিমে আসক্ত। এই আসক্তি তাকে সেনানায়ক ও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আপন মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টি করেছিল।

blank
চিত্রঃ শিল্পীর তুলিতে সম্রাট আকবর
সম্রাট আকবর

জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক।পৃথিবীর ইতিহাসে মহান শাসকদের অন্যতম মহামতি আকবর নামেও পরিচিত। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট। পিতা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আকবর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেণ। বৈরাম খানের তত্ত্বাবধানে তিনি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন। ১৫৬০ সালে বৈরাম খাঁকে সরিয়ে আকবর নিজে সকল ক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু আকবর ভারতবর্ষ ও আফগানিস্তানে তার সাম্রাজ্য বিস্তার চালিয়ে যান। ১৬০৫ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় সমস্ত উত্তর ভারত তার সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। আকবরের মৃত্যুর পর তার পুত্র সম্রাট জাহাঙ্গীর ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণ করেন।

সম্রাট জাহাঙ্গীর

নুরুদ্দীন মহম্মদ সেলিম বা জাহাঙ্গীর (আগস্ট ৩০, ১৫৬৯ – অক্টোবর ২৮, ১৬২৭) ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের চতুর্থ সম্রাট। তিনি ১৬০৫ সাল থেকে তার মৃত্যু অবধি ১৬২৭ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন।

blank
চিত্রঃ সম্রাট জাহাঙ্গীরের চিত্রকর্ম

জাহাঙ্গীর ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট আকবর-এর পুত্র। তিনি ১৫৯৯ সালে তার পিতা আকবর-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। সেই সময় আকবর দক্ষিণ ভারত-এ ব্যস্ত ছিলেন। তিনি হেরে গেলেও পরবর্তী কালে তার সৎমা রুকাইয়া সুলতান বেগম ও সেলিমা সুলতান বেগম এর সমর্থনে ১৬০৫ সালে রাজা হতে সমর্থ হন। প্রথম বছরেই তাকে তার বড় ছেলে খসরুর বিদ্রোহের মোকাবিলা করতে হয় ও তিনি তাতে সফল হন। তিনি খসরু সমর্থিত ২০০০ লোককে মৃত্যুদণ্ড দেন ও খসরুকে অন্ধ করে দেন।

বাবার মত চমৎকার প্রশাসন ছাড়াও জাহাঙ্গীর-এর শাষনামলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শক্তিশালী অর্থনীতি এবং চিত্তাকর্ষক সাংস্কৃতিক সাফল্য বিদ্যমান ছিল। এছাড়া সার্বভৌম সীমানা অগ্রসরও অব্যাহত ছিল – বঙ্গ, মেওয়ার, আহমেদনগর ও দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত তার রাজ্য বিস্তৃত ছিল। এই সাম্রাজ্য বৃদ্ধির একমাত্র বাধা আসে যখন পারস্য অঞ্চলের সাফারীদ রাজবংশের শাহেনশাহ আব্বাস কান্দাহার আক্রমণ করেন। তা ঘটে যখন ভারতে তিনি খসরুর বিদ্রহ দমন করছিলেন। তিনি রাজপুতানা রাজাদের সাথে সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনায় বসেন ও তারা সকলেই মুঘল আধিপত্য মেনে নেন ও তার বদলে তাদের মুঘল সাম্রাজ্যে উঁচু পদ দেওয়া হয়।

জাহাঙ্গীর শিল্প, বিজ্ঞান এবং, স্থাপত্য সঙ্গে মুগ্ধ হয়ে তরুণ বয়স থেকেই চিত্রকলার প্রতি ঝোঁক দেখিয়েছেন এবং তার নিজের একটি কর্মশালায় ছিল। মুঘল চিত্রকলা শিল্প, জাহাঙ্গীর এর রাজত্বের অধীনে মহান উচ্চতায় পৌঁছেছিল। তার সময় উস্তাদ মনসুর জন্তু ও পাখির ছবি একে বিখ্যাত হন। জাহাঙ্গীর এর ছিল একটি বিশাল পক্ষিশালা ও পশুশালা ছিল। জাহাঙ্গীর ইউরোপীয় এবং ফার্সি শিল্পকলাকেও ভালবাসতেন। তিনি ফার্সি রানী নুর জাহান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তার সাম্রাজ্য জুড়ে ফার্সি সংস্কৃতি প্রচার করেন। তার সময়েই শালিমার গার্ডেন তৈরি হয়।

জাহাঙ্গীর তার বাবার মত একজন কঠোর সুন্নি মুসলমান ছিলেন না। তিনি সার্বজনীন বিতর্কে বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের অংশগ্রহণ করতে দিতেন। জাহাঙ্গীর তার লোকদের কাউকে জোড়পূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বারণ করতেন। তিনি সকল প্রকার ধর্মের লোকেদের থেকে সমান খাজনা নিতেন। থমাস রো, এডওয়ার্ড টেরি-সহ অনেকেই তার এইপ্রকার আচরণের প্রশংসা করেন। থমাস রোর মতে জাহাঙ্গীর নাস্তিকতায় বিশ্বাসী ছিলেন।

অনেক ভাল গুন থাকা সত্ত্বেও, মদ্যপান ও নারী এই দুই আসক্তির জন্য জাহাঙ্গীর সমালোচিত হন। তিনি এক সময় তার স্ত্রী নুর জাহান কে অতিরিক্ত ক্ষমতা দিয়ে ফেলেন এবং নুর জাহান বিভিন্ন বিতর্কিত চক্রান্তের সাথে জড়িয়ে পরেছিলেন। ১৬২২ সালে তার পুত্র ক্ষুরাম প্রথম বিদ্রোহ করেন। কিন্তু ১৬২৬ সালে জাহাঙ্গীরের বিশাল সেনাবাহিনীর কাছে কোণঠাসা হয়ে তিনি নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু ১৬২৭ সালে তার মৃত্যুর পর ক্ষুরামই নিজেকে শাহ জাহান উপাধিতে ভূষিত করে সিংহাসন দখল করেন। জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর বিভিন্ন গল্প , সিনেমা ও সাহিত্যে তার ও আনারকলির রহস্যে ভরা সম্পর্ক স্থান পায়।

blank
চিত্রঃ সম্রাট শাহজাহানের চিত্রকর্ম

সম্রাট শাহ জাহান

শাহবুদ্দিন মুহাম্মদ শাহ জাহান (আরও ডাকা হয় শাহ জাহান, শাজাহান বলে। ( জানুয়ারি ৫, ১৫৯২ – জানুয়ারি ২২, ১৬৬৬) মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন যিনি ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারত উপমহাদেশ শাসন করেছেন। শাহ জাহান নামটি এসেছে ফার্সি ভাষা থেকে যার অর্থ “পৃথিবীর রাজা”।

তিনি সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং তাঁর হিন্দু রাজপুত স্ত্রী তাজ বিবি বিলকিস মাকানি-র সন্তান ছিলেন যিনি সিংহাসন আরোজনের পূর্ব পর্যন্ত শাহাজাদা খুররাম নামে পরিচিত ছিলেন। বাল্যকালে তিনি দাদা আকবরের প্রিয়পাত্র ছিলেন। তিনি ১৬৭২ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী হিসেবে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাকে মোগল সাম্রাজ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর শাসনামলকে স্বর্ণযুগ বলা হয় এবং তার সময়ে ভারতীয় সভ্যতা সবচেয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে। দাদা আকবরের মতো তিনিও তার সাম্রাজ্য প্রসারিত করতে আগ্রহী ছিলেন। ১৬৫৮ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে পুত্র আওরঙ্গজেব তাকে বন্দী করেন এবং বন্দী অবস্থায় ১৬৬৬ সালে আগ্রা ফোর্ট -এ তাঁর মৃত্যু হয়।তাঁর রাজত্বের সময়কালের মুঘল স্থাপত্যের স্বর্ণযুগ ছিল। শাহজাহান অনেক শোভামণ্ডিত স্থাপনা তৈরী করেন, যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত আগ্রার তাজমহল তার স্ত্রী মমতাজ মহলের সমাধি হিসাবে পরিচিত (নির্মাণ ১৬৩২-১৬৫৪ সাল)।

blank
চিত্রঃ সম্রাট আওরঙ্গজেব এর পোট্রেট

সম্রাট আওরঙ্গজেব

আওরঙ্গজেব, আল-সুলতান আল-আজম ওয়াল খাকান আল-মুকাররম আবুল মুজাফফর মুহি উদ-দিন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব বাহাদুর আলমগীর I, বাদশা গাজী, আলমগীর প্রথম নামেও পরিচিত, (নভেম্বর ৩, ১৬১৮ – মার্চ ৩, ১৭০৭) ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুঘল সম্রাজ্যের শাসক ছিলেন। তিনি সম্রাট শাহজাহানের পুত্র। মুঘল সম্রাট হিসেবে আওরঙ্গজেবের শাসনামল বিভিন্ন যুদ্ধের মাধ্যমে সাম্রাজ্যের বিস্তারের মাধ্যমে চিহ্নিত।

ফিরে আসা যাক ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় রাত ১২ টায় ট্রেনে চেপে আগ্রাতে পৌঁছলাম তখন দুপুর ১১টা।  গন্তব্যস্থল হোটেল Retreat. আমরা স্টেশন থেকেই অটো ভাড়া করে নিয়েছিলাম, আমাদের হোটেল পৌঁছে সে আমাদের ৬০০ টাকায় তাজমহল, আগ্রা ফোর্ট, ইমাত-উদ-দুল্লাহ ফোর্ট এবং মেহতাব বাগ ঘুরিয়ে আবার হোটেলে পৌঁছে দিয়ে আসবেন। যাই হোক হোটেলে পৌঁছে আমাদের আর তোর সইছিলো না, জলদি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আগ্রা দর্শনে আর এসে পৌঁছলাম বহুকাঙ্খিত দর্শনস্থান তাজমহলে। এর প্রবেশ মূল্য ৪০ টাকা  (ভারতীয়দের জন্য) আর ৮০০ টাকা(বিদেশিদের জন্য) প্রতি ব্যক্তি।

তাজমহল

তাজমহল  ভারতের আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। মুঘল সম্রাট শাহজাহান তাঁর স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম, যিনি মুমতাজ নামে পরিচিত, তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন। সৌধটি নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিস্টাব্দে যা সম্পূর্ণ হয়েছিল প্রায় ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে। সৌধটির নকশা কে করেছিলেন এ প্রশ্নে অনেক বিতর্ক থাকলেও, এ পরিষ্কার যে শিল্প-নৈপুণ্যসম্পন্ন একদল নকশাকারক ও কারিগর সৌধটি নির্মাণ করেছিলেন যারা উস্তাদ আহমেদ লাহুরীর সাথে ছিলেন, যিনি তাজমহলের মূল নকশাকারক হওয়ার প্রার্থীতায় এগিয়ে আছেন। কথায় আছে শাহ জাহান সমস্ত শিল্পীদের হাত কেটে নিয়েছিলেন এই সৌধটি তৈরী হবার পর, যাতে তারা এইরকম দ্বিতীয় স্থাপত্যের নির্মাণে অংশীদার না হতে পারে।blank

তাজমহলকে (কখনও শুধু তাজ নামে ডাকা হয়) মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয়, যার নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। যদিও সাদা মার্বেলের গোম্বুজাকৃতি রাজকীয় সমাধীটিই বেশি সমাদৃত, তাজমহল আসলে সামগ্রিকভাবে একটি জটিল অখণ্ড স্থাপত্য। এটি ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম তাজমহল। তখন একে বলা হয়েছিল “universally admired masterpiece of the world’s heritage।”

কথায় এর সৌন্দর্য্য ব্যাখ্যাতীত। আর মনে হয় বস্তুর সৌন্দর্য মানুষের চক্ষু আর মননশীলতার মিশ্রণে সৃষ্ট অলংকার বিশেষ। তাই ছোটবেলা থেকে ইতিহাসপ্রেমী হওয়ায় আমি এর সামনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। শোনা যায়  যে সম্রাট পূর্ণিমার রাতে যমুনার জলে তাজমহলের ছবি দেখে মমতাজ এর স্মৃতি রোমন্থন করতেন; আজ সেই রাজাও নেই, নেই যমুনা নদীর স্রোতস্বীনি ধারাও। অভাগিনি বিধবার রিক্ত সিঁথির মতো নদীর চড়া প্রবলভাবে বিশ্ব উষ্ণায়নের অস্তিত্ব দাবি করে। যাই হোক, তাজমহল চিরযুবতী, বহু কবির চিরসবুজ কবিতার রসদের অফুরন্ত যোগান দিয়ে যেতে পারে। এখনকারযুগে সুন্দর জিনিসের সামনে এসে পড়লে কবিতার থেকে মোবাইলের দিকে হাত চলে যে বেশি। যথারীতি প্রচুর ছবি তোলা হলো। যার কয়েকটি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি :
blank
blank

 

blankblank
blank

 

 এরপর আমরা গেলাম আগ্রা ফোর্টে। এর প্রবেশ মূল্য ৪০ টাকা প্রতি ব্যক্তি(ভারতীয়দের জন্য) আর ৪০০ টাকা(বিদেশিদের জন্য)। ।

আগ্রা ফোর্ট

তাজমহল আগ্রার সবথেকে ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে পরিচিত হলেও মুঘল সাম্রাজ্যের বহু স্পটত কীর্তি আগ্রা চারিপাশে ছড়িয়ে আছে, যার মধ্যে আগ্রা ফোর্ট অন্যতম। এটিও ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত। মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী কিছু সময়ের জন্য ফতেহপুর সিক্রি  এবং পরে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করার মাঝে কিছুসময়ের জন্য এটি মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিলো। মুঘলরা আগ্রা ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে দখল করেন আর কোহিনুরসহ বিপুল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেন। তখন প্রায় ৪০০০ শ্রমিক মাইল ৮ বছরে এর নির্মাণ কার্য সম্পন্ন করেন ১৫৭৩ সালে।

বৃহদায়তন গোলাকার বেষ্টনীগুলির দ্বারা ৯৪ একর দুর্গের দ্বিগুণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়।চার পাশে চারটি দরজা দিয়ে দুর্গটিতে প্রবেশ করা যায়। দিল্লি গেট হল রাজার প্রবেশ নিমিত্ত। দীউয়ান-ই-আম, দিওয়ান-ই-খাস এবং জাহাঙ্গীরী মহল অবশ্যই এখানে ভ্রমন করতে হবে। মুজামমান বুর্জকে বাদ দিয়ে দুর্গ  দর্শন অসম্পূর্ণ, যেখানে আওরঙ্গজেব কর্তৃক শাহজাহানকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। বুরুজটি তাজমহলের সবচেয়ে ইঙ্গিতবাহী স্থান।

blank
blankblankblank
blank

 

blank
blank
blank

 

blank

 

blank
পরবর্তী গন্তব্য এতিমদ-উদ-দুল্লাহ সমাধি। এখানে প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা(ভারতীয়দের জন্য) আর ৩০০ টাকা(বিদেশিদের জন্য)।
এতিমদ-উদ-দুল্লাহ সমাধি
 এতিমদ-উদ-দুল্লাহ সমাধি হল আগ্রার একটি মুগল সমাধি। এটি একটি জহরত বাক্স, ছোট তাজ এবং এমনকি তাজমহলের একটি খসড়া হিসাবেও উল্লেখ করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরের স্ত্রী নূর জাহান, তার পিতা মির্জা গিয়াস বেগের উদ্দেশ্যে এই সমাধিসৌধটি নির্মিত, যাকে এটিমাদ-উদ-দৌলাহ (রাষ্ট্রীয় স্তম্ভ) শিরোনাম দেওয়া হয়েছিল। এটি ১৬২২-১৬২৪ এর মধ্যে নির্মাণ করা হয়। সমাধিটি একটি বড় যোগচিন্হাকার বাগানের  মধ্যস্থলে অবস্থিত। দেওয়ালগুলি রাজস্থানের সাদা মার্বেলের, যা মূল্যবান পাথরের অলঙ্করণ, যেমন কর্নেলিয়ান, যিশ্পার, ল্যাপিস লজুলী, অনিক্স এবং পোখরাজ দ্বারা আবদ্ধ। মার্বেল উপর জটিল কাজ অবশ্যই উল্লেখযোগ্য!
blank

 

blank

 

blank

 

blank
সেদিন সবশেষে আমরা গেলাম মেহতাব বাগে। এই একটি মুঘল বাগান যা তাজমহল এর ঠিক বিপরীতে যমুনা নদীর ওপর পার্শ্বে অবস্থিত। এখানে প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা(ভারতীয়দের জন্য) আর ২০০ টাকা(বিদেশিদের জন্য)।
মেহতাব বাগ
 মেহতাব বাগ তাজমহল তথা, আগ্রার উত্তরে তৈরী করা হয়, তাজমহলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে। মুঘল সম্রাট ও সাম্রাগ্যিদের প্রিয় ভ্রমণ ও বিনোদন  স্থান ছিল মেহতাব বাগ । এটি আগ্রার সবচেয়ে সুন্দর দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে একটি। মেহতাব বাগ থেকে তাজমহল ও আগ্রা দুর্গের দুর্মূল্য দর্শন মেলে যা আরোকচিত্রকরদের কাছে স্থানটিকে আরো লোভনীয় করে তোলে। মেহতাব বাগটি মুগলদের দ্বারা নির্মিত 11 টি অনুরূপ বাগানগুলির মধ্যে একটি। সম্রাট বাবর দ্বারা নির্মিত, এটি পরে তাজমহল এর আদর্শ দৃষ্টিকোণের জন্য পরিচিত হয়ে ওঠে।  আওরঙ্গজেব এছাড়াও সম্রাট শাহ জাহানকে পাঠানো এক চিঠির মধ্যে এটিকে বন্যার পরে ধ্বংস করার ঘটনা উল্লেখ করেন। আজও মেহতাব বাগকে সূর্যাস্তের সময় তাজমহল দেখার শ্রেষ্ঠ জায়গা হিসেবে গণ্য করা হয়।
blank

 

blankblank

blank

 

  
পরদিন আমরা গেলাম আগ্রার বাকি দুই উল্লেখযোগ্য মোঘল সাম্রাজ্য ফতেহপুর সিক্রি আর আকবরের সমাধি দেখতে। এই দুটি জায়গা আগ্রা হতে যথাক্রমে ৩৭ কি. মি.(যোধপুর হাইওয়ে)  এবং ১৯ কি. মি. (সেকেন্দ্রাবাদে) দূরে অবস্থিত। ফতেহপুর সিক্রিতে আমরা একটা পরিদর্শক ভাড়া করি। ৫০০ টাকায় যিনি আমাদের সবকিছু ঘুরিয়ে দেখান।

 

ফতেহপুর সিক্রি
সম্রাট আকবর তাঁর সাম্রাজ্যের জন্য একটি বিশাল রাজধানী নির্মাণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নির্মাণ করেন। এটিও উনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট যা উত্তর প্রদেশের আগরা থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ফতেহপুর সিক্রী ১৫৭১ থেকে ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মুগল রাজধানী ছিল। আট বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই শহর প্রায় তিন মাইল দীর্ঘ এবং এক মাইল চওড়া। লাল সিক্রি বেলেপাথর দিয়ে নির্মিত, শহরের স্থাপত্য ইসলামিক এবং হিন্দু শৈলীর মিশ্রণ। শহর জুড়ে বেলেপাথরের সূক্ষ্ম কারুকার্য শোভা পায়। আকবর, যিনি উত্তরাধিকারসূত্রে পুত্রকামনা করেছিলেন, তাঁকে  সুফি মস্তিষ্ক সেলিম চিশতির পুত্রের আশ্বাস দিয়েছিলেন। ওনার নির্দেশে তিনি হিন্দু  রাজস্থান-কন্যা যোধাবাঈকে বিবাহ করেন, যার থেকে তিনি পুত্রসন্তান লাভ করেন। পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করলে, আকবর তাকে সুফী সাঁধুর সম্মানে নাম দেন ‘সেলিম ‘। সিংহাসনে আরোহণের পর সেলিম পরে জাহাঙ্গীর নামে পরিচিত হন। রাজস্থানের সামরিক জয়লাভের পর, আকবর একটি নতুন রাজধানী নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন এবং সিক্রি গ্রামকে বেছে নেন, যেখানে সুফি সাঁধু  থাকতেন। শহরটি ফতেহপুর নামকরণ করা হয়েছিল, ‘ফতেহ’ কথার অর্থ বিজয়। পরে এটি ফতেহপুর সিক্রি নামে পরিচিতি লাভ করে। শহরটি নির্মাণে ১৫ বছর সময় লাগে, স্থাপত্য ও পরিকল্পনায় আকবর প্রাচীন ফার্সী গৌরব পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। এটি ভারতীয় স্থাপত্যশিল্পের বিশেষ করে গুজরাট এবং বাংলা শৈলীগুলির মিশ্রণ, কারণ বিভিন্ন অঞ্চলের দক্ষ কারিগররা শহর নির্মাণের জন্য নিযুক্ত ছিলেন। ফতেহপুর সিক্রিতে ছিল রাজপ্রাসাদ, সাধারণ শ্রোতাদের জন্য মঞ্চ, জিনানা বা মহিলাদের জন্য আবাসন, আঙ্গিনা এবং মহল। জামা মসজিদ বা মহল্লাটি মসজিদটি প্রথম তৈরী হয় এবং তাকে কেন্দ্র করে বাকি শহরটিকে নির্মাণ করা হয়। সম্রাটগণের আবাস ছিল সাধারণ মানুষের তুলনায় উঁচু স্তরে । বুলন্দ দারওয়জা, পঞ্চমহাল, দিওয়ান-ই-আম, দিওয়ান-ই-খাস, শেখ সেলিম চিত্তির সমাধি এবং বীরবল ভবন ফতেহপুর সিক্রীর দর্শনীয় স্থান  ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যগত গুরুত্ব ছাড়াও ফতেহপুর সিক্রী  ছিল আকবরের নবরত্নের  বাসস্থান। বলা হয় জাহাঙ্গীরের সাথে নূরজাহানের অবৈধ সম্পর্কের দরুন তাদের দুজনকে এখানে জ্যান্ত কবর দেওয়া হয় কিন্তু সুচতুর আকবর মাটির নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ বানিয়ে তাদের কে আগ্রা দুর্গ ও সেখান হতে লাহোর পাচার করে দেন আর জীবনের শেষ কয়েকটা বছর ওনারা  সেখানেই ছিলেন। সুদীর্ঘ ১৪ বছর ধরে এ শহর আকবরের রাজধানী ছিল। এ অঞ্চলে জলের তীব্র ঘাটতির কারণে ১৫৮৫ সালে এটি পরিত্যক্ত হয়। আজও এই শহরটির বেশিরভাগ অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।
blank
blank
blank
blank
blank
blank
blank
 আমাদের আগ্রার শেষ গন্তব্য ছিল সম্রাট আকবরের সমাধি। এখানে প্রবেশমূল্য মাথাপিছু ১৫টাকা (ভারতীয়দের জন্য) আর ১৫০ টাকা(বিদেশিদের জন্য)।
সম্রাট আকবরের সমাধি

আগ্রার উপকন্ঠে সেকেন্দ্রাবাদে অবস্থিত মহান আকবরের সমাধিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুগল স্থাপত্যশৈলী, যা ১৬০৫-১৬১৩ সালে নির্মিত হয়েছিল। ঐতিহ্য অনুযায়ী আকবর নিজের জীবদ্দশায় এই সমাধিসৌধ নির্মাণ শুরু করেন। এই সমাধিসৌধের দক্ষিণ গেটটি হল চারটি সাদা মার্বেলের তৈরী মিনার, যা তাজমহলের মতো দেখতে। ভবনটি মূলত গভীর লাল বেলেপাথর থেকে তৈরি করা হয়েছে। সমাধিসৌধের উপর একটি শিলালিপিটি পাঠোদ্ধার করলে দাঁড়ায় : ‘এখানে স্বর্গের উদ্যানগুলি রয়েছে: চিরতরে বাস করার জন্য তাদের মধ্যে প্রবেশ করুন।’ ভাষায় এর ব্যাখ্যা বর্ণনাতীত, উদ্যানগুলি হরিণের চারণভূমি এবং দৃশ্যতঃ প্রকৃতই নয়নাভিরাম। প্রকৃতপক্ষে এর সৌন্দর্যের সাক্ষ্যদানের জন্য এই স্থানটি পরিদর্শন করতে হবে।

blank
blank
blank
blankblank
blank
blank
blank
blankএখানে উপযুক্ত ভ্রমণের সময় শীতের চারিটি মাস তথা নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি। অতঃপর আমরা মথুরার পথে রওনা হয়ে যাই , সেই গল্প নাহয় অন্য কোনোদিন আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
কিভাবে পৌঁছবেনঃ দিল্লী পর্যন্ত বিমানপথে অথবা রেল পথে এসে আগ্রা খেড়িয়া বিমানবন্দর যাবার বিমান ধরতে পারেন, এছাড়াও প্রচুর ট্রেন রয়েছে যেখানে আপনি জেনারেল টিকিট বা রেজারভেশন করে পৌঁছে যেতে পারেন আগ্রা। দিল্লী হতে আগ্রার দূরত্ব ২৩৩ কি. মি. এবং ২ থেকে ৫ ঘন্টা বড়জোর লাগতে পারে ট্রেনের উপর ভিত্তি করে।
আমার মনে হয় যেকোনো ভ্রমণ কাহিনীই তার ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক আর ভৌগোলিক বিবরণ ছাড়া অসম্পূর্ণ।তাই অবশেষে চলুন জেনে নিই আগ্রা সম্বন্ধে:

আগ্রা

‘আগ্রা’ হলো  উত্তর ভারতের উত্তর প্রদেশ অঙ্গরাজ্যের আগ্রা জেলার রাজধানী শহর। শহরটি যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। আগ্রা একটি রেলওয়ে জংশন এবং আশেপাশের কৃষি এলাকার জন্য এটি একটি বাণিজ্যিক ও শিল্পকেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। আগ্রা শহরে তুলা, খাদ্যশস্য, তামাক, লবণ ও চিনির পাইকারি বাণিজ্য হয়। এখানকার কলকারখানায় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং সুতির টেক্সটাইল, কার্পেট, লোহা ও ইস্পাত উৎপাদন সম্পন্ন হয়। আগ্রাতে প্রায় সাড়ে ১৬ লক্ষ লোকের বাস।

আগ্রাতে অবস্থিত ঐতিহাসিক সৌধগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের এক আশ্চর্য তাজমহল। আগ্রা আরও বেশ কিছু ইন্দো-সারাসেনীয় স্থাপত্যকর্মের জন্য বিখ্যাত, যাদের মধ্যে আছে মুঘল সম্রাট আকবরের জন্য নির্মিত শ্বেত মর্মরের জাহাঙ্গিরি মহল এবং ১৭শ শতকের শুরুর দিকে নির্মিত মোতি মসজিদ বা মুক্তার মসজিদ।

আগ্রার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে আছে ১৯২৭ সালে স্থাপিত আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮১ সালে স্থাপিত দয়ালবাগ এডুকেশনাল ইন্সটিটিউট এবং একটি মেডিক্যাল কলেজ।

মুঘল সম্রাট আকবর ১৫৬৬ সালে বর্তমান আগ্রা শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন অল্পদিনেই এটি সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চার একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৬৪৮ সাল পর্যন্ত এটি মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। ঐ বছর সম্রাট আওরঙ্গজেব রাজধানী দিল্লীতে সরিয়ে নেন। ১৮০৩ সালে আগ্রা ব্রিটিশদের পদানত হয়। ১৮২৫ সাল থেকে এটি একটি প্রাদেশিক রাজধানী ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে।

ইতি,
অর্ণব দে সরকার,
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ।
তথ্যসূত্র উইকিপেডিয়া এবং http://www.india.com/travel/agra/places-to-visit/tombs-tomb-akbar-great/ আর আমার নিজস্ব স্মৃতি।